স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করার আহ্বান

অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে তৎপরতা চালাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের নিুকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ। স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরে (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার) প্রতিনিধি পরিষদে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। এতে মতপ্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে।

প্রস্তাবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে এবং ভোটারদের বাধাহীন অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও বিচারিক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য নির্বাচন কমিশনে করা অনুরোধে সাড়া দেয়া এবং নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ।

৬ ডিসেম্বর ১১৫তম কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রস্তাবটি পেশ হয়। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের ছয় সদস্য টেড ইয়োহো, এলিয়ট এনজেল, ব্র্যাড শেরমান, স্টিভ শাবট, জেরাল্ড কনোলি ও ড্যারেন সোটোর উদ্যোগে এর আগে প্রস্তাবটি পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে উত্থাপন করা হয়।

বুধবার স্থানীয় সময় দুপুরের পরে প্রতিনিধি পরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসওম্যান উইলিয়াম কেটিং প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। উত্থাপনে তাকে সমর্থন দেন কংগ্রেসের পররাষ্ট্রবিষয়ক এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক কমিটির সদস্যরা।

কংগ্রেসওমেন ইলিয়ানা রোস লেতিনেন প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাসের আহ্বান জানালে হাউস কোনো বিরোধিতা ছাড়াই প্রস্তাবটি পাস করে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে- সন্ত্রাসবাদ, শান্তিরক্ষা, পরিবেশ ও জলবায়ুসহ শ্রমিক অধিকার, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিকাশ ইস্যুতে সহযোগিতা ও মূল্যবোধ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। তাই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে মানবাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র সুরক্ষা করতে এবং বর্ধিত ধর্মীয় উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে দু’দেশের স্বার্থ বিনিময়ে সম্মানজনকভাবে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আরো সক্রিয় হতে চায়।

প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছিল। আগামী ৩০ ডিসেম্বর (২০১৮) আবার বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গা নিধনকে গণহত্যা আখ্যা কংগ্রেসে বিল পাস : রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা। রোহিঙ্গা নিধনকে গণহত্যা আখ্যায়িত করে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও পাস করেছেন তারা। মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে বৃহস্পতিবার এক ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতার ভোটে পাস হয় প্রস্তাবটি। সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযান থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারেরও প্রশংসা করেছেন কংগ্রেস সদস্যরা।

গত বছরের আগস্টে চালানো ওই গণহত্যাকে এতদিন ‘জাতিগত নিধন’ (এথনিক ক্লিনজিং) বলে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। চলতি মাসের শুরুর দিকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ ও অর্থায়নে আন্তর্জাতিক আইনি পরামর্শক সংস্থা ‘পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল’ অ্যান্ড পলিসি গ্রুপে’র (পিআইএলপিজি) এক তদন্ত রিপোর্টে একই চিত্র উঠে আসে। ওই রিপোর্টে রোহিঙ্গা সংকটকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করার কয়েকদিন পরই একে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিল কংগ্রেস। শুক্রবার সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।

প্রস্তাবটি এবার অনুমোদনের জন্য কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে যাবে। সিনেটেও প্রস্তাবটি পাস হলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ আরও জোরালো হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাবিরোধী নৃশংসতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর চাপও জোরালো হল।

আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এ স্বীকৃতি খুব জরুরি। আন্তর্জাতিক আদালতের বিধান অনুযায়ী কেবল জাতিগত নিধনের কারণে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই।

গত বছরের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার অভিযোগে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। একই ধরনের অভিযানের মুখে আগের বছরগুলোতে আশ্রয় নেয় আরও কয়েক লাখ।

স্যাটেলাইট ইমেজ আর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার হত্যা-ধর্ষণ-ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত তুলে আনলেও মিয়ানমার ওই অভিযোগকে ‘অতিকথন’ কিংবা ‘গুজব’ আখ্যায়িত করে উড়িয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘ এরই মধ্যে মিয়ানমারে সংঘটিত রোহিঙ্গাবিরোধী নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার কমিশন শুরু থেকেই সোচ্চার মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে।

চীন-রাশিয়ার বিরোধিতা সত্ত্বেও নিরাপত্তা পরিষদও সহিংসতার অবসান ঘটানো এবং রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধের তাগিদ দেয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইট ওয়াচসহ বিভিন্ন সংগঠন ও রাষ্ট্র এই হত্যাযজ্ঞের কারণে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সোচ্চার।

এসএইচ-০৭/১৫/১২ (প্রবাস ডেস্ক, তথ্য সূত্র : যুগান্তর)