রাশিয়ান সরকারের আমন্ত্রণে ছয় দিনের একটি সেমিনারে যোগ দিতে গিয়েছিলাম রাশিয়া। Nwe generation program শিরনামে সেমিনারটি পরিচালনা করেন sputnik news agency আর সেখানেই দেখা হয় বাংলাদেশের এক যুবক বারেক হোসেন কায়সারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ নিয়ে। তিনি রাশিয়া সরকারের বৃত্তি নিয়ে মস্কোর গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ে পিএইচডি করছেন।
এসএসসি করেছেন বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া করোনেশন হাইস্কুল থেকে। এইচএসসি ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় হয়েছেন। রাশিয়ায় বাংলাদেশিদের নিয়ে গড়েছেন বাংলা প্রেস ক্লাব।
পড়াশোনা শেষে ঢাকায় এসে বারেক কিছু সময় সাংবাদিকতা করেছিলেন। পরে ইউনির্ভাসিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) যোগাযোগ ও গণমাধ্যম শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন।
রাশিয়ার কোন বিষয়টি মনে দাগ কেটেছে? জানতে চাইলে তিনি বললেন সেটি এরকম- পড়ুয়া ও ভদ্রজাতি হিসেবে রুশদের সুনাম রয়েছে। চেকভ, তলস্তয়, দস্তয়ভস্কি, গোর্কি, পুশকিন, তুর্গেনিভ, বরিস পেত্রারনাক, মিখাইল বাখতিন আরও কত লেখকের নাম! রাশিয়ানরা বিশ্বাস করে, সম্পদ বা নেতার জন্য নয়, লেখকদের জন্য রাশিয়াকে পৃথিবী চেনে। তাই ‘ভালো পাঠক’ বলে গর্ব করে তারা। রাশিয়ার সমাজে একটি ‘মিথ’ প্রচলিত আছে এবং সেটি হল, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পড়ুয়া রাশিয়াতে বাস করে’। বাস কিংবা পাতাল রেলে সর্বত্রই বসে অথবা দাঁড়িয়ে বই পড়ে রাশিয়ানরা। এ বিষয়টি আমাকে মুগ্ধ করেছে।
জানতে চেয়েছিলাম রাশিয়ায় এসে আপনার মধ্যে কী পরিবর্তন হয়েছে?
রাশিয়ায় এসে একটি ভালো অভ্যাস হয়েছে- এখন আর রাস্তায় ময়লা ফেলি না। চিপস-চকলেটের প্যাকেট পকেটে করে বাসায় নিয়ে আসি। নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলি। অন্যদের দেখে এটি শিখেছি। এই ইতিবাচক পরিবর্তন আমার মধ্যে হয়েছে। আর আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬৩ দেশের ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশ এবং সংস্কৃতি নিয়ে জানতে পারছি। ‘বিশ্ব নাগরিক’ হওয়ার জন্য এটা ভালো প্লাটফর্ম বলেই মনে করছি।
রাশিয়ায় বাংলাদেশিদের অবস্থানের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন- রাশিয়ায় পড়াশোনার মান খুব ভালো। বাংলাদেশি অনেকেই এখানে ব্যবসা করছেন। অনেকেই রকমারি চাকরিতে যুক্ত। কয়েকজন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। ঠাণ্ডার দেশ রাশিয়ায় প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হচ্ছে।
রাশিয়ায় বৃত্তি পেতে বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তার পরামর্শ হচ্ছে- রাশিয়ায় বৃত্তি পেতে হলে যোগাযোগ করতে হবে ধানমণ্ডির রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারের এডুকেশন বিভাগে। পড়াশোনার মাধ্যম দুটি রুশ ও ইংরেজি। প্রতি বছর জানুয়ারিতে রাশিয়ায় বৃত্তি নিয়ে পড়ার বিজ্ঞপ্তি ছাপে জাতীয় পত্রিকায়। খোঁজখবর রাখতে পারেন। বৃত্তি নিয়ে পড়লে পড়াশোনায় কোনো খরচ হয় না। উল্টো হাত খরচের জন্য যেই টাকা দেয়া হয় সেটাতে একজন ছাত্রের ভালোভাবেই চলে যায়। তবে নিজের টাকায় পড়তে হলে বছরে ৩-৪ হাজার ডলার খরচ হয়। সেখানে বৃত্তি নিয়ে বিনামূল্যে পড়া যায়।
সামনের দিনগুলোতে ‘নিউ মিডিয়া’ নিয়ে কাজ করতে চান বারেক কায়সার। পিএইচডি শেষ করে দেশে ফিরে জীবনের পুরো সময়টা ব্যয় করতে চান মানুষের কল্যাণে। মানবতার কল্যাণে কায়সার গড়ে তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সঙ্গে আছি ফাউন্ডেশন’।
এসএইচ-০৬/১৬/১২ (তাওহিদ মামুন, যুগান্তর)