ঈদ মানে রেস্টুরেন্ট কর্মীদের বোবা কান্না

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। কিন্তু সবজায়গায় এর অর্থ সমান নাও হতে পেরে। যেমন ব্রিটেনের বাংলাদেশী মালিকানাধীন রেস্তোরাঁ কর্মীদের কাছে ঈদ মানে একরাশ বিষাদ। পূর্ন একমাস রোজা রেখে পরিবারের সদস্যদের সাথে আনন্দ উদযাপন না করতে পারার গ্লানিতে রেস্টুরেন্ট কর্মীরা রান্না ঘরে কিংবা বারের পেছনে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদেন। এ কান্নায় চোখ ভেজে না শব্দও হয় না। অশ্রু ঝরে হৃদয়ে। এ যেন এক বোবা কান্না।

এ কান্না বহুগুনে বেড়ে যায় যখন মালিকরা ছুটি নিয়ে কর্মীদের সামনেই পরিবার, বন্ধু, আত্নীয়দের নিয়ে ঈদের আনন্দে মেতে উঠেন। ১২ হাজারেরও বেশী রেস্টুরেন্ট টেকওয়ের লক্ষাধিক শ্রমিকদের কারী ইন্ডাস্ট্রিতে এমন অবিচার চলে আসছে বছরের পর বছর। মালিক পক্ষের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিভিন্ন মালিক সংগঠন থাকলেও রেস্টুরেন্ট কর্মীদের পক্ষে আজও কোন সংগঠন গড়ে উঠেনি।

এখানকার বাংলাদেশী রাজনৈতিক দলগুলোর শ্রমিক সংগঠন থাকলেও রেস্টুরেন্ট কর্মীদের অধিকার প্রশ্নে তারা নির্বিকার। বিশেষ করে ব্রিটেনে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকরা চাকরী হারানোর ভয়ে নিজেদের দাবীর কথা মুখ খুলে বলতে পারেন না। আরেকটি অংশ যারা নিজ আবাসস্থলের এলাকার রেস্টুরেন্টগুলোতে কাজ করেন তারাও চাকরীকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন বছরের পর বছর।

দক্ষিণ পশ্চিম লন্ডনের একটি টেকওয়ের শেফ আবু তাহের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পূর্ণ একটি মাস রোজা রেখে যখন আনন্দের ঈদ আসে তখন মালিক আমাদের ছুটি দেন না। শুধু নামাজের সময়েই ছুটি মেলে। ছেলেমেয়ে নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারি না। রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের মধ্যে একতা নেই বলেই মালিক পক্ষ ঈদের ছুটি থেকে আমাদের বঞ্চিত করতে পারে।’

প্রবীণ কমিউনিটি নেতা কে এম আবু তাহির চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর ঈদের আগে এ নিয়ে কথা ওঠে। তবে সুরাহা হয় না। এজন্য দুই পক্ষের সংলাপ জরুরি। তবে সমস্যা হলো, ব্রিটেনে রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের কোনও সংগঠন নেই। ঐক্যবদ্ধ কোনও প্লাটফর্ম না থাকাটাই তাদের দাবি আদায়ের পক্ষে সবথেকে বড় বাধা।

ঈদের দিনটিকে ছুটি ঘোষণার দাবি প্রতিষ্ঠায় বি‌ভিন্ন সামাজিক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসলেও মালিকদের টনক নড়েনি। বিভিন্ন মা‌লিক সংগঠন এ ব্যাপারে কথা বলতেই নারাজ। সেখানকার মালিকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন, ইউকে’র সভাপতি মোস্তফা কামাল ইয়াকুব বলেন, ঈদের দিন রেস্টুরেন্ট খোলা থাক‌লেও কর্মীরা বিকাল পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রেই ছুটি ভোগ করতে পারেন।

ছুটির ব্যাপারে মালিক সংগঠনগুলোর দিক থেকে কোনও বাধ্যবাধকতা না থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বন্ধ রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। কেউ বন্ধ রাখলে স্বাগত জানা‌চ্ছি। তবে জোর করার ক্ষমতা আমাদের নেই।‘ মা‌লিক সংগঠনের নেতা ফরহাদ হোসেন টিপু বলেন, ব্রিটেনে ঈদের দিন সরকারি ছুটি নেই। দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণার জন্য কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চলমান রয়েছে। সে‌ই দাবি বাস্তবায়িত হলে এদিন রেস্টুরেন্ট মালিকরাও ছুটি দিতে বাধ্য হবেন।

এসএইচ-১১/৩১/১৯ (প্রবাস ডেস্ক)