নারীরা নিরাপদ যে দেশে

এক যুগেরও বেশি প্রাচীন সভ্যতার দেশ ইতালিতে বসবাস। কিন্তু নারীদের নিরাপত্তার অভাব আছে বলে মনে হয় না। চব্বিশ ঘণ্টায় নিরাপদ একটি জীবন নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করছে নারীরা।

তবুও কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। এমনকি ঘুটঘুটে রাতের আঁধারেও একাকী পুরো শহর চষে বেড়ালেও বলার ও উত্ত্যক্ত করার এমন কেউ নেই।

ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট কোনো ঘটনা হওয়া তো দূরের কথা একাকী একজন নারী হিসেবে কেউ কাছে গিয়ে কথা বলার মত সাহস কারো নেই। আবার একেবারে ধর্ষণের মতো ঘটনা নেই একথা পুরোপুরি অস্বীকার করাও যাবে না। তবে তুলনামূলক অনেক অনেক কম।

বছরে সম্ভবত হাতেগোনা কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা সংবাদপত্রে চোখে পড়ে। যা দূর্ঘটনা হিসেবে ধরা যেতে পারে। প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে মন মালিন্য হলে যা হয় সেটি তার নমুনাস্বরুপ।

এ দেশে ধর্ষণের মত জঘণ্য কাজ এক যুগে একবার দেখা যায় কিন্তু আমার সোনার বাংলাদেশে একদিনে তার চেয়ে বেশি ঘটনা দৃশ্যমান। সত্যিকার অর্থে যা কারো কাম্য নয়।

উন্নত দেশে এসব নিকৃষ্ট, জঘণ্য কর্ম না ঘটার কারণ অবশ্যই আছে। তা হলো আইনের সুশাসন। অপরাধীর বিচার হয় সংবিধানের নিয়মানুসারে। ফলে অপরাধ করতে সবাই ভয় পায়।

অন্যদিকে জন্মের পরপরই হোক দেশি অথবা বিদেশি প্রতিটি নাগরিকের একটি ষোল সংখ্যা বিশিষ্ট নাম্বার রয়েছে। যে নাম্বার দ্বারা একজন ব্যক্তিকে দ্রুত সনাক্ত করা সম্ভব।

এই ষোল ডিজিটের কার্ডটি সরকারিভাবে বাধ্যতামূলক। এই কার্ডের এতো গুরুত্ব যে এটি ছাড়া ব্যবসাসহ কোনো প্রকার কাজ করা সম্ভব নয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে এ কার্ডটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। অপরাধী যেই হোক না কেন শাস্তি বাধ্যতামূলক পেতেই হয়। কোনো হস্তক্ষেপ কাজে আসে না।

হোক সে ক্ষমতাসীন কোনো দলের অথবা বিরোধী দলের কেউ। আর নয়তো সরাসারি কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি। সবাইকে আইনের কাছে অসহায় থাকতে হয়।

ক্ষমতার একক হলো সংবিধান। এর বাইরে কারো কোনো আপত্তির মূল্য নেই। এমনকি পেশী শক্তি, মুখ দেখে বিচার, আত্বীয় দেখে ক্ষমা করেন না আদালত। আইন সবার জন্য সমান।

এ জন্য স্থানীয় নাগরিক ও অভিবাসীর শেষ ঠিকানা আইনের আশ্রয়। যেখানে কারো কোনো অবৈধ আবদার রাখা হয় না। ফলে আইনের প্রতি সবাই শ্রদ্ধাশীল। ৩৬৫ দিনের হিসাব টানলে দেখা যাবে অপরাধী নেই। প্রশাসন সংবিধানের বাইরে কারো কথা রাখতে বাধ্য নয়। সে হোক প্রধানমন্ত্রী কিংবা যে কোনো ক্ষমতাবান রাজনৈতিক ব্যক্তি।

তাই অপরাধ তেমন দেখা যায় না। প্রচলিত একটি ভাষা আছে আইনের হাত অনেক লম্বা। যা ইউরোপের অন্যান্য দেশের মত ইতালিতেও দেখা যায়।

এখানে মায়ের কোলে সন্তান যেমন নিরাপদ তেমনি বাসার বাইরে নারীরা নিরাপদ। কোনো মাকে মেয়ের জন্য দুঃশ্চিন্তায় থাকতে হয় না।

সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি জাতীয় সংবাদপত্রে এক নারীর শ্লীলতাহানি পর দুঃখ প্রকাশ করে দেশটির অনেকে বলেন, যে দেশে মায়ের কোলে সন্তান নিরাপদ নয়। সে দেশ আর যাই হোক স্বাধীন দেশ হতে পারে না। মুখে সবাই স্বধীন বলে আসলে কেউ স্বাধীন নয়। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা কোনো সরকার সঠিকভাবে দিতে পারেনি।

আমরা বড় অসহায় জাতি, বিশেষ করে নারীরা। ইতালিতে প্রশাসনের তৎপরতার কারণে নারীদের কাছে রাত ও দিন সমান। প্রতিটি কাজে নারীদের অবাধ বিচরণ চোখে পড়ার মতো।

একজন নারী ট্রেন, বাস, ট্রামসহ সব প্রকার যানবাহন দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কোনো উত্যক্ত করে না। স্বাধীন জীবনে অভিরাম সুখ অতিবাহিত করে যাচ্ছে।

তবে এও সত্য, ভালো কোনো কিছু একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এখানে জনগণ অনেক সচেতন। ফলে নিয়মের বাইরে কোনো কাজ কেউ করে না। তাদের সুন্দর কাজ দিয়ে সরকারকে সর্বদা সহযোগিতা করছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে। প্রশাসনকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে। ফলে নারীদের সম্ভ্রম হারানোর কোনো ভয় নেই।

নারীরা অসহায় না হলে নুসরাত জাহান রাফিকে অকালে চলে যেতে হতো না। গত বছর পরিবারের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছিল নুসরাত। কিন্তু বর্বরতার শিকার হয়ে না ফেরার দেশে চলে যেতে হয় তাকে। কি অপরাধ ছিল তার।

এতোটাই দূর্ভাগা সে ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে এ বছর ভাগ করে নিতে পারলো না। বর্বরের দল তার হাসি-আনন্দ সব কেড়ে নিল। সোনাগাজীর সেই মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি এ বছর নেই। নিজের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নৃশংস হত্যাকারীর আগুনে ঝলসে প্রাণ দিতে হল তাকে।

এ রকম নির্মম চিত্র কারই বা দেখার সাধ জাগে। আর কোনো বাবা মায়ের বেলায় যেন এরকম দৃশ্য দেখতে অপেক্ষায় থাকতে না হয়। আলোচিত ঘটনাটি যতই নৃশংস হোক না কেন প্রধানমন্ত্রী এর সঠিক বিচারের জন্য যে নির্দেশ দিয়েছেন এতে করে নুসরাতের পরিবার স্বস্তির নিঃশ্বাস পেয়েছে বলে কিছুটা অনুমান করা যায়। প্রতিটি অপরাধীকে এভাবে বিচারের আওতায় আনা হলে অপরাধ প্রবণতা কমতে থাকবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়।

এসএইচ-০৮/০৬/১৯ (প্রবাস ডেস্ক)