অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রোববার (৯ জুন) ইমিগ্রেশন বিভাগ স্থানীয় মালেয়শিয়ানদের উদ্দেশ্যে অবৈধদের ঠিকানা ও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা বার্নামা ও দি সান পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। এতে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকেও সচেতন হওয়ার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে।

এ বিবৃতিতে দেশটিতে থাকা অবৈধ ইমিগ্রান্টদের মাঝে শঙ্কা বিরাজ করছে।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সে দেশে থাকা অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে একটি সার্বিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যম তৈরি করেছে যা পূবের্র চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী এবং আগের পরিচালনা পদ্ধতির উন্নতি করার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তানশ্রি মুহিউদ্দিন ইয়াসিন বলেন, এই পরিকল্পনাটি দেশের অবৈধ ইমিগ্রান্ট মোকাবেলা বা তাদের খুজে বের করার লক্ষ্যে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর কৌশলগত সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এতে রাজ্য সরকার, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, গ্রাম কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল এবং গ্রাম উন্নয়ন ও নিরাপত্তা কমিটির ভূমিকাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

তিনি ৯ জুন এক বিবৃতিতে বলেন, এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হচ্ছে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য একটি অসহযোগিতামূলক বলয় বা পরিস্থিতি তৈরি করা যাতে এগুলো প্রয়োগকারী সংস্থা এবং নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে আরো বেশি শক্তিশালী ও কৌশলগত সহযোগিতা এবং স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বাড়িয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন চালিয়ে যেতে পারে।

মন্ত্রী আরো বলেন, এই পরিকল্পনাটি ৫ বছরের জন্য ৫ টি কৌশলে অগ্রসর হবো।

নিম্নে ৫ টি কৌশল পর্যায়ক্রমে দেয়া হলঃ-

(১) প্রয়োগকৃত অভিযান পদ্ধতি যা দেশব্যাপী অবৈধদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নকে নির্দেশ করে।

(২) আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নীতি যা নতুন আইনের খসড়া প্রণয়ন এবং অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগের নীতিগুলির সমন্বয় সম্পর্কিত বাস্তবায়ন পরিকল্পনাকে নির্দেশ করে।

(৩) প্রবেশপথ এবং বর্ডার নিয়ন্ত্রণ কৌশল যা দেশের সীমানা এবং প্রবেশপথ গুলোর নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম সম্পর্কিত বাস্তবায়ন পরিকল্পনাকে নির্দেশ করে।

(৪) বিদেশি নাগরিকদের সাথে সম্পর্কিত নীতিগুলির সমন্বয় পরিকল্পনার আওতায় ব্যবস্থাপনা কৌশল নির্দেশ করে।

(৫) মিডিয়া এবং প্রচার কৌশল যা অবৈধদের বিষয়ে মিডিয়া কভারেজ, প্রচার ও সচেতনতা প্রোগ্রাম সম্পর্কিত পরিকল্পনাকে নির্দেশ করে।

তিনি আরো বলেন, মালয়েশিয়াতে অবৈধ অভিবাসী সমস্যা একটি জাতীয় সমস্যা যা এখনো সম্পূর্ণভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হয়নি।

এটা স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে যা শুধু জাতীয় ও সীমান্ত নিরাপত্তাকেই বিঘ্নিত করেনা বরং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর ব্যপক প্রভাব ফেলছে।

রেকর্ড অনুযায়ী চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ইমিগ্রেশন বিভাগ ৭,৯৪০টি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ১ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে আটক করে যাচাই-বাছাই করে ২৩,২৯৫ জনকে আটক করা হয়, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক ৮০১১ (৩৪%), বাংলাদেশি নাগরিক ৫০২৭ (২৩%), এবং মিয়ানমার, ফিলিপিন, থাইল্যান্ড, ভারত, এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে।

একই সাথে গ্রেফতার করা হয়েছে ৬০৫ জন নিয়োগ দাতাকে। তাদের ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী অবৈধ অভিবাসী রাখার দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া একই সময়ের মধ্যে ২৬,১১৬ জনকে দেশে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ।

এসএইচ-০৬/১০/১৯ (প্রবাস ডেস্ক)