অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরতেই হচ্ছে

মালয়েশিয়ায় এখন অবৈধ শ্রমিকদের দুঃসময় চলছে। কোনোভাবেই অবৈধ অভিবাসীরা আর সে দেশে থাকতে পারবেন না।

বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া বিফোরজি কর্মসূচি চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবৈধ শ্রমিকদের নিজ নিজ দেশে ফিরতে হবে।

এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীর অরজিনাল পাসপোর্ট, যাদের পাসপোর্ট নেই,দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাস,মালয় রিংগিত ৭০০ এবং যে কোনো বিমানের কনফার্ম একটি টিকিট দেখাতে হবে।

শুরু হওয়া সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচির প্রথম দিনেই সে দেশের ইমিগ্রেশনের প্রতিটি কাউন্টারে ছিল অভিবাসীদের প্রচণ্ড ভিড়।

তবে অনেকে জানিয়েছেন,এয়ার টিকিট না থাকায় আবেদন জমা করতে পারেননি।তাদের সঙ্গে ছিল না কনফার্ম এয়ার টিকিট।

বিমানের টিকিটের বিষয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন,শুধু একবেলার টিকিটইএখন দেড় হাজার রিঙ্গিত থেকে ২ হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত।

এ দিকে অবৈধ বাংলাদেশিদের দেশে ফিরত যেতে কোনো রকম হয়রানি ছাড়া কমমূল্যে এয়ারলাইন্স টিকিট বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহ.শহীদুল ইসলাম প্রস্তাব রাখলেও কমেনি আকাশ পথের ভাড়া।

এ ছাড়া প্রতারণা থেকে সাবধান হতে এবং যে কোনো এজেন্ট বা ভেন্ডরের সঙ্গে টাকা লেনদেন না করার জন্য মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সংশ্লিষ্টরা এক নোটিশের মাধ্যমে সতর্ক করেছেন।

দূতাবাসের নোটিশে বলা হয়েছে,ট্রাভেল পারমিট এবং স্পেশাল পাস সম্পূর্ণ আলাদা। স্পেশাল পাস দেয় মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন। ট্রাভেল পারমিট (টিপি)দেয় বাংলাদেশ হাইকমিশন।

ট্রাভেল পারমিট সম্পর্কে তথ্য নিম্নে দেয়া হলো:

১. ট্রাভেল পারমিট: ক) এটি মূল পাসপোর্টের বিকল্প হিসেবে সাময়িক ব্যবস্থা।এটির মেয়াদ ৯০ দিন।বিদেশ ভ্রমণকারীকে বা অবস্থানকারীকে শুধু দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য জরুরি হিসেবে দেয়া হয়।ট্রাভেল পারমিট দেয়ার আগে পাসপোর্টের মতোই সব তথ্য যাচাই করে দেয়ার বিধান রয়েছে।প্রবাসে এটি দেয়ার একমাত্র কর্তৃপক্ষ বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন।

খ) ট্রাভেল পারমিট পাওয়ার শর্ত:যাদের বাংলাদেশের পাসপোর্ট আছে কিন্তু মেয়াদ শেষ হয়েছে,হারিয়ে গেছে বা নষ্ট হয়েছে তাদের জন্য সহজ।আবেদনের সঙ্গে সেই পুরনো বা হারিয়ে যাওয়া বা নষ্ট হওয়া পাসপোর্টের তথ্য দিতে হবে।

পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে আইন অনুযায়ী অবশ্যই পুলিশ রিপোর্ট করে আবেদনের সঙ্গে দিতে হবে। অর্থাৎ এটাই প্রমাণ যে পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে। তাহলে একদিনেই ট্রাভেল পারমিট (টিপি) পাবেন।

আর যাদের কখনই পাসপোর্ট ছিল না তাদের সময় লাগবে।কারণ তাদের নাগরিকত্ব বাংলাদেশ থেকে যাচাই করে নিতে হয়।এ জন্য সময় লাগে। নাগরিকত্ব নিশ্চিত না হয়ে টিপি দেয়া আইনত নিষেধ। ভুল বা মিথ্যা তথ্য বা কাগজ জমা দেয়ার কারণে টিপি পাবেন না।

গ) নিয়ম: নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। আবেদন ফরমের সঙ্গে ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি,পাসপোর্টের ফটোকপি (যদি থাকে), ভিসার ফটোকপি (যদি থাকে), আইকাডের ফটোকপি (যদি থাকে), মাইইজি/ইমান/বিএম-এর কাগজ অর্থাৎ যে কোনো একটি প্রমাণ হিসেবে জমা দিতে হবে। (ভিসা ও আইকার্ডের এবং ইমান/মাইইজি/বিএম কাগজে পাসপোর্ট নম্বর লেখা থাকে যা দেখে নাগরিকত্ব নিশ্চিত হওয়া যায়)।

যাদের পাসপোর্ট নেই তাদের নিজ উপজেলার ইউএনও বা জেলা প্রশাসকের পত্র সঙ্গে দিতে হবে।এটি যার পাসপোর্ট নই তার নাগরিকত্ব নিশ্চিত হওয়ার উপায়।দ্রুত করার জন্য প্রত্যাশীর পরিবার থেকে ইউএনও অফিসে আবেদন করতে হবে।

তাহলে ইউএনও যাচাই করে নাগরিকত্ব তথ্য হাইকমিশনে ই-মেইলে [email protected] প্রেরণ করবে। ফলে হাইকমিশন টিপি দিতে পারবে। মনে রাখবেন নাগরিকত্ব নিশ্চিত না হয়ে টিপি দেয়া যাবে না।

গ) ফি: ৪৪ রিংগিতের ব্যাংক ড্রাফট (হলুদ রঙের)অ্যাকাউন্ট নং ৫৬৪৪২৭১০২২৬৮ যে কোনো শাখায় কাউন্টারে জমা দিয়ে হলুদ স্লিপ নিতে হবে।এই হলুদ স্লিপ আবেদনের সঙ্গে দিতে হবে। ইলেকট্রনিক ট্রান্সফার এবং নগদ অর্থ গ্রহণ করা হয় না।

ঘ) আবেদন করার ঠিকানা: পাসপোর্ট সার্ভিস কেন্দ্র, ১৬৬ জালান বেসার,আমপাং (আমপাং এলআরটির পাশে), কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া (১৬৬ Jalan Besar Ampang, Kuala Lumpur, Malaysia)।

আবেদনের সঙ্গে দিতে হবে: ৩ কপি রঙিন ছবি, পাসপোর্ট বা ভিসার ফটোকপি,ফি জমার হলুদ ব্যাংক স্লিপ।পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে পুলিশ রিপোর্ট।

যাদের পাসপোর্ট ছিল না তাদের নাগরিকত্বের সমর্থনে ইউএনও বা জেলা প্রশাসকের পত্র।

জমা দেয়ার সময়: সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত।

বিতরণ: বিকাল ৪-৫টায় নিজে উপস্থিত হয়ে টিপির আবেদন জমা দিতে হবে এবং গ্রহণ করতে হবে।পাসপোর্টের মেয়াদ থাকলে এবং কাছে থাকলে টিপি লাগবে না।

যোগাযোগ নং: টিপি সম্পর্কিত তথ্যের জন্য ফোন +৬০১০২৪৯৭৬৫৭; +৬০১২৪৩১৩১৫০; +৬০১২২৯৪১৬১৭; +৬০১২২৯০৩২৫২.।

সূত্র জানায়,মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে থাকা বিদেশি শ্রমিকদের বৈধ করতে ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে রি-হায়ারিং প্রকল্প হাতে নেয় দেশটি।এ প্রকল্পের মাধ্যমে নিবন্ধন করে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়।

দফায় দফায় এ প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছিল। তবে অনেক অবৈধ বাংলাদেশি প্রতারিত হয়ে এ প্রকল্পের সুযোগ নিতে পারেননি।

যাদের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দিতেই রি-হায়ারিং প্রকল্প গ্রহণ করেছিল দেশটির সরকার।মালয়েশিয়ায় রি-হায়ারিং প্রকল্প প্রায় আড়াই বছর ধরে চলে।

এদিকে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক খায়রুল দাজাইমি আবু দাউদ জানিয়েছেন,আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এখান থেকে সব অবৈধ অভিবাসীকে বিফোরজি পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। যারা ওই তারিখের মধ্যে দেশে ফিরবেন না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি হুশিয়ারি দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেছেন,দেশের নিরাপত্তা রক্ষার তাগিদে কোনো পক্ষের সঙ্গে আপসে যাবে না প্রশাসন।

এসএইচ-০৫/০২/১৯ (প্রবাস ডেস্ক)