নামে ফ্রি ভিসা দামেও বেশি, ঝুঁকি বেশি

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদিআরব, কুয়েত, কাতার, দুবাই, ওমানসহ সব কয়টি দেশে ফ্রি ভিসা বেশি খোঁজে বিদেশগামী বাংলাদেশি শ্রমিকরা। এসকল দেশগুলোতে ফ্যামিলি ভিসা, ভিজিট ভিসা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ভিসা, খাদেম (বাসা) ভিসা, বাগানের ভিসা, কোম্পানির ভিসাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা দিয়ে থাকে।

ফ্রি ভিসা নামে কোন ভিসা হয় না।ফ্যামিলি ভিসা, ভিজিট ভিসা কাজ করার অনুমোদন নেই। এছাড়া বাকী যেকোনো ভিসা নিয়ে যে দেশেই যান আপনাকে সেই মালিকের নিকট কাজ করতে হবে।

ফ্রি ভিসায় আশা শ্রমিকরা কাজের জন্য বিভিন্নস্থানে সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকে, ঘুরতে থাকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। অন্য মালিক অথবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করা সেই দেশের স্থানীয় আইনে বেআইনি ও অবৈধ।

অন্যত্র কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের হাতে আটক হলে জরিমানা করতে পারে এমনকি ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে জেলখাটিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিতে পারে সে দেশের আইন শৃঙ্খলারক্ষকরই বাহিনী।

নিজের মালিকের অন্য কোথাও কাজ করা অবস্থা চেকে ধরা পড়লে আইডি কার্ডের নম্বর নিয়ে সিস্টেম ব্লক করে রাখে আকামা শেষ হলে পরবর্তীতে এই আকামা আর রিনিউ করা যায় না। আবার অনেক সময় কোম্পনি বা মালিক নোটিশ করা হয় আগামী সপ্তাহ পনের দিনের মধ্যে এই লোককে দেশে পাঠিয়ে দিতে।

আকামা লাগাতে না পারলে সেই শ্রমিক অবৈধ হয়ে যায়।শুরু হয় ফ্রি ভিসায় আসা শ্রমিকদের অনিশ্চিত জীবনের পথ চলা। ভিসার দালালরা ভিসাগুলো নেয়ার সময় মালিকে বিভিন্নভাবে লোভ দেখিয়ে নিয়ে থাকে। ভিসা দেয়ার সময় মালিকরাও বলেদেন নিরাপদে থাকতে কারণ চেকে স্থানীয় প্রশাসনের হাতে আটক হলে মালিকেও কৈফিয়ত দিতে হয়, তার লাইসেন্সরে ওপর জরিমানা সিস্টেম ব্লক করে দেয়া হয়।

মালিক নিজে বাচঁতে শ্রমিকদের দায়ভার নিতে চায় না। যেহেতু ভিসার দালালেরা আগেই তাদেরকে টাকার বিনিময়ে ভিসা বিক্রির নিয়ম শিখিয়ে দিয়েছে সেই ক্ষেত্রে কোন সময় বিপদে পড়লে বেশিরভাগ মালিক এড়িয়ে চলে তাকে দেশে পাঠিয়ে দিলে মালিক ভিসাটা পুনরায় অন্য আরেকজনের কাছে বিক্রি করতে পারবে।

যারা কাজ জানে সে দেশের ভাষাজানে তাদের অনেকেই হয়তো ঝুঁকি নিয়ে ভালই আয় করছেন রিজিকরে উপর বিশ্বাস করে।অদক্ষ অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক দালালরা তাদেরকে উদাহারণ হিসেবে দেখিয়ে উচ্চ মূল্যে ভিসা বিক্রি করে। সেও ধার দেনা, লোন, জমিজমা বন্ধক ও ভিটাবাড়ী বিক্রি করে পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ছুটে যান অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও গন্তব্যে।

দালালরে কথা ও বাস্তবতার সঙ্গে যখন মিল খুঁজে পায় না কাজের জন্য ঘুরতে হয় রাস্তায় রাস্তায় দুইদিন পেলে তিন দিন বেকার আবার অনেক সময় ৩/৬ মাস একটা কাজ করার পর সেই কাজ শেষ হয়ে গেলে পুনরায় আবার কাজের সন্ধান করতে হয়।

যাদের হয়তো পরিচিত বন্ধু বান্ধব অথবা আত্মীয় আছে তারা কোন কাজ দিয়ে পারে যদি তাদের জানা থাকে।দেখা যায় নতুন কাজ আগের কাজ মিলেনি।বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ করতে করতে কোন কাজই শেখা হয় না ভালভাবে।

কাজের জন্য পরিচিতদের কে জানালে তারা দেখছি দেখছি ফোন দিয়েছি জানাবো ইত্যাদি কথা বলে সান্ত্বনা দেয় বেশিরভাগ সময় আর যাদের পরিচিত কেউ নেই তাদের কাজ পাওয়া আরও কষ্টকর হয়ে পড়ে।

কাজ না পেলে অর্থ কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করতে এমন অনেক প্রবাসী রয়েছে।যার আশায় পথ চেয়ে থাকে পরিবার সে যদি এমন পরিস্থিতিতে পড়ে তার পরিবারের করুন অবস্থার কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঋণের সুদ, পরিবারে খরচ, চাকুরির খোঁজ, বেতন বকেয়া, আকামা সমস্যা ইত্যাদি মানসিক চাপে বাসা বাঁধে নিরব ঘাতক স্ট্রোক।

বর্তমানে বিদেশে শ্রমিকদের স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। পরিবারে জন্য সুখ কিনতে যাওয়া সেই মানুষটি যখন কাঠের কফিন বন্দী হয়ে দেশে ফিরে হতাশা আর অন্ধকার নেমে আসে সেই প্রবাসীর পরিবারে।

কুয়েত প্রবাসী ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক সেলিম ভূঁইয়া ফ্রি ভিসা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফ্রি ভিসা বলে কোন ভিসা হয় না। লোকের দেয়া নাম এটা।পুরোটা নসিবের উপর কাজ ও ভাষা জানা থাকলে তারা লাখ টাকা আয় করছে কেউ আবার কেউ নিজের থাকা খাওয়ার টাকা জোগাড় করতে পারলেও দেশে পরিবারের খরচ ঠিকমত বহন করতে পারে এমন লোকের সংখ্যা বেশি।

কুয়েত ভিসা খরচ ১ লাখ টাকার মতো। কিন্তু দালালদের হাত বদলের ফলে ভিসা মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকায়। ফ্রি ভিসা অবৈধ এবং এই ভিসায় ঝুঁকি বেশি।

সাহিত্যিক ও সংগঠক রফিকুল ইসলাম ভুলু বলেন, মালিক থাকলেও কাজ নিজেকে খোঁজে নিতে হয়। যে কারণে এসব শ্রমিকরা বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকি নিয়ে কাজের সন্ধানে অপেক্ষায় থাকে বা ঘুরতে দেখা যায়।চেকে বা অভিযানে ধরা পড়লে জেল, জরিমানা, দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি ও আতংকিত অবস্থায় থাকতে হয় সব সময়। ফ্রি ভিসা যেকোনো দেশে অবৈধ।

আগেও এইভাবে কাজের জন্য বসে থাকতো। লোক কম ছিল, কাজ ছিল বেশি কাজের মূল্য ছিল। বর্তমানে কাজ কম, লোক বেশি তাই কাজের মূল্যও কম। যাদের পরিচিত লোক আছে তাদের কেউ কেউ কাজ পেলেও আবার যার কেউ নেই সে বেকার অসহায় মানবেতর জীবন যাপন করে ফ্রি ভিসায় এসে।অবৈধ শ্রমিক ধরতে আগের তুলনায় চেক বর্তমানে অভিযান বেশি হয়।

এসএইচ-০৫/০১/১৯ (প্রবাস ডেস্ক)