মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে চলছে মারিং কাটিং

মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার নিয়ে আবারও শুরু হয়েছে মারিং কাটিং। দুদেশের সরকারের সিদ্ধান্তকে পাস কাটিয়ে একটি চক্র মরিয়া হয়ে উঠেছে বাজারটি তাদের দখলে নিতে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার স্থগিতের প্রায় এক বছর অতিবাহিত হতে চলেছে।

এখনও মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষে বিদেশী শ্রমিক নেয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না আসলেও বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন চলতি মাসেই সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনার কথাকে সামনে এনে চক্রটি আট-ঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বন্ধ শ্রমবাজার ইস্যুতে চলতি মাসের যে কোনো সময় মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন। এ সফরেই ভিসা চালুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের যে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া এবার চালু হবে, তাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য দক্ষ ও যোগ্য জনশক্তি যেন বাছাই হয়, লোক পাঠানোর খরচ যেন সাশ্রয়ী হয়, কোথাও কোনো আইন যেন লঙ্ঘন না হয়- তা নিশ্চিত করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের কার্যক্রম ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বাংলাদেশসহ সোর্স কান্ট্রিভুক্ত ১৬ দেশ থেকেই বিদেশী কর্মী আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। তবে আবার কোন প্রক্রিয়ায় বিদেশী কর্মী নেয়া শুরু হবে সে জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের নির্দেশে মানবসম্পদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (কেডিএন) মাস্টার প্ল্যান তৈরির কাজ করছে। তাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলেই স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে দেশটি শ্রমিক নেয়ার কার্যক্রম শুরু করবে বলে সে দেশে থাকা রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের একাধিক বৈঠকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহ.শহীদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্মীর অভিবাসন খরচ, বেতন, থাকা, চিকিৎসা, দেশে ফিরে যাওয়া এবং দীর্ঘ স্থায়ী কল্যাণের বিষয়ে কাজ করছে মালয়েশিয়া সরকার। তাদের নিকট শ্রমিকের প্রতারণা ও অবহেলার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা নিয়েছে। এসব নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাধা কি এবং করণীয় কি তা মালয়েশিয়া সরকার দেখছে। আমাদের পক্ষে সাজেশন দেয়া হয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর সফরকালে এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আশাকরি দ্রুতই কর্মী নিয়োগ শুরু হবে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে হাই কমিশনার বলেন, এখনো যারা আকাশপথে অথবা অবৈধভাবে থাকার জন্য মালয়েশিয়ায় আসার চিন্তা করছে, তারা যেনো ভুলেও এভাবে না আসে। এখন অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় আসা মানেই বিপজ্জনক। আর অবৈধভাবে এলে মালয়েশিয়া সরকার কোনোভাবেই তাদের কাজ করার সুযোগ দেবে না। বরং দেশের মান কমবে।’

এ দিকে চলতি বছরের ১৪ মে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী (তখন প্রতিমন্ত্রী) ইমরান আহমদ মালয়েশিয়া সফরে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তানশ্রি মুহিউদ্দিন ইয়াসিন ও মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারানের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের অগ্রগতি হিসেবে ২৯ ও ৩০ মে মালয়েশিয়ায় দুদেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের আরেকটি বৈঠক হয়। কিন্তু সেখান থেকেও শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে কোনো রূপরেখা পাওয়া যায়নি।

৭ জুলাই মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুউদ্দিন বিন আব্দুল্লাহর বাংলাদেশ সফরের বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানালেন, আগস্টেই খুলছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এরপর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদও একই কথা বলেন। আগস্ট শেষ হলেও শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। এবার অপেক্ষার চোখ সেপ্টেম্বরে।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। কর্মী প্রেরণের আগেই মেডিকেল সেন্টার দখলে নিতে বেশ কিছুদিন ধরে নানা উপায়ে চেষ্টা তদবির চলছে। সেটার পর এখন ট্রেনিং সেন্টারের নতুন ইস্যু সামনে নিয়ে এসেছে একটি গ্রুপ। এর মাধ্যমে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি দখলের চেষ্টা করছে তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বায়রার এক নেতা বলেন, ২০ বছরের বেশি সময় মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাচ্ছি, এতোদিন তো সিআইডিবি লাইন্স বা সনদ লাগেনি। এখন নতুন করে এটিকে সামনে আনা হচ্ছে। এর কারণ, একটি গ্রুপ তাদেরকে (সিআইডিবি প্রতিনিধি) একটা পদ্ধতি বানাতে চাচ্ছে। তারা বলবে কর্মী যেতে তাদের নির্ধারিত এই কয়েকটি ট্রেনিং সেন্টারের সনদপত্র লাগবে। কোনো ট্রেনিং না করিয়েই, দেখা যাবে সনদের জন্য অতিরিক্ত ১০ টাকা করে দিতে হচ্ছে কর্মীদের।

এমন হলে অভিবাসন ব্যয় বাড়বে এবং ব্যবসাও গুটি কয়েক মানুষের কাছে চলে যাবে। এর আগেও একটি শ্রমবাজারে এমন কাজ করা হয়েছিল। সিআইডিবি’র সনদ নিয়েই কি মালয়েশিয়ায় কর্মী যেতে হবে? আর এই প্রতিনিধি এনে বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টার পরিদর্শন করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে কি জানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়? মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানালেন, এ বিষয়ে কিছুই জানেনা তিনি। কিছুই জানানো হয়নি মন্ত্রীকে। মন্ত্রী বললেন, যে কোনো পদ্ধতিই করুক না কেনো, সিন্ডিকেট হতে দেবো না। সিন্ডিকেটের খারাপ দিকটা আমরা জানি। কর্মী মারার সিন্ডিকেট আর হবে না।

এসএইচ-০৫/০৫/১৯ (প্রবাস ডেস্ক)