মানবেতর জীবনযাপন করছে বাংলাদেশিরা

কাজ করছেন কিন্তু বেতন পাচ্ছে না তিন থেকে ছয় মাস যাবৎ। আবার ভিসা নেই বছরের পর বছর। অপর দিকে নিজেদের সুবিধামত স্থানে ভিসা পরিবর্তন কিংবা কাজ করার ও নেই কোন সুযোগ। এমনকি দেশে পর্যন্ত আসার সুযোগ মিলছে না ১৭ বাংলাদেশি শ্রমিকের। বলা যায় জিম্মি দশার মধ্যে রয়েছেন তারা।

নির্দিষ্ট কোম্পানিতে আবদ্ধ আর অবৈধ হওয়ায় পাওনা আদায়ে যেতে পারছেন না আইনশৃঙ্খলা কিংবা কোন সংস্থার কাছে। এত সব প্রতিকূলতার মাঝেও কোম্পানিতে কাজ করে যাচ্ছেন কিছু পাওয়ার আশায়। আর বেতন না দিয়ে, ভিসা না লাগিয়ে মালিক পক্ষ আদায় করে নিচ্ছে কাজ। এদিকে চরম হতাশা আর কষ্ট ছাড়া কিছুই জোটেনি হতভাগ্য সেই বাংলাদেশি শ্রমিকদের। দিনের পর দিন কাজ করে আশায় বুক বেঁধে অনাহারে অর্ধাহারে দিন পার করছেন।

ভুক্তভোগী ও দূতাবাসের তথ্য মতে বাহরাইনের আনিস আল কুলাওহি কন্ট্রাক্টিং কোম্পানিতে ১৭ জন বাংলাদেশি শ্রমিক বেশ কয়েক বছর যাবৎ কাজ করে আসছে। বসবাসের জন্য স্থানীয় তুবলী নামক স্থানে কোম্পানির বাসস্থান মিললেও মিলছে না বৈধতা আর ন্যায্য পারিশ্রমিক। নেই ভিসা পরিবর্তনের সুযোগও। চেষ্টা করেও ফিরতে পারছেন না নিজ দেশে। অবৈধ হওয়ার থানায় কিংবা আইন শৃংখলার কোন সংস্থার কাছ থেকে আইনি সহায়তাও নিতে পারছেন না।

এমন জিম্মি দশা থেকে মুক্তির জন্য গত ২৮ অক্টোবর ৯ বাংলাদেশি শ্রমিক বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাসে এসে তুলে ধরেন নিজেদের পরিস্থিতি। এর মধ্যে রয়েছেন কুমিল্লার মুরাদ নগরের রুহুল আমিন, বিবাড়ীয়া বাঞ্চারাম পুরের হাবিব, মাজেদুর রহমান, ফুলচান, জনি, চট্টগ্রামের দেলোয়ার, আইয়ূব, সুমন ও সিলেটের রিপন।

দূতাবাস বিষয়টি গুরুত্বসহ গ্রহণ করে রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অবঃ) কে এম মমিনুর রহমান এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য দূতাবাসের তথ্য ও জনকল্যাণ প্রতিনিধি তাজ উদ্দিন সিকান্দারকে নির্দেশ প্রদান করেন। একই দিন তাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে তারা বাহরাইনের শ্রম মন্ত্রণালয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

তারই প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় নিয়োগ কর্তাকে তলব করলে নিয়োগ কর্তা ‘শ্রমিকরা পালিয়ে গেছে’ বলে থানায় মামলা দায়ের কারেন। বিষয়টি পুলিশের কাছ থেকে জানার পর দূতাবাসের জোর তৎপরতার পর নিয়োগ কর্তার মামলা বাতিল করে পুনরায় কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

অপর দিকে খবর পেয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন সামাজিক সংগঠন বাহরাইনে বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার কমিউনিটি, ওরিসা নামের বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি ক্ট্রাক্টিং কোম্পানি ও মামুন নামের এক বাংলাদেশি। মামুন তাদেরেকে বর্তমানে স্থানীয় জিদআলীতে নিজের ভায়া নেওয়া ভবনের একটি কক্ষে থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন এবং ওয়েলফেয়ার কমিউনিটি তাদের কমপক্ষে ১৫ দিনের খাবারসহ যাবতীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

ওয়েলফেয়ার কমিউনিটির আবেদনে সাড়া দিয়ে তাদেরকে সম্পূর্ণ বৈধ করে কাজে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন বাংলাদেশি মালিকানাধীন কোম্পানি ওরিসা। ওরিসার চেয়ারম্যান আলা উদ্দিন আহম্মেদ ও ব্যাবস্থাপনা পরিচালক কামাল আহম্মেদ জানান আইনি জটিলতা শেষ হলে আমরা তাদের কাজ ও বৈধতা নিশ্চিতের প্রক্রিয়া শুরু করব।

ওয়েলফেয়ার কমিউনিটির ওমর ফারুখ জানান, অবহেলিত, নির্যাতিত ও অসহায়দের পাশে ওয়েলফেয়ারের হয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করবো। সবাইকে এমন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থায় যৌথভাবে কাজ করছেন বাংলাদেশ দূতাবাস ও ওয়েলফেয়ার কমিউনিটি।

এসএইচ-০৫/০২/১৯ (প্রবাস ডেস্ক)