দালালরা শ্রমবাজার খোলার আগেই মাঠে নেমেছে

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার আগেই দালালরা মাঠে। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রীর সাথে আলাপ আলোচনা হলেও এখনো নিশ্চিত হয়নি শ্রমবাজার উন্মুক্ত হবে কি না। কিন্তু শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়েছে বলে মিথ্যাচার করে সহজ সরল বেকার যুবকদের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতানোর ধান্দায় দালাল চক্র।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী এবং মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাথে বন্ধ শ্রমবাজার উন্মুক্তসহ ব্যায়, সিন্ডিকেট মুক্ত কিভাবে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া যায় সে ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়। কিন্তু আলোচনাকে পুঁজি করে দালাল চক্র শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়েছে মর্মে চমকপ্রদ কাজসহ আউটসোর্সিং ভিসা করে দিতে পারবে বলে মাঠে নেমে পড়েছে।

দুই দেশের মধ্যে আলোচনার বিস্তারিত নিয়ে মালয়েশিয়ার স্থানীয় গণমাধ্যমকে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারান জানান, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ বিষয়ে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

৬ নভেম্বর বুধবার রাজধানী কুয়ালালামপুরের পার্লামেন্ট ভবনে স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় এম কুলাসেগারানের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। দুই দেশের প্রতিনিধিদলের এ বৈঠকে শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

পরে আলোচনার বিষয়ে বলতে গিয়ে মালয়েশিয়ার শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম এনএসটিকে এম কুলাসেগারন জানান, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে, তবে শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্বান্ত হয়নি।জানা গেছে, ন্যূনতম অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী প্রেরণ, উভয় দেশের রিক্রটিং এজেন্সিগুলোর সম্পৃক্ততার পরিধি, মেডিকেল পরীক্ষা এবং সামাজিক ও আর্থিক সুরক্ষা ডাটা শেয়ারিং বিষয়ে আলোচনা হয়।

আলোচনায় উভয় মন্ত্রী বন্ধ শ্রমবাজার দ্রুততম সময়ে চালুর বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেন। বিশেষ করে ন্যূনতম অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী প্রেরণ এবং কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বিড়ম্বনা নিরসনের জন্য বাংলাদেশ থেকে বহির্গমনের আগে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার বিষয়ে উভয়পক্ষ একমত হোন।এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশী কর্মীদের চাহিদার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।এদিকে মালয়েশিয়ায় বন্ধ শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে একমত প্রকাশ করে ২৪ ও ২৫ নভেম্বর ঢাকায় আসছে মালয়েশিয়ার একটি প্রতিনিধিদল। রাজধানীতে জয়েন্ট ওয়ার্কিং সভায় মিলিত হবেন তারা।এদিকে মন্ত্রী ইমরান আহমদের মালয়েশিয়ায় যাওয়াকে কেন্দ্র করে সিন্ডিকেট দালালরা তৎপর হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়া অনেকে বন্ধ শ্রমবাজার চালু হওয়ার ব্যাপারে গুজব ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে মালয়েশিয়ার সরকার সিন্ডিকেট মুক্ত একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নেওয়ার ব্যপারে ঐক্যেমতে পৌঁছেছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে জানা গেছে।

কুয়ালালামপুরে একটি প্রেস কনফারেন্সে আবারও সিন্ডিকেট হওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, মাহাথির সরকার যেভাবে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেবে আমরা চেষ্টা করবো এই প্রক্রিয়ায় আগের চেয়ে স্বল্প খরচে লোক পাঠানো যায় কি না। সিন্ডিকেট হবে কি হবে না, এটা আমরা জানিনা আমাদের কিছুই করার নেই।

তিনি আরো বলেন, আমরা মাহাথির সরকারকে যদি বলি তোমরা এটা করবে না ওটা করতে হবে তখন উনারা বিরক্ত হয়ে হয়তো বলে দিতে পারেন আমরা বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেবনা অন্য দেশ থেকে নিয়ে নেবো।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে দীর্ঘদিন মালয়েশিয়া সরকার আশ্বস্ত করে আসছেন আমরা বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেব। কিন্তু অধ্যবধি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও শ্রমবাজার টিম খোলার ব্যাপারে এখনো আন্তরিক নয় বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

মালয়েশিয়ার বিদেশি শ্রমিকদের চাহিদা থাকলেও মাহাথির সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী সেদেশের বেকারত্ব হার কমিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের প্রবেশের উপরে নিষেধাজ্ঞা রেখেছে।

বিগত দিনে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার কে পুঁজি করে মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন বসবাসরত দালালরা কোম্পানীর চাহিদার তিনগুণ শ্রমিক এনে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের অরাজকতা সৃষ্টি করে।মালয়েশিয়ার সব পত্রিকাগুলোই বাংলাদেশের শ্রমবাজার ওপরে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তারপরেই নড়েচড়ে বসে নাজিব রাজাকের সরকার।

এরপর মাহাথির সরকারের ক্ষমতায় আসার পরেই বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে ভিতরে ভিতরে নিষেধাজ্ঞা চলে। বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক আনার ব্যাপারে দুর্নীতির অভিযোগে বর্তমানে মালয়েশিয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানীর উপরেও নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। যারা বিগত দিনে চাহিদার তুলনায় তিনগুণ শ্রমিক এনে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার কলুষিত করেছে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত করছে সে দেশের সরকার। বাংলাদেশের দালালদের যদি লাগাম টেনে ধরা যায় তাহলে শ্রমবাজার খোলা যতটা সহজ হবে তার থেকেই আটকে যাওয়া বেশি সহজ বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।

এদিকে মূলত অতিরিক্ত কর্মী এনে মালয়েশিয়ায় অমানবিক পরিস্থিতির ক্ষেত্র করা, মানব পাচারের রুট করা , মালয়েশিয়ার শ্রম বঞ্চনা করা এবং মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় নিম্ন মানের অবস্থা তৈরি করায় মালয়েশিয়া এখন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের নীচে অবস্থান করছে যা উন্নত দেশ ঘোষণা করার ক্ষেত্রে সবচে বড় বাঁধা।তাই মালয়েশিয়া সরকার বিদেশীকর্মী ব্যবস্থাপনায় রিক্রটিং এজেন্সির জবাবদীহীতা নিশ্চিত করতে চায়।

এসএইচ-০৬/১১/১৯ (প্রবাস ডেস্ক)