সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধের দাবি

সৌদি আরব থেকে ধর্ষণসহ নানা নির্যাতনের শিকার হবার অভিযোগ নিয়ে একের পর এক বাংলাদেশি নারী শ্রমিক দেশে ফিরে আসতে থাকার পর – সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠানো একেবারেই বন্ধ করার দাবি তুলছে কিছু সংগঠন।

সম্প্রতি সুমি আক্তার নামে একজন বাংলাদেশি নারী সৌদি আরবে তার নির্যাতিত হওয়ার বর্ণনা তুলে ধরে তাকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে এক ভিডিও প্রকাশ করেন – যা ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়।

এর পর শুক্রবারই তাকে উদ্ধার করে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার হবার অভিযোগ নিয়ে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশি নারীদের ফেরত আসার ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে।

অভিবাসন নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলো দাবি করছে, সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠানো একেবারেই বন্ধ করে দেয়া হোক। তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।

এর পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সৌদি আরবে গৃহকর্মী পাঠানো কমিয়ে আনার বিষয়ে সরকার চিন্তা করছে।

সুমি আক্তারের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে নভেম্বর মাসের শুরুতে। সেই ভিডিওতে তিনি সৌদি আরবে তার ওপর নির্যাতনের যে বিবরণ দিয়েছিলেন, তা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছিল।

তবে ঢাকায় ফেরার পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের এড়িয়ে সরকারের ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ডের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরাসরি পঞ্চগড়ে নিয়ে যাওয়া হয় সুমি আক্তারকে।

পঞ্চগড় জেলার বোদায় উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসন সুমি আক্তারকে তার বাবা-মার কাছে হস্তান্তর করে।

শুক্রবার বিকেলে নিজের বাড়িতে পৌঁছানোর পর সুমি আক্তার বলছিলেন, তিনি এখন দেশেই ঘুরে দাঁড়াতে চান।

“আমার খুব ভাল লাগছে। আমি আমার বাবা মা’র কাছে ফিরে আসতে পারছি।”

তাকে উদ্ধারের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলছিলেন, “আমার ইমো নাম্বার যেটা ছিলো, জেদ্দায় বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তা সেই নাম্বার ট্রাক করে সৌদি আরবের পুলিশ নিয়ে গিয়ে ইয়ামেন বর্ডারের কাছের সৌদি শহর নাজরানে একটি পরিবারের কাছ থেকে আমাকে উদ্ধার করেছেন।”

তিনি বলেন, প্রথমে তাকে সৌদিআরবের রিয়াদে একটি পরিবারে গৃহকর্মীর কাজ দেয়া হয়েছিল। চার মাস পর সেই পরিবার তাকে নিয়োগকারী বা কফিলের মাধ্যমে ১২ হাজার রিয়েলের বিনিময়ে নাজরান শহরে আরেকটি পরিবারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল বলে তার অভিযোগ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জেদ্দায় বাংলাদেশের মিশন থেকে সৌদি সরকারের সহযোগিতাতেই তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।

ধর্ষণ সহ নানা ধরণের নির্যাতনের অভিযোগ তুলে এবছর ৯০০জনের মতো বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মী ফেরত এসেছেন।

সেই প্রেক্ষাপটে অভিবাসন নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলো এবং নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা সৌদি আরবে নারী কর্মি পাঠানো বন্ধের দাবি তুলেছেন। জাতীয় সংসদেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী সুমাইয়া ইসলাম বলছিলেন, সৌদি আরবে ২ লাখ ৭০ হাজার নারী শ্রমিক গেছে গত চার বছরে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে তাদের প্রশ্ন রয়েছে।

তিনি আরও বলেছেন, “সৌদি আরবে বাড়িতে নারী গৃহকর্মীদের নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। এক হাজার রিয়েল বেতনের কথা বলে নিয়ে যায়। কিন্তু ৭০০ বা ৮০০ রিয়েল বেতন দেয়, যা বাংলাদেশি ১৫ হাজার টাকার সমান হবে। অনেক ক্ষেত্রে বেতনই দেয়না এবং বেতন চাইলেই নির্যাতন বেড়ে যায়।”

তিনি বলেন, হাজার হাজার গৃহকর্মীর খবর রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সক্ষমতা নেই।

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ না করার কথা বলা হচ্ছে এবং সেজন্য বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনও বলেছেন, চার বছর ৮ হাজার নারী শ্রমিক ফেরত এসেছে এবং এই সংখ্যা বেশি নয় ।

কিন্তু একই সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন, নির্যাতনের যেসব অভিযোগ আসছে, সেই প্রেক্ষাপটে গৃহকর্মী পাঠানো কমিয়ে দেয়ার বিষয়ে সরকার আলোচনা করছে।

“মহিলারা যারা ফেরত আসছেন, শোনা যাচ্ছে, তারা সেখানে নির্যাতিত হয়েছেন। আমরা এটা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন এবং যথেষ্ট সজাগ। সেই জন্য আমরা আমাদের মিশনে ২৪ ঘন্টার হট লাইন চালু করেছি।”

“আমরা নির্যাতিত মহিলা যারই খবর পাওয়া যায়, তার জন্য আমরা শেল্টার তৈরি করেছি। এমন নারীদের উদ্ধার করে সরকারি পয়সায় আমরা তাদের প্রথম ঐ শেল্টারহোমে রাখছি।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রী আরও বলেন, “সরকার এনিয়ে আলোচনা করছে যে কি করা যায়। বাসাবাড়িতে যারা কাজ নিয়ে যায়, তাদের ক্ষেত্রেই এই সমস্যাটা খুব প্রকট। সেজন্য আমরা চিন্তা ভাবনা করছি, বাসা বাড়িতে পাঠানো কমিয়ে দেয়া যায় কিনা।”

তিনি বলেছেন, তারা এখনও চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেননি। তবে এ বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করছেন এবং আলোচনায় একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে, প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সৌদিতে ২০ লাখের বেশি পুরুষ শ্রমিক আছে। নারী শ্রমিক পাঠানোর কারণে চার বছর ধরে আবার দেশটি পুরুষ শ্রমিক নিচ্ছে। এই বিষয়টিও সরকারকে বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে বলে তারা উল্লেখ করেছেন।

এসএইচ-০৬/১৬/১৯ (কাদির কল্লোল, বিবিসি)