বাংলাদেশিদের অনুভূতির আরেক নাম ‘জিরো ইফেক্ট’

সিঙ্গাপুরে অনেকগুলো ব্যান্ড দলের মধ্যে জিরো ইফেক্ট অন্যতম একটি। দলটি ইতোমধ্যে তাদের গান পরিবেশনের মাধ্যমে সঙ্গীতপ্রেমীদের মন জয় করেছেন। সঙ্গীতের প্রতি তাদের অগাধ ভালোবাসায় এ ব্যান্ডের মূল চালিকাশক্তি।

২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর এই ব্যান্ড দলটি গড়ে ওঠে। সেদিন ঘরোয়া পরিবেশে কয়েকজন সঙ্গীতপ্রেমী প্রবাসী বাংলাদেশির আড্ডায় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে গঠন করা হয় জিরো ইফেক্ট মিউজিক্যাল ব্যান্ড সিঙ্গাপুর।

একটি ব্যান্ড দল গঠন করতে চাই প্রয়োজনীয় সঙ্গীত যন্ত্রপাতি ও প্র্যাকটিস করার জায়গা। আর সবাই প্রবাসী হওয়ায় সবার পক্ষে সঙ্গীতের জন্য সরঞ্জাম ক্রয় করাও ছিল কষ্টসাধ্য। ঠিক সেই সময়ে বিটিভির গায়িকা সিঙ্গাপুর প্রবাসী শেফালী আক্তার শেফা এবং লিটনের সহযোগিতায় একটি হারমোনিয়াম, ১টি তবলা সেট এবং কিছু ফোক রিলেটেড বাদ্যযন্ত্র দিয়ে যাত্রা শুরু করে ব্যান্ড দলটি।

দলটির সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের উদ্দেশ্য ছিল সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রতিভাবান বাঙালি প্রবাসীদের নিয়ে একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম তৈরি করা যাতে করে পিঁছিয়ে থাকা প্রতিভাবান প্রবাসীরা (বিশেষ করে সাউথ ওয়েস্টে বসবাসরত) তাদের প্রতিভা প্রকাশের ক্ষেত্রে প্লাটফর্মটির ব্যবহার করতে পারে এবং বৃহদার্থে বাংলা সংস্কৃতিকে বৈশ্বিকভাবে পরিচিত করার ক্ষেত্রে দলগতভাবে ভূমিকা পালন করা।

এরই ধারাবাহিকতায় লিটন ভাইয়ের মেট্রো মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মেটাল ওয়ার্কসপ সাপ্তাহিক অনুশীলন চলতে থাকে। দ্রুতই সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যান্ডের বাদ্যযন্ত্র এবং সাউন্ড সিস্টেমের ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়।

যুক্ত করা হয় ট্রান্সপোর্টেশন সুবিধা। বর্তমানে ব্যান্ড দলটি সিঙ্গাপুরের বাঙালি এবং বহুজাতিক বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন যেমন SBS, DMEABS, SAMA SAMA, BSSS, Migrant society এর অনুষ্ঠানে পারফরম্যান্সের পাশাপাশি বিভিন্ন ওয়ার্কার ডরমিটরি এবং বেশকিছু রিক্রিয়েশন সেন্টারে নিয়মিত পারফর্ম করে যাচ্ছে।

ভালো পারফর্ম্যান্সের কারণে পেঞ্জুরু রিক্রিয়েশন সেন্টার এবং তুয়াস রিক্রিয়েশন সেন্টারে প্র্যাকটিস প্যাডের ব্যবস্থা করে দিয়েছে সেখানকার JTC ম্যানেজমেন্ট। জিরো ইফেক্ট মিউজিক্যাল ব্যান্ডের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ব্যান্ডের অপারেশনাল ম্যানেজার স্বপন খান বলেন, শুরুটা খুব সাদামাটা হলেও লক্ষ্যটা ছিল বিস্তর। আর বর্তমানে দলটি সেই বিস্তর লক্ষ্যের দিকেই যাচ্ছে। বাংলা সংস্কৃতিকে বৈশ্বিকভাবে পরিচিত করার পাশাপাশি সংস্কৃতির বিনিময়টাও খুব জরুরি আর এরই প্রেক্ষিতে বর্তমানে ব্যান্ডে কিছু কৌশলগত পরিবর্তন আনা হয়েছে।

তারা বলেন, বাংলা গানের পাশাপাশি আমরা খুব ছোট পরিসরে ইংলিশ, ফিলিপিনো, তামিল এবং হিন্দি গানেরও চর্চা করছি বিভিন্ন ভাষাভাষী শ্রোতাদের চাহিদা অনুযায়ী। যাতে করে বিভিন্ন ভাষাভাষীর কমিউনিটিকে আমরা আমাদের মুল ধারাতে যুক্ত করতে পারি।

বর্তমানে ব্যান্ডে বাঙালি সদস্যদের পাশাপাশি বেশকিছু বিদেশি নিয়মিত সদস্য রয়েছে। যাদের মধ্যে ১ জন সিঙ্গাপুরিয়ান, ৩ জন ফিলিপিনো, ১ জন ইন্দোনেশিয়ান। দিন শেষে শত ক্লান্তি ভুলে এদেশে বসবাসরত সকল শ্রমজীবীদের যদি ন্যূনতম বিনোদিত করতে পারি সেটা আমাদের অর্জন।

জিরো ইফেক্ট মিউজিক্যাল ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা লিটন বলেন, সিঙ্গাপুরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গীতের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা দেখে নিজের ভেতর এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করে। তাদের জন্য কিছু একটা করার ইচ্ছে জাগে মনে। আর সেই ভালোলাগা ও ইচ্ছের কারণেই তাদের জন্য একটি প্লাটফর্ম তৈরি করি। এখন তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দলগতভাবে বাংলা গান পরিবেশন করে যা দেখে আমার ভেতর ভালোলাগা কাজ করে।

জিরো ইফেক্ট মিউজিক্যাল ব্যান্ডের বর্তমান লাইনআপ, ভোকালিস্ট: আনোয়ার হোসেন, শাহ আলম সাহেদ, স্বপন, সাদ্দাম, রনি, ওয়েক্সি। গিটারিস্ট: আদিল (লিড), রুহুল, ইভান, লরনা (বেজ)। ড্রাম: ফিংস, ইভান। কি-বোর্ডে এবং বাঁশি : মোয়াজ্জেম। কাজন: স্বপন। দোতারা: শাহ আলম। উকুলিলি: আল আমিন। সাউন্ড মিডিয়া এবং মেটারিয়ালস : স্বপন, আইরিন। ইভেন্ট ম্যানেজার : আনোয়ার হোসেন। সার্বিক সহযোগিতায়: মেট্রো মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং।

এসএইচ-০৫/১৪/২০ (প্রবাস ডেস্ক)