কিচেনে কাজ করা রাজুব ভৌমিক তিন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী

নিউইয়র্কে ‘বিস্ময়কর’ মেধার অধিকারী এক বাংলাদেশির নাম রাজুব ভৌমিক। যিনি প্রবাস জীবন শুরু করেছিলেন ম্যাকডোনাল্ডের কিচেনে কাজ করার মধ্য দিয়ে। কিন্তু ১৫ বছরের মাথায় তার জীবনের খাতায় যোগ হয়েছে তিনটি ডক্টরেট ডিগ্রি।

চাকরিও করছেন নাম করা প্রতিষ্ঠান এনওআইপিডিতে। তাও আবার কাউন্টার টেরোরিজম অফিসার হিসেবে। পড়াচ্ছেন নিউইয়র্কের দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়েও। গণমাধ্যমের বিষয়ে তার লেখা বই পড়ানো হচ্ছে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে। এ পর্যন্ত তিনি লিখেছেন ২৫টির মতো ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় বই।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত এবারের একুশে বইমেলায় রাজুব ভৌমিকের বই ‘আয়না সনেট’ বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। এ বইটি বাংলা সাহিত্যে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।

কারণ আয়না সনেটের প্রতিটি কবিতার লাইনের শেষের দিক থেকে পড়ে শুরুর দিকে আসলে একই অর্থ দাঁড়াবে, যে অর্থ শুরুর থেকে পড়ার সময় ছিল। এছাড়া রাজুব ভৌমিকের রয়েছে অন্তত ৬০০ ইংরেজি সনেট। জীবনের ঝুড়িতে যার এতো এতো সফলতা তিনি কিন্তু এখনো ছাত্র। তিনি আরও একটি ডক্টরেট করছেন এবং প্রতিদিন দুই হাজার শব্দ লেখেন।

বিস্ময়কর এ বাংলাদেশির মতে, দেশে থাকলে হয়তো তার পক্ষে এতদূর যাওয়া সম্ভব হতো না। কারণ শিক্ষা বা শিক্ষাগত প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আমেরিকার চেয়ে অন্তত ৫০ বছর পিছিয়ে আছে।

তাই রাজুব ভৌমিক বলেন, ‘শত ব্যস্ততার মাঝেও বাংলা নিয়ে ভাবি, বাংলায় লিখি আর সবাইকে বলি নিউইয়র্কে থাকি, নিউইয়র্কে বাঁচি।’

রাজুব ভৌমিক ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসনের খাতায় নাম লেখান। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের সরকারি মুজিব কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন তিনি। প্রথমে ছিলেন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াতে। সেখানে কাজ শুরু করেন ম্যাকডোনাল্ডে। কিচেনে কাজ করা, মব দেয়াই ছিল রাজুব ভৌমিকের অন্যতম কাজ। ফাঁকে তিনি সাবওয়ে এবং একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। কাজের তার প্রবল ইচ্ছা ছিল আমেরিকায় পড়াশোনা করার। সেটি তিনি করেছেনও।

ভর্তি হন শেপার্ড ইউনিভার্সিটিতে। পড়াশোনার খরচ যোগার করতে গিয়ে রাজুব ভৌমিককে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। রাতে ম্যাককডোনাল্ডে কাজ থাকলে দিনের বেলায় কাজ করেন সাবওয়েতে আর এখান থেকে সময় বের করে স্কুলে পড়াতেন। কিন্তু এত কিছুর পরও যে ম্যাকডোনাল্ডে কিচেনে কাজ শুরু করেছিলেন সে স্টোরের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন অনেক দিন। ২০১২ সালে পেয়ে যান এনওআইপিডির অফিসারের চাকরিটাও। চাকরি পাওয়ার পর রাজুব ভৌমিকের কিছুটা অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আসলে তিনি বেশি কিছু বিষয়ে ডক্টরেট করার সিদ্ধান্ত নেন। সেটিতেও তিনি সফল হয়েছেন।

এ পর্যন্ত তিনটি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। একটি সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড সাইকোলজিকাল বিষয়ে, দ্বিতীয়টি ওয়েলডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফরেনসিক ও সাইকলোজিতে এবং তৃতীয় ডক্টরেট ডিগ্রিটি সম্পন্ন করেন সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস অ্যাডমিনেস্টেশনের ওপর। শিক্ষা এবং নেতৃত্বের ওপর চতুর্থ ডক্টরেট ডিগ্রিটি করছেন আমেরিকান কলেজ অ্যান্ড এডুকেশনে।

প্রসঙ্গত, কবি ও লেখক, প্রফেসর ড. রাজুব ভৌমিকের জন্ম নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার শ্রীনদ্দি গ্রামে। ওটার হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষাজীবনের যাত্রা শুরু। যুক্তরাষ্ট্রে রাজুব ভৌমিক একটি স্নাতক ডিগ্রি, চারটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং তিনটি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

এসএইচ-০৫/১৮/২০ (প্রবাস ডেস্ক)