রোম সিটি নির্বাচনে লড়ছেন ৯ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী

ইতালির রাজধানী রোমের সিটি নির্বাচনের রোববার প্রথম দিনে ভোট গ্রহণ চলবে সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় দিনে ৪ অক্টোবর ভোট গ্রহণ চলবে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত।

এবারের সিটি নির্বাচনে কমপক্ষে ৯ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রোমে ৭ জন, মিলানোয় ১ জন ও নাপলিতে ১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীরা হলেন, রোম সিটি কাউন্সিলর ও ১নং ওয়ার্ড প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কেএম লোকমান হোসেন, রোম সিটি কাউন্সিলর ও ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী জুমানা মাহমুদ, ৫ ও ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী লায়লা শাহ, ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মো. শহীদুল্লাহ, ১ ও ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আব্দুল ওয়াদুদ, ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী পরিতম সাহা, ফ্রাসকাতি কাউন্সিলর প্রার্থী পাপিয়া আক্তার ও মিলানো ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী বিবাস চন্দ্রকর।

১৯৯৩ সালে ইতালির স্থানীয় নির্বাচনে বাংলাদেশিদের অভিষেক হলেও এ বছরই প্রথম এত বেশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী একসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতালির বাংলাদেশি কম্যুনিটিতে গত কয়েকসপ্তাহ ধরে চলছে নির্বাচনী উৎসব।

ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান বলেন, ‘আমি আনন্দিত যে, রোম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নারীসহ বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি-ইতালিয়ান অংশগ্রহণ করছেন। মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত ইতালিয়ানরা অধিকতর অংশগ্রহণ করলে স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে তাদের গুরুত্ব ও প্রভাব বাড়বে।’

শামীম আহসান বলেন, ‘আমি আশা করব একদিন তারা ইতালির পার্লামেন্ট নির্বাচনেও প্রার্থী হবেন। বিজয়ী হবেন এবং নীতি-নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। যা পরিণামে বাংলাদেশের এবং প্রবাসীদের স্বার্থের পক্ষেই যাবে।’

সব প্রার্থীর সাফল্য কামনা করেন তিনি।

রোম সিটি কাউন্সিলর প্রার্থী ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি কেএম লোকমান হোসেন বলেন, ‘প্রবাসীরা দীর্ঘদিন বিদেশে থেকে দেশের রাজনীতি চর্চা করছে। এই রাজনীতি করতে গিয়ে মারামারিও করছে, কিন্তু ফলাফল শূন্য। নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি, শত্রু তৈরি করা ছাড়া অন্য কোনো অর্জন নেই।’

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রবাসীদের নির্দেশ দিয়েছেন।’

লোকমান হোসেন বলেন, ‘ইতালিয় নাগরিকত্ব নিয়ে বহু প্রবাসী লন্ডনে চলে গেছেন। যে কারণে আমাদের কম্যুনিটির রিজার্ভ ভোট কমে গেছে, নয়তো বাংলাদেশি সব প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত ছিল।’

প্রায় ৪০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশির শহর রোম সিটির আরেকজন কাউন্সিলর প্রার্থী জুমানা মাহমুদ জানান, তার দল নির্বাচিত হলে রোমের ওয়ার্ডগুলোর ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে, যাতে ছোট ছোট কাজের জন্য ওয়ার্ডগুলোকে সিটি করপোরেশনে যেতে না হয়। বিশেষ করে নিত্যদিনের আবর্জনা নিষ্কাশনের জন্য তারা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন, যেনো আবর্জনা রিসাইকেল করে সার ও গ্যাস উৎপাদন করা যায়।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন রোমের সাবেক সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী বাচ্চু বলেন, ‘কোনো দেশের রাজধানীর সিটি নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় রাজনীতিতে পড়ে। ইতালিও এ দিক থেকে ব্যতিক্রম নয়। তবে এবারের নির্বাচনে একক ভাবে কোনো দল বা মেয়র প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারবে বলে মনে হয় না। কারণ মেয়র নির্বাচিত হতে হলে ৫১ শতাংশ ভোট পেতে হয়। যা কোনো দল বা প্রার্থী একক ভাবে পাওয়ার অবস্থানে নেই।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যারা নির্বাচন করছেন তারা যদি ভোটে দাঁড়ানোর আগে কম্যুনিটির সঙ্গে বসতেন, পরামর্শ করতেন তবে আরো বেশি প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ তৈরি হত। সবাই মিলে চেষ্টা করলে স্থানীয় ভোটের হিসাব বদলে দেয়া যেত।’

ইতালির সরকারি দল পিডির ব্রেশা শাখার নেতা কাওসার জামান বলেন, ‘স্থানীয় রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। কম্যুনিটির নেতৃত্বস্থানীয়দের উচিত বেশি বেশি স্থানীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা এবং যারা ভোটে দাঁড়িয়েছেন তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা।’

ইতালির নির্বাচনী আইন অনুযায়ী নির্বাচিত হতে হলে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হয়। যদি কোনো প্রার্থী বা দল একক ভাবে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পায় তবে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রথম এবং দ্বিতীয় প্রার্থীর মধ্যে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৩ ও ৪ তারিখের নির্বাচনে যদি কোনো প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার মতো ভোট না পান তবে আগামী ১৭ ও ১৮ অক্টোবর ফের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ইতালিয় সংবাদ মাধ্যমের জরিপ বলছে- একক ভাবে জর্জা মেলোনির ফ্রাতেল্লি দি ইতালিয়া ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ, মাত্তেয়ো সালভিনির লেগা নর্দ ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, সিলভিও বেরলুসকোনির ফরসা ইতালিয়া ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, কোয়ালিশনে পিডি ২১ দশমিক ৯ শতাংশ ও মুভিমেন্তি চিংকুয়ে স্তেল্লে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেতে পারে।

রোমের নির্বাচনে এ বছর ২২ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সরকারি দল পিডি, ফরসা ইতালিয়া, লেগা নর্দ, পারতিতো কমুনিস্তা, ফ্রাতেল্লি দি ইতালিয়া, মুভিমেন্টি চিংকুয়ে স্তেল্লেসহ প্রধান সব দলেরই প্রার্থী আছে।

২০১৬ সালের নির্বাচনের বিজয়ী রোমের বর্তমান মেয়র ভিরজিনিয়া রাজ্জির জনপ্রিয়তায় এবার ভাটা পড়েছে। কারণ গত ৫ বছরে রোমের গণপরিবহন ব্যবস্থা এবং আবর্জনা নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। নগরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

রোমের সিটি নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের অভিষেক হয় ১৯৯৩ সালে। সে সময়ে লুৎফর রহমান নামের একজন ভেরদি পার্টি থেকে নির্বাচন করেছিলেন। এর পর ভেনিস পালেরমোসহ আরো কয়েকটির শহরের স্থানীয় নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে গত বছর ভেনিসের সিটি নির্বাচনে একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন।

এসএইচ-০৫/০৩/২১ (প্রবাস ডেস্ক)