রাত ৩:৩২
শুক্রবার
১৯ শে এপ্রিল ২০২৪ ইংরেজি
৫ ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১০ ই শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী
spot_img

ইউক্রেনে প্রথম পর্বের রুশ অভিযান সমাপ্ত

রাশিয়ার সেনাবাহিনীর এক নম্বর উপ প্রধান কর্নেল জেনারেল সের্গেই রুদস্কয় বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রথম পর্বের সামরিক পরিকল্পনা শেষ হয়েছে। এখন তাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হবে পূর্ব ইউক্রেন।

সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত এটাই জনসম্মুখে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রুশ সেনাবাহিনীর খোলা মন্তব্য।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন সেনাবাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে বড় শহরগুলোতে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর অগ্রযাত্রা থেমে গেছে। রুশ বিমানবাহিনী ইউক্রেনের আকাশে প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়নি। যার ফলে তারা সামরিক কৌশলে পরিবর্তন এনেছে।

যদিও রুশ সেনাবাহিনীর কর্নেল সের্গেই রুদস্কয় এর ভিন্ন ব্যাখা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের সামরিক অবকাঠামো, সমরাস্ত্র, সশস্ত্র বাহিনী যাতে লড়াইয়ের ক্ষমতা হারায়, দোনবাস এলাকায় শক্তি বৃদ্ধি করতে না পারে, তার জন্যই তাদের বিশাল সামরিক বহর ছিল। দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চল সম্পূর্ণ স্বাধীন না করা পর্যন্ত এই অবস্থা চলমান থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ইউক্রেনে হামলা শুরুর এক মাস পরেও কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জনে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর ব্যর্থ ভূমিকা পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকদের অবাক করেছে। তাদের অনেকেই একে ‘হতাশাজনক’ বলছেন।

বিশ্লেকরা বলছেন, যুদ্ধের শুরুর দিকে বিশাল রুশ বাহিনী ইউক্রেনের সক্ষমতাকে উপেক্ষা করেছে। নিজেদের বড় করে দেখেছে। রুশ সমর বিশেষজ্ঞ, এমনকি অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষকের ধারণা ছিল, হামলা শুরুর কয়েক দিনের মধ্যেই ইউক্রেন দখল করে নিতে পারবে রাশিয়া। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধে সড়কপথ ব্যবহার করায় সেনা ও রসদ সরবরাহে রুশ বাহিনীর অনেক সময় লেগেছে। অনেক স্থানে ধীরগতির রুশ সেনাবহর ইউক্রেনের সরকারি সেনাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। কাদায় আটকে থাকা ও ধ্বংসপ্রাপ্ত রুশ সামরিক বাহনের ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের একজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বিবিসিকে বলেন, বিগত বছরগুলোয় রাশিয়া তার সামরিক ব্যয়ের বেশির ভাগ পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন, উন্নয়ন ও পরীক্ষায় খরচ করেছে। হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়ন ঘটিয়েছে তারা। বিশ্বের সর্বাধুনিক ট্যাংক টি–১৪ আরমাতা তৈরি করেছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধে এসবের ব্যবহার করা হয়নি। বাস্তবে ব্যবহৃত হচ্ছে পুরোনো টি–৭২ ট্যাংক ও রকেট লঞ্চার।

এসএইচ-০৯/২৬/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)

দক্ষিণ আফ্রিকায় টাইগারদের স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন

একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা দেশ-বিদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দেশকে এনে দিচ্ছে একের পর এক বিজয়। তবে ৫১ বছর আগে এ দেশ পাকিস্তানের দাসত্ব থেকে মুক্তির চিন্তা না করলে আজ টাইগাররা লাল সবুজের হয়ে গর্জন তুলতে পারত না। তাই দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকলেও জাতীয় বীরদের স্মরণ করে জাতীয় পতাকা হাতে, জাতীয় সংগীত গেয়ে সে ৯ হাজার কিলোমিটার দূরের দেশ থেকেও স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন করেছে টাইগাররা।

শনিবার চ্যাটসওর্থ ক্রিকেট ক্লাবে ট্রেইনিং সেশনে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন করেছে জাতীয় সংগীত গেয়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টাইগারদের সে উদ্‌যাপনের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। যেখানে দেখা যায় ক্রিকেটাররা ছাড়াও কোচ ও নির্বাচকরাও তাদের সঙ্গে পতাকা হাতে অংশ নেয়।

এদিকে বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক পতাকা হাতে ক্রিকেটার ও কোচিং প্যানেলের একটি ছবি তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে ক্যাপশনে জাতীয় সংগীতের দুটি লাইন লিখে দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন।

এদিকে আগামী ৩১ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে ডারবানে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে পোর্ট এলিজাবেথে আগামী ৮ এপ্রিল প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মাঠে নামবে মুমিনুল হকরা। তার আগে অনুশীলনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে টাইগাররা। চলতি বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয় টাইগারদের বিদেশের মাটিতে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। তাছাড়া প্রোটিয়াদের মাটিতে প্রথমবার ওয়ানডে ম্যাচ ও সিরিজ জয়, টেস্টেও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী করে তুলেছে।

এবারের সফরের আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কোনো জয় ছিল না বাংলাদেশের। ওয়ানডে সিরিজে সেই খরা কাটিয়ে টাইগাররা জিতে নিয়েছে সিরিজও। বাংলাদেশ দলের প্রধান নির্বাচক ও সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর বিশ্বাস, ওয়ানডের পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্টেও জয়ের দেখা পাবে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, ‘ওয়ানডেতে এটা বাংলাদেশের অন্যতম বড় সিরিজ জয়। নিউজিল্যান্ডে টেস্ট ম্যাচ জেতা আরও বিরাট ব্যাপার। আমরা বিদেশের মাটিতে অনেক সংগ্রাম করছিলাম। নিউজিল্যান্ড সফর থেকে বিদেশের মাটিতে সাহস নিয়ে খেলা শুরু হয়েছে।’

নান্নু যোগ করেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়রা এখন যথেষ্ট অভিজ্ঞ। সামনে দুটি টেস্ট আছে। আমি আশা করছি পাঁচ দিনই আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলব। এটা করতে পারলে ইনশাআল্লাহ ভালো ফলাফল আসবে।’

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে কখনোই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সফরকারী দল হিসেবে টেস্টের প্রোটিয়াদের মোকাবিলা করা আরও কঠিন কাজ। নান্নু অবশ্য আশাবাদী। তার বিশ্বাস, নিউজিল্যান্ডে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয় যে পথ দেখিয়েছে টাইগারদের, সেই পথ ধরেই জয় আসবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট সিরিজে।

তিনি বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে আগাম কিছু বলতে পারবেন না। প্রত্যেক দিন, প্রত্যেক সেশন গুরুত্বপূর্ণ। মনোযোগ ধরে রাখা খুব জরুরি। আমাদের দল যে মন মানসিকতা ও সাহস নিয়ে খেলছে, ইনশাআল্লাহ।’

এসএইচ-০৮/২৬/২২ (স্পোর্টস ডেস্ক)

কমেছে পেঁয়াজের দাম

ঝিনাইদহে আবারও কমেছে পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি পেঁয়াজের দাম কমেছে ২০০-৩০০ টাকা। সরবরাহ বাড়ায় এবং বিদেশ থেকে আমদানির কারণেই দাম কমছে বলে দাবি কৃষকদের। সরবরাহ আরও বাড়লে পেঁয়াজের দাম প্রতি মণে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় নেমে যাওয়ার শঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শৈলকুপা পাইকারি হাটে পেঁয়াজ নিয়ে আসতে শুরু করেন চাষিরা। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে পেঁয়াজ নিয়ে আসেন এ হাটে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে জমে ওঠে বাজার। এ বাজারে সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পেঁয়াজের বেচাকেনা হয়।

প্রতি মণ পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কম। এতে কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির কারণেও দাম কমছে বলে দাবি করেন চাষিরা।

‘কৃষককে বাঁচান, বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করুন’ দাবি জানিয়ে চাষিরা বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনে ৮৫০ টাকা খরচ হয়েছে, তবে বিক্রি করেছি ৮০০ টাকায়। ভারতের থেকে পেঁয়াজ আমদানির কারণে দেশের পেঁয়াজ চাষিরা কোনো ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।

এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়তে থাকলে দাম আরও কমতে পারে। এতে লোকসানে পড়তে হবে।

এ বিষয়ে শৈলকুপা বণিক সমিতির সদস্য ফারুক আহমেদ বলেন, সরকার যদি আগামী দুই থেকে তিন মাস ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না করে, তাহলে কৃষক একটু বাঁচত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, এ বছর জেলার ৬ উপজেলায় ১০ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।

এসএইচ-০৭/২৬/২২ (অনলাইন ডেস্ক)

ট্রেনের টিকিট বিক্রির সফটওয়্যার আপডেটে সময় লাগবে দেড় বছর

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহের ওয়েবসাইট আপডেট হতে দেড় বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সহজ ডট কম এর পাবলিক রিলেশন্স ম্যানেজার ফারহাত আহমেদ।

শনিবার থেকে রেলের টিকিট বিক্রি শুরু করে সহজ। কিন্ত সকাল থেকে দেখা গেছে মানুষের চরম ভোগান্তি। সকাল আটটায় টিকিট বিক্রি শুরু হলেও আগে থেকেই উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

পূর্বে রেলের অনলাইন টিকিট বিক্রির যতগুলো পদ্ধতি ছিল তার সব কিছু বাতিল করে নতুন করে eticket.railway.gov.bdb নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে সহজ ডট কম। আজ থেকে অনলাইনে এই ওয়েবসাইটে টিকিট বিক্রির কথা থাকলেও সকাল থেকে অধিকাংশ টিকিট প্রত্যাশিই প্রবেশ করতে পারেননি সেখানে।

বেশিরভাগ যাত্রীরই অভিযোগ, নতুন ওয়েবসাইট ওপেন করাই যাচ্ছে না। অনেক কষ্টে যারা প্রবেশ করতে পেরেছেন তাদেরকে পড়তে হয়েছে নানা ভোগান্তিতে। তবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অনলাইনে টিকিট বিক্রির হার ছিল খুবই কম। মোট টিকিটের ৫০ শতাংশ কাউন্টার আর ৫০ শতাংশ অনলাইনে বিক্রির কথা থাকলেও খোদ সহজ কর্মকর্তারাই বলছেন শুরুর দিনে অনলাইনে প্রত্যাশিত সংখ্যক বিক্রি করতে পারবেন না তারা। কেননা সকাল থেকে অনলাইনে টিকিট বিক্রির হার পূর্বের তুলনায় অনেক কম।

অনলাইনে টিকিট না পেয়ে কাউন্টারে ভিড় করেন যাত্রীরা। ফলে কাউন্টারের সামনে যেন ঈদের সময়ের মত টিকিট প্রত্যাশিদের উপচেপড়া ভিড় ছিল সারাদিনই। তবে কাউন্টারেও ছিল যাত্রীদের ভোগন্তি। নতুন সফটওয়্যার ঠিকমত কাজ না করায়, টিকিট পেতে ভোগান্তিতে পড়েতে হয়েছে যাত্রীদের। সার্ভার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। মাঝে মধ্যেই হ্যাঙ হয়ে বন্ধ যাচ্ছে নতুন পদ্ধতির সফটওয়্যার। দীর্ঘ ভোগান্তির পর টিকিট হাতে পেলেও নানা বিড়ম্বনায় পড়েন যাত্রীরা। যাত্রার তারিখ, ট্রেন ছাড়ার সময় এমনকি ভাড়াতেও ভুলে ভরা টিকিট। এক ট্রেনের নামে অন্য ট্রেনের টিকিট, শোভন চেয়ারের নামে এসি সিটের ভাড়াও অনেকের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে।

কোনো কোনো যাত্রীর অভিযোগ, সকাল আটটার ট্রেন ছাড়ার সময় দেখানো হয়েছে দুপুর ১২টায় এভাবে নানা জটিলতায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। একদিনে অনলাইনে টিকিট না পেয়ে কাউন্টারে বাড়ছে ভিড় অন্যদিকে কাউন্টারে সার্ভার সহ নানা রকম কারিগরি জটিলতায় সহজ ডট কমের নতুন টিকিট বিক্রির পদ্ধতি যেন যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে বহুগুণ।

কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার জানিয়েছেন, নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সময় লাগবে বেশ কয়েকদিন। টিকিট বুকিং সহকারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে নতুন পদ্ধতিতে কাউন্টারে টিকিট বিক্রি অল্প সময়ের মধ্যেই প্রত্যাশিত অবস্থায় ফিরবে বলে আশা তার। কাউন্টারে টিকিট বিক্রির ব্যাপারে আশাবাদী হলেও অনলাইনের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেননি তিনি।

তবে ‘সহজ ডট কম’ এর পাবলিক রিলেশন্সশিপ ম্যানেজার ফারহাত আহমেদ বলছেন, টিকিট বিক্রির সফটওয়্যার তৈরি করতে অল্প কিছুদিন সময় পেয়েছেন তারা। মাত্র ২১ দিনে বানানো হয়েছে সফটওয়্যার তাই অনেক বিষয় এখনও সমাধান করা সম্ভব হয়নি। ‘সহজ ডট কম’ এর তৈরিকৃত নতুন ওয়েবসাইট পুরোপুরি সেবা দিতে নতুন করে সফটওয়্যার আপডেট করতে দেড় বছর সময় লাগবে বলেও জানান তিনি। সমস্যার সাময়িক সমাধানের পথ খুজছেন তারা, স্থায়ী সমাধানের জন্য দেড় বছর সময় চান ‘সহজ ডট কম’।

এসএইচ-০৬/২৬/২২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের উপহার পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অতীতের মতো এবারও রাজধানীর মোহাম্মদপুরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১) তাদের প্রতি শুভেচ্ছার নিদর্শন স্বরূপ ফল, ফুল ও মিষ্টি পাঠিয়েছেন তিনি।

শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস-২) গাজী হাফিজুর রহমান লিকু ও সহকারী প্রেস সচিব এবিএম সারওয়ার-ই-আলম সরকার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এসব উপহার সামগ্রী তাদের কাছে পৌঁছে দেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ সময় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের পরিবারের সদস্যরা স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ ও পহেলা বৈশাখের মতো প্রতিটি জাতীয় দিবস ও উৎসবে তাদের স্মরণ করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তারা আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

মুক্তিযোদ্ধারা এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকলে জনগণের কল্যাণের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ভালো থাকেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি ও থাকার ব্যবস্থা করায় তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

মুক্তিযোদ্ধারা মনে করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দারিদ্রমুক্ত, সমৃদ্ধ ও আত্ম-মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

এসএইচ-০৫/২৬/২২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)

মেয়ের মরদেহ কাঁধে নিয়ে ১০ কিমি হাঁটলেন বাবা

গুরুতর অসুস্থ মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন হতদরিদ্র এক বাবা। ভর্তির কিছুক্ষণ পরেই মারা যান তার মেয়ে। মেয়ের মরদেহ গ্রামে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো গাড়ি না পাওয়ায় নিজেই মেয়ের মরদেহ কাঁধে তুলে নেন। এরপর পাড়ি দেন ১০ কিলোমিটার পথ।

এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের ছত্তিশগড়ের সরগুজায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, ছত্তিশগড়ের সরগুজার আমডালা গ্রামের বাসিন্দা ঈশ্বর তাঁর সাত বছরের মেয়ে সুরেখাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শুক্রবার (২৫ মার্চ) ভোরে লক্ষ্মণপুরের সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে এসেছিলেন। কিছু সময় পরে সেখানেই সুরেখা মারা যায়। মেয়ের মরদেহ গ্রামে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো গাড়ি পাননি ঈশ্বর। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে তিনি কাঁধে মেয়ের মরদেহ তুলে ১০ কিলোমিটার দূরে আমডালার উদ্দেশে রওনা হন।

মরদেহ নিয়ে হাটার একটি ভিডিওটি শেয়ার করেছে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই। ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর নড়েচড়ে বসে ছত্তিশগড় সরকার। ইতোমধ্যে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ওই রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিংহদেও বলেন, ‘আমি ভিডিওটি দেখেছি। খুবই মর্মান্তিক। এ বিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (সিএমএইচও)-কে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের উচিত ছিল গাড়ি না আসা পর্যন্ত মৃতের পরিবারকে অপেক্ষা করতে বলা।’

ওই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে শনিবার লক্ষ্মণপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক বিনোদ ভার্গব বলেন, ‘মেয়েটির অক্সিজেনের মাত্রা খুব কমে গিয়েছিল। ৬০-এর কাছাকাছি নেমে যায়। তার বাবা-মা জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরে সে প্রবল জ্বরে ভুগছিল। আমরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করেছিলাম। কিন্তু তার অবস্থার অবনতি হয়। সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ সে মারা যায়।’

ভার্গবের দাবি, সুরেখার মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ লক্ষ্মণপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সরকারি গাড়ি এসেছিল। কিন্তু তার আগেই ঈশ্বর মেয়ের মরদেহ কাঁধে তুলে গ্রামের উদ্দেশে রওনা হন।

এসএইচ-০৪/২৬/২২ (অনলাইন ডেস্ক)

ছেঁড়া জিন্স পরা যাবে না

হিজাব বিতর্কের মধ্যেই এবার কলেজ ক্যাম্পাসে ‘কৃত্রিমভাবে ছেঁড়া’ কোনও পোশাক পরা যাবে না বলে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এ নির্দেশ অমান্য করে ছাত্রছাত্রীদের কেউ এমন পোশাক পরে এলে তাকে ‘ট্রান্সফার সার্টিফিকেট’ (টিসি) দেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

সম্প্রতি পোশাক নিয়ে এমন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কলকাতার আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু কলেজ কর্তৃপক্ষ। খবর আনন্দবাজারের।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু কলেজের বিজ্ঞপ্তিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়, ‘কৃত্রিমভাবে ছেঁড়া’ ট্রাউজার্সের প্রসঙ্গ। নির্দেশ অমান্য করে ছাত্রছাত্রীদের কেউ এমন পোশাক পরে এলে তাকে ‘ট্রান্সফার সার্টিফিকেট’ (টিসি) দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেছে নির্দেশনায়। শহরের কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে ‘রিপ্‌ড জিন্স’-এর তুমুল জনপ্রিয়তা। এই পরিস্থিতিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে প্রশ্ন তুলেছে ওই কলেজের শিক্ষার্থীদের একাংশ।

এ বিষয়ে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অশালীন পোশাক নিষিদ্ধ করার যুক্তি মানা যেতে পারে, কিন্তু রিপ্‌ড জিন্স নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে এমন পোশাক ফতোয়া জারি অযৌক্তিক।’

তার মতে, এই ধরনের নিয়ম তৈরি করে কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দে হস্তক্ষেপ করছেন।

কলেজের ওয়েবসাইট থেকে নোটিশটি পাওয়ার পর বার বার চেষ্টা করেও আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু কলেজের প্রিন্সিপালের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানায় আনন্দবাজার।

কয়েক বছর আগে মুম্বাইয়ের একটি কলেজ ক্যাম্পাসে ছেঁড়া জিন্স নিষিদ্ধ করার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমন নির্দেশিকার পেছনে সামাজিক কারণ রয়েছে বলে দাবি করে বলেছিলেন, ‘ওই ধরনের পোশাক দরিদ্রদের ব্যঙ্গ করে। যাদের ছেঁড়া পোশাক পরা ছাড়া কোনো উপায় নেই, তাদের কটাক্ষ করে।’

সম্প্রতি হিজাব পরে কলেজে প্রবেশ নিষেধ করায় দেশটির কর্ণাটকে বিতর্ক তৈরি হয়। এ নিয়ে মামলাও হয় আদালতে। যার রেশ ছড়িয়েছে ভারতজুড়ে। এবার পোশাক বিধি নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হলো কলকাতাতেও।

এসএইচ-০২/২৬/২২ (অনলাইন ডেস্ক)

মাদকাসক্তিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পরিবার

মাদকাসক্তি নিরাময়ে কোন যাদুর বটিকা নেই। মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে কয়েকটা দিন পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে দিলে অথবা নামকরা কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গেলেই রাতারাতি সে নিরাময় হয়ে যায় না।

অসীম ধৈর্য নিয়ে দিনের পর দিন প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। এই কথাটি বুঝতে পেরেছেন এমন এক বাবার সাথে কথা হচ্ছিল। তিনি বলছিলেন কিভাবে তার পরিবারে দুর্যোগ নেমে এল, স্বপ্নভঙ্গ হল।

“একজন বাবা, একজন মা এবং তার পরিবারের সদস্যরা, তাদের পরিবার নিয়ে স্বপ্ন থাকে। স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা থাকে। সেখানে যদি দেখা যায় যে এরকম পরিস্থিতি, তখন স্বাভাবিকভাবেই তখন স্বপ্নভঙ্গের সম্ভাবনা থাকে। স্বপ্নভঙ্গ কথাটার মধ্যে অনেক মিনিং এসে যায় যে আমার সন্তানকে আমরা কিভাবে কল্পনা করি, কিভাবে দেখতে চাই, আমাদের উত্তরাধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কেমন থাকবে না থাকবে সেখানে স্বপ্নভঙ্গের পরিস্থিতি দেখা যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই সকল বাবা মাই একটা দুর্যোগের সম্মুখীন হয়ে যায়। ”

যে দুর্যোগের কথা তিনি বলছিলেন সেটি হল সদ্য কৈশোর পার হওয়া ছেলের মাদকাসক্ত হয়ে ওঠা।

তিনি বলছিলেন, “আমরা কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করলাম যে ও বাসায় দেরিতে আসছে এবং আসার পরে কথাবার্তায় এক ধরনের অসংলগ্ন ভাব। তার ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন এটাও দেখে আমাদের মধ্যে চিন্তার উদ্রেক হল যে ও বোধ হয় কিছুর সাথে সংযুক্ত হচ্ছে। এটা পরখ করার জন্য আমরা দেখলাম যে হ্যাঁ ঠিকই, তখন তাকে আমরা নিষেধ করেছি। কিন্তু তারপরও সে গেছে। তখন আমরা ডাক্তারের পরামর্শ নেবার চেষ্টা করলাম। নিজের সন্তানকে কেউই রিহ্যাবে দিতে চায় না…..”

কথাগুলো বলতে গিয়ে তার গলা এক পর্যায়ে বুজে আসছিল। ছেলেকে সারিয়ে তোলার জন্য তার চেষ্টা কয়েক বছর ধরে চলছে।

কিভাবে বোঝা যাবে পরিবারের একজন সদস্য মাদকাসক্ত কিনা? মূল লক্ষণগুলো কি? সে সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অধীনে কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের রেসিডেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. মোঃ রাহেনুল ইসলাম :

-আচরণে কিছু পরিবর্তন।

-হঠাৎ পুরনো বন্ধু বাদ নিয়ে নতুন বন্ধুদের সাথে মেলামেশা বেড়ে যাওয়া।

-খাওয়া দাওয়ায় পরিবর্তন ও চেহারায় ছাপ।

-অসংলগ্ন আচরণ কথাবার্তা বলা। মেজাজ খারাপ থাকা। ঘুম থেকে উঠে মেজাজ খারাপ করা।

-যদি দিনে ঘুমায় রাতে জেগে থাকে। অথবা বেশি ঘুমাতে থাকে।

-বেশি সময় বাথরুমে থাকা বা ঘরের দরজা অনেকক্ষণ বন্ধ করে রাখা।

-মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মিথ্যা বলা বেড়ে যায়। অনেক সময় তাদের চুরির অভ্যাস তৈরি হওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়।

-বিভিন্ন অজুহাতে ঘনঘন টাকা চাওয়া।

ডা.ইসলাম বলেন, এসব নজরে পড়লে সতর্ক হতে হবে।

বাংলাদেশে বেশিরভাগ সময় পরিবারগুলোর শুরুতেই বাস্তবতা অবিশ্বাস করে যে তার পরিবারে একজন মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। তারা বিষয়টি লুকোতে চায়, বলছিলেন ডা. মোঃ রাহেনুল ইসলাম।

“প্রথমত তারা খুবই অবিশ্বাস করেন যে এটা আমার ফ্যামিলিতে হতেই পারে না। সেখান থেকে বের হয়ে আসেন যখন তারা দেখেন যে পরিস্থিতি একেবারেই আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে। তখন তারা চেষ্টা করেন গোপন করতে। যেহেতু আমাদের সমাজে মানুষজন এটাকে রোগ হিসেবে দেখতে চান না।”

“দেখা যায় যে ১৮’র উপরে বা সেরকম বয়স হলে বিয়ে দিতে চান, বিদেশ পাঠিয়ে দিতে চান, কোন একটা ব্যবসায় যুক্ত করে দিতে চান, বাড়ি বদল করেন, কিংবা তার সমস্ত ইচ্ছা পূরণ করতে থাকেন। তারা তাদের মতো করে বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। মোটা দাগে পরিবারগুলো আসলে শুভাকাঙ্খী কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তাদের আচরণ মাদক ব্যবহার আরও বাড়ায়। তারা আসলে মাদক ব্যবহারকে পুরস্কৃত করেন।”

ডা. রাহেনুল ইসলাম তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় পরিবারের প্রথম প্রতিক্রিয়া বেশিরভাগ সময় এমনটাই দেখেছেন।

আর কারণ হিসাবে তিনি বলছেন মাদকদ্রব্যের সাথে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তিকে কি পদ্ধতিতে ওই পথ থেকে ফেরাতে হয়, মাদকাসক্তি আসলে কতটা জটিল সে বিষয়টি বেশিরভাগই পরিবারের অজানা।

বিষয়টি পুরোপুরি বুঝে ওঠার আগেই হয়ত ততদিনে মাদকাসক্ত ব্যক্তি আরও বেশি করে জড়িয়ে পরেন অন্ধকার জগতটির সাথে।

কিন্তু বাংলাদেশে পরিবারগুলো মাদকাসক্তির বাস্তবতা কেন লুকাতে চান? এই বিষয়ে প্রচারণার সাথে যুক্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলছেন, “এটার সাথে একটা পরিবারের অসম্মান যুক্ত রয়েছে। যদি পরিবারের সদস্য কেউ মাদকাসক্ত সেটা অন্যরা জেনে ফেলে তাহলে সেটি অসম্মানের। প্রথমতে তাই তারা লুকাতে চায়। দুই ধরনের প্রেশার কাজ করে। দেখা যায় আত্মীয় স্বজন যারা আছে তারাও বলে হায়হায় এই ছেলেটাতো ভাল স্টুডেন্ট ছিল, এখন সে মাদকাসক্ত হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই বাবা মায়ের কোন দোষ রয়েছে। এরকম নানা ক্রিটিসিজম পরিবারের সদস্যারও যেমন করে তেমনি নিকট আত্মীয়, প্রতিবেশী তারাও করে থাকে। এসব কারণে পরিবারের মনে ভীতি সঞ্চার হয়।”

কথা হচ্ছিল মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের নার্সিং সুপারভাইজার নাসরিন নাহারের সাথে। তার অন্যতম একটি দায়িত্ব হল মাদকাসক্ত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের সাথে কাজ করা।

তিনি বলছেন, বাংলাদেশে মাদকাসক্ত একজন ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য কোথাও নিয়ে যেতে বেশিরভাগ সময় অভিভাবকরা অনেক দেরি করে ফেলেন।

তার ভাষায়, “এরা এত ভায়োলেন্ট হয়ে যায় যে গার্জিয়ানরা আসলে এদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। হয়ত তারা লাস্ট মোমেন্টে অনেক চেষ্টা করে, কিন্তু তার আর যখন কন্ট্রোল করতে না পারে তখন আমাদের কাছে নিয়ে আসে। গার্জিয়ানরা যখন রেখে যায় তখন তারা মনে করে যে ছেলেটাকে দিয়ে যাচ্ছি, ছেলেটা পুরো ম্যাজিকের মতো ভাল হয়ে বাসায় ফিরবে। অনেক অভিভাবকই এমন ভাবেন। কিন্তু আসলে তা হয় না। এটা দীর্ঘ ব্যাপার। আমরা তাদেরকে বুঝাই যে আপনারা এটা মনে করেন না যে এখানে ২৮ দিন থাকলো আর সে ভাল হয়ে গেল। আপনাদের কন্টিনিউয়াসলি ওর পেছনে লেগে থাকতে হবে।”

মাদকাসক্তিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি মানসিক রোগের সাথে সম্পর্কিত হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং এর দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন বলে সুপারিশ করেছে। কেননা মাদকাসক্ত ব্যক্তি মাদকের কাছে ফিরে আসতে বাধ্য হয়।

মাদক গ্রহণের পর রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে তার মস্তিষ্ক সেভাবে তৈরি হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকান অ্যাডিকশন সেন্টারের এক গবেষণায় দেখা গেছে চিকিৎসার পর ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মাদকাসক্ত ব্যক্তি এক বছরের মধ্যে আবারও মাদকদ্রব্য ব্যাবহার শুরু করেন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের এক সমীক্ষা বলছে বাংলাদেশে মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৩৫ লাখের মতো। বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা ৮০ লাখের মতো৷

এই ব্যক্তিদের সাথে জড়িয়ে আছে তাদের পরিবারের আরও লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন। মাদকদ্রব্য সেবনে এই প্রতিটি ব্যক্তি নিজেরা যেমন ধ্বংস হচ্ছেন, একই সাথে তারা বিপর্যস্ত করে তুলছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন।

রফিকুল ইসলাম যে ভীতির কথা উল্লেখ করেছেন, সে কারণে সিদ্ধান্ত নিতে পরিবারগুলোর যে দেরি হয়, তাতে প্রায়শই দেখা যায় হয়ত মাদকাসক্ত ব্যক্তির মাদকের জগতে আরও বেশি ডুবে যেতে থাকেন।

অনেক সময় অনেকেই জটিল মানসিক রোগে আক্রান্ত হন, রীতিমতো সহিংস হয়ে ওঠেন। তারা নিজেরাই নিজেদের জন্য এবং পরিবারের জন্য ঝুঁকি হয়ে ওঠেন।

যেকোনো মূল্যেই হোক মাদকের যোগান নিশ্চিত রাখতে অনেকেই অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসা তখন আরও জটিল হয়ে ওঠে, বলছিলেন ডা. রাহেনুল ইসলাম।

ততদিনে পরিবারের সদস্যরা তাদের সামাল দিতে গিয়ে বারবার চেষ্টার পর নিজেরাই মানসিক চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন, আশাহীন হয়ে পড়েন, বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক উম্মে কাওসার।

“যখন কেউ বছরের পর বছর ধরে এরকম একজনকে ডিল করছেন, তখন তাদের জন্যেও এটা একটা ট্রমা, মানসিক চাপ তৈরি করে। কিভাবে চাপ মোকাবেলা করতে হয় সেটা যখন তারা বুঝতে পারেন না তখন তাদের মধ্যেও নানা ধরনের মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।”

“এই চাপ যখন আমরা বের করে দিতে না পারি তখন সেটা আমার মধ্যে জড়ো হতে থাকবে। একটা সময় গিয়ে সেটা কিন্তু আমি আর নিতে পারবো না। যখন দেখা যায় এটা অনেক বছর ধরে হয়েই যাচ্ছে এবং তার কোন উপায় নেই তখন সেই ব্যক্তি একেবারে আশাহীন হয়ে পড়েন, আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং উনি মনে করতে শুরু করেন যে আমি মনে হয় আর পারবো না।”

এরকমই আশাহীন হয়ে প্রায় হাল ছেড়ে দেয়া, মাদকাসক্ত এক ছেলের মা বলছিলেন ছোটবেলা থেকে মানসিক রোগে আক্রান্ত ছেলেটি পরের দিকে মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে। কয়েক মাস আগের এক ঘটনার কথা বলছিলেন তিনি।

ছেলেকে তার ঘরে ঘুমাতে দেখে বাসা থেকে বের হয়েছেন। বাড়ি ফিরে জানলেন ঘুম ভাঙানোর কারণে সেদিন গৃহকর্মীকে বেধড়ক মারধোর করেছে ছেলেটি।

নিজের নাম, পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলছিলেন, “ও দেখা যেত লাঠি ঠ্যাঙ্গা নিয়ে রীতিমতো মানুষজনকে পিটাপিটি করছে। দেখা গেল তার ধাক্কায় আমি পড়ে গেলাম। দরজাটা ভীষণ জোরে মুখের উপর বন্ধ কর দিল। কাউকে মারধোর করলো। সেদিন আমারই মতো বয়স, আমাদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে যে কাজের মহিলা তার গায়ে হাত তুলেছে কারণ সে তাকে ঘুম থেকে কেন তুলল!”

“কাজের মহিলা যখন বুঝিয়ে বলতে চেয়েছে যে সে কেন তাকে ঘুম থেকে ওঠাল, তখন মোবাইলটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলেছে, তাকে চড়াইছে। আমার ছেলের কথা হচ্ছে কেন সে তাকে বোঝাতে গেল। সে সহজে মানতে চায় না যে ভুল করেছে … ঘরে এতটাই অশান্তি যে সেটাকে ট্যাকল করার জন্য আল্লার হাতে ছেড়ে দিয়েছি। আল্লাহ যা করে করবে।”

সমাজের সব পর্যায়ে এখন মাদক ঢুকে গেছে। কিন্তু দেশের ৩৫ লাখ মাদকাসক্ত ব্যক্তির জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে চারশো’র মতো।

সামর্থ্যবান যারা রয়েছেন তারা অনেক অর্থ খরচ করে বেসরকারি পুনর্বাসন কেন্দ্রে সন্তানের চিকিৎসায় ব্যবস্থা নিচ্ছেন, কিন্তু তবুও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে যারা দরিদ্র রয়েছেন তারা আরও নিঃস্ব হচ্ছেন, বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন।

উম্মে কাওসার বলছেন মাদকাসক্তির ক্ষেত্রে যেহেতু পরিবারে বেড়ে ওঠা, বাবা মায়ের সম্পর্ক এরকম নানা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ভূমিকা রাখে তাই মাদকাসক্তির চিকিৎসায় পরিবারকে যুক্ত করা খুবই জরুরী। একই সাথে তাদের নিজেদেরও মানসিক সহায়তা দরকার হয়ে পড়ে।

তিনি বলছেন, “একটি মাদকাসক্ত পরিবারের সদস্যদেরও কাউন্সেলিং দরকার। অনেক সময় ব্যাপারটা হয়ে তাদের নিজেদের ব্যর্থতার একটা বিষয়। তারা মনে করতে থাকেন যে তারা ব্যর্থ। তারা একা বোধ করেন। চরম হতাশায় ডুবে যান।”

কিন্তু বাংলাদেশে মাদকাসক্তির চিকিৎসাই যেখানে অপ্রতুল সেখানে পরিবারের সদস্যদের কাউন্সেলিং-এর ধারনাটিই নেই বললেই চলে। তাই তাদের সহায়তায় তেমন কোন ব্যবস্থাই গড়ে ওঠেনি।

সব মিলিয়ে মাদকদ্রব্য সেবনে একজন ব্যক্তি নিজে যেমন ধ্বংস হচ্ছেন, একই সাথে তারা অসহায় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন পরিবারের সদস্যদের জীবন।

এসএইচ-০১/২৬/২২ (শাহনাজ পারভীন, বিবিসি)

বিক্ষুব্ধ বিদ্রোহের দিন ২৬ মার্চ

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের আজ ৫২তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালী তার স্বর্ণ অতীতের দিকে ফিরে তাকাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেয়ার নতুন শপথ, নব উজ্জীবন ঘটবে জাতীয় জীবনে।

২৬ মার্চ। রক্ত, অশ্রুস্নাত বিক্ষুব্ধ বিদ্রোহের দিন। বাঙালীর শৃৃঙ্খলমুক্তির দিন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালীর দীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের চূড়ান্ত লড়াইয়ের সূচনার দিন। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন। মহার্ঘ্য স্বাধীনতা। কিন্তু বাঙালী জাতিকে এ জন্য দিতে হয়েছে চরম মূল্য। দেশের মহার্ঘ্য স্বাধীনতার ৫১ বছরের এই ক্ষুদ্র পরিসরে দেশ ও জাতি অনেক ঘটন-অঘটন, চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী হয়েছে। সময়ে সময়ে এসব ঘটনা সমগ্র জাতিকে প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিয়েছে, পাল্টে দিয়েছে এর গতিপথ। কখনও জাতির জীবনে এসেছে হতাশা-অন্ধকারাচ্ছন্ন মুহূর্ত, কখনও বা হয়েছে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় উজ্জীবিত।

যদিও ৫১ বছর একটি জাতির জীবনে খুব বড় পরিচয় নয়, গড় আয়ুর নিরিখে হয়ত বা একটি প্রজন্ম মাত্র, তথাপি পরাধীনতার শিকল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসা সহস্র বছরের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ আত্মমর্যাদায় বলীয়ান একটি জাতির সামনে অর্ধ শতাব্দির এই মাইলফলক অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। যেমনটি টানা তৃতীয় মেয়াদে বঙ্গবন্ধুরকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে গত ১৩ বছরে বদলে গেছে বাংলাদেশ, নতুন প্রজন্মের সামনে উদ্ঘাটিত হয়েছে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের সত্য ও সঠিক ইতিহাস। ইতিহাসের খলনায়করা হারিয়ে গেছে সত্য ইতিহাসের বিশাল স্তূপের নিচে।

স্বাধীনতার এই ৫১ বছরের মধ্যে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যাপরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর এবং পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোটের পাঁচ বছরে পুরো জাতি দেখেছে স্বাধীনতাবিরোধী, একাত্তরের গণহত্যাকারী ও জাতির পিতার খুনীদের আস্ফালন, ইতিহাস বিকৃতির ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র আর স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে ফেলার নগ্ন আস্ফালন। কিন্তু সত্য ইতিহাসকে কখনও মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না, তা আজ প্রমাণিত হয়েছে।

স্বাধীনতার ৫১ বছরে বঙ্গবন্ধু আজ শুধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালীই নন, বিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তির অনুপ্রেরণা দাতা হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তাঁরই নির্দেশিত পথে তাঁরই জ্যেষ্ঠ কন্যার হাত ধরে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বিস্ময়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাণশক্তি, সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণেই বাংলাদেশ পেয়েছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালী জাতি। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল এ ব-দ্বীপের মানুষ। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে একাত্তরের এই দিনে যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ, দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দিন আজ। প্রতিবছর মহান স্বাধীনতা দিবস জাতির জীবনের প্রেরণায় উজ্জীবিত হওয়ার নতুন বার্তা নিয়ে আসে।

ভয়াল ‘কালরাত্রি’র পোড়া কাঠ, লাশ আর জননীর কান্না নিয়ে রক্তে রাঙা নতুন সূর্য উঠেছিল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। ভয়াল কালরাতের ধ্বংসস্তূপ আর লাশের ভেতরে দিয়ে রক্ত রাঙা সেই নতুন সূর্য। ভীতবিহ্বল মানুষ দেখল লাশপোড়া ভোর। সারি সারি স্বজনের মৃতদেহ। আকাশে কু-লী পাকিয়ে উঠছে ধোঁয়া। পুড়ছে স্বাধীন বাংলার মানচিত্র আঁকা লালসবুজ পতাকা। জ্বলছে শাড়ি, খুকুর ফ্রক। চোখে জল। বুকে আগুন। জ্বলে উঠল মুক্তিকামী মানুষের চোখ, গড়ল প্রতিরোধ। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে ‘জয় বাংলা’ তীব্র সেøাগান তুলে ট্যাঙ্কের সামনে এগিয়ে দিল সাহসী বুক।

একাত্তরের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানী হিংস্র শ্বাপদের গণহত্যার বিরুদ্ধে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবনপণ সশন্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালী। দীর্ঘ ন’মাস এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের বাঙালীর শ্রেষ্ঠতম অর্জন- মহান স্বাধীনতা।

আজ ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালী জাতির জীবনে সূচনা ঘটবে আরও একটি ঝলমল উৎসব দিনের। রক্ত, অশ্রুস্নাত বিক্ষুব্ধ বিদ্রোহের দিন ২৬ মার্চ। এ ভূ-ভাগের সবচেয়ে বড় অর্জন, বাঙালীর সহস্র বছরের জীবন কাঁপানো ইতিহাস- মহান স্বাধীনতা। অসংখ্য শহীদের রক্তে ভেজা, জাতির বীরসেনানীদের রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের সূচনা দিন। বাঙালীর স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিন। গৌরব ও স্বজন হারানোর বেদনার এই দিনে বীর বাঙালী সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করেছিল। তাই আজ গৌরব ও অহঙ্কারের দিন।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজ সরকারী ছুটির দিন। আজ পথে পথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল বাঙালীর কণ্ঠে উচ্চারিত হবে- ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে, ভয় নাই। নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই…’।

কোন হুইসেল বা সৈনিকের ঘোষণায় নয়, এই মহার্ঘ্য স্বাধীনতা অর্জন করতে বাঙালী জাতিকে করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম, দিতে হয়েছে একসাগর রক্ত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধাপে ধাপে পুরো বাঙালী জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরেই ভাষার প্রশ্নে একাত্ম হয় বাঙালী। ১৯৪৮, ’৫২ পেরিয়ে ’৫৪, ’৬২, ’৬৬-এর পথ বেয়ে আসে ১৯৬৯। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে কেঁপে ওঠে জেনারেল আইয়ুবের শাসন। জনতার সাগরে উন্মাতাল স্রোতধারা। ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা-পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ সেøাগানে সেøাগানে প্রকম্পিত হয় গ্রাম-শহর, জনপদ।

শত ষড়যন্ত্র ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সত্তরের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু বাঙালীর হাতে শাসনভার দেয়ার বদলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকেন কালক্ষেপণ। প্রস্তুত হয় হিংস্র কায়দায় বাঙালী হত্যাযজ্ঞে। তবে ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণেই পাওয়া যায় দিক-নির্দেশনা। আক্ষরিক অর্থেই তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। সেই প্রবল প্রদীপ্ত আন্দোলনের জোয়ারে ধীরে ধীরে বাঙালীর হৃদয়ে আঁকা হয় একটি লাল-সবুজ পতাকা, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের ছবি।

কিন্তু বাঙালীর আবেগ, সংগ্রাম ও মুক্তির আকাক্সক্ষাকে নির্মূল করতে অস্ত্র হাতে নামে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী। শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষাকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু করে নিষ্ঠুর গণহত্যা। সেই কালরাত থেকেই শুরু হয় মৃত্যু, ধ্বংস, আগুন আর আর্তনাদের পৈশাচিক বর্বরতা। কিন্তু ওই ঘোরতর অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য।

২৬ মার্চের সূচনালগ্নে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করে বলেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতে পিলখানার ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের লোকদের হত্যা করছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। আমি বিশ্বের জাতিগুলোর কাছে সাহায্যের আবেদন করছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ’র নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ- দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোন আপোস নাই, জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লোকদের এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আমাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।’

বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার হওয়ার পর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বর্বর ও নির্বিচারে গণহত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও সর্বব্যাপী পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বাঙালী জাতি তাদের সর্বশক্তি নিয়ে ইস্পাতকঠিন প্রত্যয় নিয়ে সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সারাদেশে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। দেশের অকুতোভয় বীর সন্তানরা তুমুল যুদ্ধ করে লাখো প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী মাথানত করে পরাজয় স্বীকার করে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পায় এক সাগর রক্তের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ, স্বাধীন পতাকা- যাঁর নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।

যাঁদের রক্ত ও সম্ভ্রমের মূল্যে আমরা পেয়েছি মহামূল্যবান এই স্বাধীনতা, তাঁদের কাছে মহামূল্য ঋণ গভীর কৃতজ্ঞতা, ভালবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবার দিন আজ। মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধা, ভালবাসা আর বেদনায় স্মরণ করবে মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদকে। স্মরণ করবে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী তাঁর সহকর্মী জাতীয় নেতাদের।

জাতি শ্রদ্ধা জানাবে বীরাঙ্গনা আর শহীদ মাতাদের। দৃপ্ত শপথ নেবে- জঙ্গী-সন্ত্রাস, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে। স্বাধীনতাবিরোধী শত্রুদের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার। কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি আজ দৃঢ় শপথে বলীয়ান হবে সকল অন্ধকারের শক্তিকে পরাজিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তোলার।

’৭৫ পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামটি মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল, তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটি বাজানোর ওপরও ছিল অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। সময়ের ব্যবধানে আজ সেই ঐতিহাসিক ভাষণ জাতিসংঘের ইউনেস্কো ঘোষিত ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল’ হিসেবে বিশ্বসভায় স্বীকৃত। দেশকে স্বাধীন করে জাতির পিতা তাঁর জীবনের প্রথম লক্ষ্য পূরণ করেছেন। কিন্তু তাঁর দ্বিতীয় লক্ষ্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন, যা তিনি সমাপ্ত করে যেতে পারেননি। সেই লক্ষ্য পূরণে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিক বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেলে পরিণত হয়েছে।

যে বাংলাদেশকে একদিন হেনরি কিসিঞ্জারসহ পৃথিবীর অনেকেই হাস্যাষ্পদ মন্তব্য করে বলেছিল, ‘বাংলাদেশ হবে তলাবিহীন ঝুড়ি, বাংলাদেশ হবে দরিদ্র দেশের মডেল।’ আজ তাদের বক্তব্য ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ ’৭৫-এ ছিল স্বল্পোন্নত আর আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। স্বাধীনতা দিবসের আনন্দঘন ক্ষণে জাতির পিতার আরাধ্য স্বপ্নের বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যাবার মহতীযাত্রা অব্যাহত রাখবে।

এসএইচ-০১/২৬/২২ (অনলাইন ডেস্ক)

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা

একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে অপারেশন সার্চলাইট নামে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালীদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে নির্বিচারে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করতে থাকে। এমতাবস্থায় ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। এ ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়।

সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র তৃতীয় খণ্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই ঘোষণা উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ২৫ মার্চ মধ্য রাতের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে এ ঘোষণা দেন তিনি যা তৎকালিন ইপিআর এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মূল্যবান দলিলটি সেখানে লিপিবদ্ধ হয়েছে এভাবে— ‘ইহাই হয়তো আমাদের শেষ বার্তা আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১।’

২০১৬ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশের সংবিধানের উপক্রমণিকায় এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে বাংলার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জনসভায় এক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা করিয়া স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হইবার ডাক দেন এবং ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

উপক্রমণিকায় আরও বলা হয়েছে, রক্তপাতহীন স্বাধীনতা প্রাপ্তির প্রত্যাশায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের সামরিক জান্তা এবং রাজনৈতিক নেতাদের সহিত ঢাকায় আলোচনায় বসেন। কিন্তু ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাত্রিতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে নির্বিচারে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটন করতে থাকে। এমতাবস্থায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়।’

অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু স্বকণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এমন তথ্য নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এরকম একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, একাত্তর সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি আর্মি ঢাকা রেডিও’র দখল নিলেও, গোপন তিনটি ট্রান্সমিটার আগে থেকে প্রস্তুত রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেগুলোতে টেলিফোনে নিজের ঘোষণা রেকর্ড করান তিনি। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বার্তা প্রচারের ব্যবস্থা করেন। নিবন্ধে আরো বলা হয়, চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র চালু হওয়ার অন্তত ১৮ ঘণ্টা আগে গোপন রেডিও মনিটর করে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার সংবাদ প্রকাশ করে বিশ্ব গণমাধ্যম।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্ব পালনকারী সিদ্দিক সালিক-এর ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণের সত্যতা পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসাবে পাক সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চ লাইট শুরুর মুহূর্ত নিয়ে তিনি ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থে লিখেন “এভাবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহূর্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল। যখন প্রথম গুলিটি বর্ষিত হলো, ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিও’র সরকারি তরঙ্গের (ওয়েব লেংনথ) কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। ওই কণ্ঠের বাণী মনে হলো আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করলেন।”

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ ডকুমেন্টস-এ ওই ঘোষণার পূর্ণ বিবরণ প্রকাশিত হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ঘোষণায় বলা হয়, এই-ই হয়তো আপনাদের জন্য আমার শেষ বাণী হতে পারে। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি- যে যেখানেই থাকুন, যে অবস্থাতেই থাকুন এবং হাতে যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। ততদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান- যতদিন না দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটি থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে।”

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নুরুল উল্লার বৈঠকের বিবরণ থেকেও বঙ্গবন্ধুর স্বকণ্ঠে স্বাধীনতা ঘোষণার পরিকল্পনার কথা ধারণা করা যায়। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের সাথে যেমন আলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তেমনি সাথে সাথে তিনি কতকগুলো ‘আন্ডারগ্রাউন্ড ওর্য়াকও করে যাচ্ছিলেন। ৭ মার্চের পর তিনি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নুরুল উল্লাকে তার কাছে ডেকে পাঠান। তিনি তার সাথে বৈঠক করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতারা এ সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেন। বৈঠকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দিন আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।

স্বাধীনতার দলিল ৮ম খণ্ডের ২২ থেকে ২৩ পৃষ্ঠায় এ বৈঠকের কথা উল্লেখ আছে। বৈঠকে বঙ্গবন্ধু নুরুল উল্লাকে একটি ট্রান্সমিটার তৈরি করে দেওয়ার কথা বলেন। ঐ ট্রান্সমিটারে তিনি শেষবারের মত ভাষণ দেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন।

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘নুরুল উল্লা আমাকে ট্রান্সমিটার তৈরি করে দিতে হবে। আমি যাবার বেলায় শুধু একবার আমার দেশবাসীর কাছে কিছু বলে যেতে চাই। তুমি আমায় কথা দাও, যেভাবেই হোক একটা ট্রান্সমিটার আমার জন্য তৈরি রাখবে। আমি শেষবারের ভাষণ দিয়ে যাব।’

ড. মোহাম্মদ হান্নান এ ব্যাপারে তার ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ গ্রন্থে লিখেন, বঙ্গবন্ধুর সাথে বৈঠকের পর নুরুল উল্লা সঙ্গে সঙ্গে এসে বার্তাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ কৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিক্ষকদের বলেন। শুরু হয়ে যায় স্বাধীন বাংলার প্রথম রেডিও ট্রান্সমিটার তৈরির কাজ। বিভাগীয় প্রধান ড. জহুরুল হকসহ প্রায় সকল শিক্ষক ৯ দিন কাজ করার পর একটি ট্রান্সমিটার তৈরি করেন। এর সম্প্রচার ক্ষমতা বা শক্তি ছিল প্রায় বাংলাদেশব্যাপী। শর্ট ওয়েভে এর শব্দ ধরা যেত।

অন্যদিকে আব্দুল কুদ্দুস মাখন তার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ১৯৭০ সালেই বঙ্গবন্ধু আখাউড়া শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি লালমিয়া ও গঙ্গাসাগরের রফিককে একটি রেডিও স্টেশন স্থাপন বিষয়ে যাবতীয় খুটিনাটি বিষয়ে খোঁজ-খবর করার জন্য ভারতে পাঠিয়ে ছিলেন। তাদের মিশনের প্রাক কাজকর্ম স্বাধীন বাংলার প্রথম বেতার কেন্দ্র স্থাপনে সহায়ক হয়েছিল।

দৈনিক জনকণ্ঠের ২৬ মার্চ ১৯ সংখ্যার একটি নিবন্ধে ড. ফিরোজ মাহমুদ বলেন, ২৫ মার্চ রাত থেকে শুরু করে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহর পর্যন্ত দ্রুত অবনতিশীল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে একাধিক রেডিওতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান বেতারের ঢাকা কেন্দ্র পাকিস্তানিদের দখলে চলে গেলেও, বঙ্গবন্ধু গোপন তিনটি রেডিও ট্রান্সমিটার তিন জায়গায় প্রস্তুত রেখেছিলেন। পিলখানার এক সুবেদারের কাছে তার একটি প্রি-রেকর্ডেড ভাষণ ছিল। যেটির কোড ‘বলদা গার্ডেন।

ক্র্যাক ডাউনের খবর জেনে সেটি প্রচারের লক্ষ্যে ওই সুবেদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি। পরে দ্বিতীয় ট্রান্সমিটারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন। সেখানে টেলিফোনের মাধ্যমে নতুন করে স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করান বঙ্গবন্ধু। একটু পরেই তা প্রচার করা হয়। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের তিন সাংবাদিকের কাছে এ তথ্য জানিয়েছিলেন বলে জানান ফিরোজ মাহমুদ।

বস্তুত লড়াইয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করে যৌক্তিক সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালিকে মুক্ত করার ঐতিহাসিক ঘোষণার লিখিত রূপ (কালুর ঘাটে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে প্রচারিত) ইতিহাসে থাকার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর স্বকণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণার কথাও জানা যাচ্ছে।

এসএইচ-৩১/২৫/২২ (অনলাইন ডেস্ক)