এবার জাতিসংঘের সব তথ্য বাংলা ভাষাতেও

বাংলা

মোদের গরব মোদের আশা , আ-মরি বাংলা ভাষা। আবারও বিশ্বের দরবারে সমাদৃত বাংলা ভাষা।
জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা সময় থেকে দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পাদিত হতো ইংরেজি, ফরাসি, রুশসহ ছয়টি ভাষায়৷ এবার যুক্ত হলো বাংলা ভাষাও৷ অন্যান্য দাপ্তরিক ভাষার পাশাপাশি এবার থেকে মিলবে বাংলায়ও। সংস্থাটির সাধারণ সভায় পাশ হয়েছে বহুভাষা ব্যবহারের প্রস্তাব। শুক্রবার এই প্রস্তাব পাশ হয়। এ ছাড়া হিন্দি ও উর্দুকেও সংযোজন করা হয়েছে।

ইংরেজি, ফরাসি, রুশ, ম্যান্ডারিন, আরবি ও স্প্যানিশ— এই ছয়টি ভাষায় মূলত এ পর্যন্ত জাতিসংঘের সব লিখিত এবং মাল্টিমিডিয়ায় প্রকাশিত বার্তা প্রচারিত হতো।

এবার থেকে সেখানে যুক্ত হলো বাংলা, উর্দু ও হিন্দিও। সংস্থাটির ওয়েবসাইটেও এবার থেকে বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পেতে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। রক্তে রঞ্জিত হয়েছে ঢাকার রাজপথ। ভাষার জন্য এই আত্মত্যাগ ও আন্দোলনকে পৃথিবী স্বীকৃতি দিয়েছে।

১৯৫২ সালের রক্তঝরা একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতিসত্তার চাবিকাঠি। ১৯৪৭ পরবর্তী জাতীয় জীবনে সব গণজাগরণ, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের চেতনার মূলে জড়িয়ে আছে ফেব্রুয়ারি মাসের স্মৃতি। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন জাতির সংগ্রামী চেতনার মহাকাব্য। এটি কোনো সাধারণ সাল তারিখ নয়। এটি শোক, প্রেরণা, শপথ আর অঙ্গীকারের মিলিত স্রোতোধারা। ২১-এর পথ ধরেই বাঙালি হেঁটেছিল নিজেদের মুক্তির দিকে। মাতৃভাষার জন্য জীবন দান করেছে বাংলাদেশের মানুষ। ২১ শে ফেব্রুয়ারি একই সাথে শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি দেশের সীমানা পর্যন্তই নয়, এখন বাংলার ভূখণ্ড পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিস্তৃত । আমাদের শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি আর ইতিহাসের কাছে ফিরে যাওয়ার তাগিদ দেয় একুশে ফেব্রুয়ারি। রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, অনেকে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের বীর। তারা তাদের জীবনকে উৎস্বর্গ করে আমাদের মাতৃভাষাকে ফিরিয়ে এনেছে। ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় চেতনার প্রথম প্রতীক৷ একুশ মানে নিজেকে চেনা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলে ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক অবদান সর্বজনবিদিত।

ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় অর্জন হলো ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। ২১ ফেব্রুয়ারি এ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ সাধনা ও সংগ্রামের ইতিহাস। ‘The Mother Language Lovers of the world’ নামক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা কানাডা প্রবাসী বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম জাতিসঙ্ঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানের কাছে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার আবেদন জানান। তাদেরই প্রচেষ্টায় এবং বাংলাদেশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসঙ্ঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেস্কো) ১৬০তম অধিবেশনে বাংলাদেশসহ ২৭টি দেশের সমর্থন নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ করা হয়। মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ওই দিনই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কোর সদর দফতরসহ ১৯৪টি সদস্য দেশে নিজ নিজ মাতৃভাষার আলোকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালিত হচ্ছে।মাতৃভাষা দিবস তাই বাঙালি জাতির ইতিহাসে গৌরবময় ও অবিস্মরণীয়৷ আর এভাবেই বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া চলমান৷ জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলা বিশ্বের ৭ম ভাষা। বিশ্বের ৩৩ কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা।