এইচএসসিও পাস করলেন সেই নাইচ

অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল ঠিক থাকলে স্বপ্নগুলো এক সময় বাস্তবে রূপ নেয়। তা প্রমাণ করেছেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী নাইচ খাতুন।

প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তিনি এবার বিশ্বহরিগাছা বহালগাছা বহুমুখি মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। তিনি মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ২.৭৫ পেয়েছেন। নাইচ ভবিষ্যতে আদর্শ শিক্ষক হতে চান।

নাইচ খাতুনের দুটো পা থাকলেও সেগুলোতে শক্তি নেই। ডান হাতেরও একই অবস্থা। একমাত্র সম্বল বাম হাত দিয়েই চলছে তার লড়াই। শারীরিক প্রতিন্ধকতার কাছে হার না মানা নাইচ খাতুন বাবার কোলে ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে এসে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।

ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের বিশ্বহরিগাছা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম ও গৃহিণী আকতার জাহানের সন্তান। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে নাইচ ছোট। বড় ভাই রবিউল করিম বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অনার্সের ছাত্র। মাত্র দেড় বিঘা ফসলি জমির ওপর চলে লেখাপড়া ও সংসার।

বাবা নজরুল ইসলাম জানান, তার মেয়ে জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। তার দুটো পা ও একটি হাত অচল। এ কারণে সে দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারে না। তারপরও সে লেখাপড়া করতে চায়। তাই তার মা ও তিনি ছোট থেকেই নাইচকে কোলে তুলে নিয়ে বিদ্যালয় ও কলেজের ব্রেঞ্চে বসে দিয়েছেন। ক্লাস শেষে আবার একইভাবে তাকে বাড়ি নিয়ে গেছেন।

এভাবেই সে বিশ্বহরিগাছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গত ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৩.৫৫ পেয়েছে। এবার জিপিএ ২.৭৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেছে। তবে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তাকে লেখাপড়া করাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবুও মেয়ের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নাইচের চিকিৎসার জন্য অনেক ডাক্তার ও কবিরাজের কছে গিয়েছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে তাকে সুস্থ করতে পারেননি।

নাইচ খাতুন বলেন, আমি কারো মাথায় বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। তাই ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল নিয়ে বাম হাত দিয়েই শিক্ষা জীবন শুরু করি। এবার এইচএসসি পাস করেছি। এভাবেই কষ্ট করে লেখাপড়া করে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই।

বিশ্বহরিগাছা বহালগাছা বহুমুখি মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রঞ্জন কুমার চক্রবর্তী বলেন, প্রতিবন্ধী হওয়ায় আমরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছি।

বিএ-১৯/১৭-০৭ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)