অন্তঃসত্ত্বা রোগীর পেটে ‘লাথি মারলেন’ ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা!

অন্তঃসত্ত্বা

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দেড় মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক রোগীর পেটে লাথি মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে রোগীর স্বামী-স্বজন এবং পুলিশকেও মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার রাত ৯টার দিকে হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় আজ রোববার সকালে হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, অন্তঃসত্ত্বা ওই নারী নাম জয়নব বেগম। তিনি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা নন্দগ্রাম এলাকার আসলাম আলীর স্ত্রী। তারা বগুড়া শহরের কামারগাড়ি এলাকায় বসবাস করেন।

আসলাম আলী জানান, তার স্ত্রী জয়নব বেগম ছয় সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। পেটে ব্যথাজনিত সমস্যায় গত বুধবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্ত্রীর রক্তক্ষরণ হওয়ায় অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিল। চিকিৎসকদের বিষয়টি জানালেও তারা আমলে নিচ্ছিলেন না।

গতকাল দুপুরে স্ত্রীর অবস্থার অবনতি হলে আবার তিনি চিকিৎসকদের কাছে যান। কিন্তু চিকিৎসকেরা সমস্যা খতিয়ে না দেখে উল্টো বাগবিতণ্ডা শুরু করেন। চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি মুঠোফোনে ভিডিও করায় চিকিৎসকদের হুমকিতে হাসপাতাল ছেড়ে চলে আসতে হয় তাকে। পরে স্ত্রীকে সেখান থেকে বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করাতে চাইলেও চিকিৎসকেরা ছাড়পত্র দিতে অস্বীকৃতি জানান।

এরপর মুঠোফোনে থাকা ওই ভিডিও মুছে ফেলতে চিকিৎসকেরা কৌশলে রাতে তাকে হাসপাতালে ডাকেন। সেখানে যাওয়ার পর চিকিৎসকদের কক্ষে আটকে রেখে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এ সময় তার ছোট ভাই বাঁচাতে এলে তাকেও পেটানো হয়।

আসলাম আলী অভিযোগ করেন, ‘আটকে রাখার খবর পেয়ে আমার স্ত্রী সেখানে ছুটে এলে তাকেও মারধর করা হয়। মারধরের এক পর্যায়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা আমার স্ত্রীর তলপেটে লাথি মারলে তার রক্তক্ষরণ বেড়ে যায়। এ সময় পুলিশ এলে তারাও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হামলার শিকার হন। পরে সেখান থেকে কোনোরকমে বের হয়ে রাতেই শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে স্ত্রীকে ভর্তি করিয়েছি।’

মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাকিবুল ইসলাম জানান, তিনি খবর পেয়ে হাসপাতালে যান। গিয়ে দেখেন, আসলাম ও তার স্ত্রীকে মারধর করা হচ্ছে। পুলিশ তাদের বাঁচাতে গেলে চিকিৎসকরা তাকেও কিল-ঘুষি ও লাথি মারেন। ওই সময় আসলামের সঙ্গে থাকা টিএসআই আশরাফুল, কনস্টেবল শরীফকেও মারধর করেন চিকিৎসকরা।

এ বিষয়ে হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ রোগীর পেটে লাথি মেরে আহত করার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, রোগীর অবস্থা উন্নতি হলেও ওই রোগীর স্বামী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রোগীদের উসকে দিয়ে কয়েকজনের বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করেন। পরে তা অনলাইনে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। রাত ৯টার দিকে আবার কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে এসে চিকিৎসকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান।

একপর্যায়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে তার ধস্তধস্তি হয়। সেখানে সাদাপোশাকে পুলিশ এসে রোগীর পক্ষ নিলে তাদের সঙ্গেও কথাকাটাকাটি হয়। পরে ওই রোগীর ছাড়পত্র নিয়ে তার স্বজনরা বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করান। তারপরও পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শজিমেক ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। কিন্তু ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কেউই রোগীকে মারধর করেনি। তবে রোগীর স্বামী ও তার দলবলের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতাহাতি হয়েছে।

পুলিশের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ বলেন, হাসপাতালে রোগীর স্বজনের ওপর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল। এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা পুলিশের সঙ্গেও বাগবিতণ্ডায় জড়ান। তবে বিষয়টি মিটমাট হয়ে গেছে।

এসএইচ-২৩/২২/২১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)