যুবকের কব্জি কাটায় রিমাণ্ডে চেয়ারম্যান ফয়েজ

রুবেল নামে এক যুবকের দুই হাতের কব্জি কাটার ঘটনার রিমাণ্ডে নেয়া হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফয়েজ উদ্দিনকে।

এ সংক্রান্ত মামলার প্রধান আসামি তিনি। শুক্রবার তার চার দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন আদালত। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে তার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে থানায়।

নওগাঁ পালিয়ে যাওয়ার সময় বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমনুরা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এনিয়ে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করলো পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলেন- প্রধান আসামি উজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফয়েজ উদ্দিন (৩৫), তার সহযোগী তারেক আহমদ (৩৫), জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) ও আলাউদ্দিন (৩৫)।

শিবগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) আতিকুল ইসলাম জানান, গ্রেফতার ফয়েজ চেয়ারম্যান কব্জি কাটার ঘটনা স্বীকার করেছেন। শুক্রবার বিকেলে গ্রেফতারদের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে এ ঘটনায় আহত রুবেলের মা রুলিয়ারা বেগম বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে শিবগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় নামীয় আসামি করা হয়েছে পাঁচজনকে এবং অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৫-৬ জনকে।

শিবগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) আতিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার দুপুরে গ্রেফতার ফয়েজ চেয়ারম্যানকে নিয়ে রুবেলের ফেলে দেয়া কব্জি উদ্ধারের জন্য ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়। কিন্তু কব্জি দুটি নদীতে ফেলে দেয়ায় তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ কব্জি উদ্ধারে কাজ করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা গ্রামের মৃত খোদাবক্সের ছেলে রুবেলের চাচাতো ভাই আব্দুস সালামের সঙ্গে শিবগঞ্জের উজিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ নেতা ফয়েজ উদ্দিনের নদীর ঘাট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে।

এর জের ধরে বুধবার রাতে রুবেলকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে গিয়ে ফয়েজ চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে তার ক্যাডাররা রুবেলের দুই হাতের কব্জি কেটে দেয়। রুবেল স্থানীয় যুবলীগ নেতা এবং আমের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলেও তার চাচাতো ভাই আব্দুস সালামের ব্যবসা দেখাশুনা করার অপরাধেই তার হাতের কব্জি কেটে নেয়া হয়েছে।

এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান এডু বলেন, বুধবার রাত দেড়টার দিকে তিনি বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় এমপি ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলকে জানান।

এ সময় এমপি ডা. শিমুল জানান, ফয়েজ চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার কথা হয়েছে এবং তিনি রুবেলকে ছেড়ে দেবেন। কিন্তু রাত দুইটার দিকে রুবেলের দুই হাতের কব্জি কেটে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে এমপি ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, ফয়েজ চেয়ারম্যান যে অপরাধ করেছে, তা ক্ষমার অযোগ্য। এজন্য তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

অন্যদিকে রুবেলের চাচাতো ভাই ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালাম বলেন, তার চাচাতো ভাই রুবেল এলাকায় একজন ভদ্র ছেলে হিসেবে নাম ডাক রয়েছে। উজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফয়েজ যে অন্যায় করেছে তার বিচার চাই।

অপরদিকে উজিরপুর ইউনিয়নে গিয়ে জানা যায়, ফয়েজ উদ্দিন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এমনকি মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে একাধিক মাদক ও অস্ত্র মামলা রয়েছে।

এছাড়াও ফয়েজ চেয়ারম্যান নিজ জমিতে একটি ভবন গড়ে তুলে সেখানে তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে টর্চার সেলসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছেন। এমনকি গরু ছিনতাই তার নিত্যদিনের কর্মে পরিণত হয়েছে।

এ ব্যাপারে উজিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. দুরুল হোদা জানান, দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ফয়েজ উদ্দিন নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হওয়ার পর বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।

তিনি ইউনিয়ন পরিষদের কাজ তার নিজস্ব জমিতে গড়ে ওঠা ভবনে চালান। বর্তমানে তার দাপটে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হলেও এতদিন ভয়ে কেউ মুখ খোলেনি।

বিএ-২৩/২০-০৯ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)