নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্প থেকে সরকার পতনের ডাক

নৌকার প্রধান নির্বাচনী ক্যাম্প থেকে সরকারকে স্বৈরাচার অ্যাখ্যা দিয়ে এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের ডাক দেন রফিক মোল্লা নামে এক ইউপি সদস্য।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন নির্বাচনে স্থানীয় চরবাগডাঙ্গা হাটে নৌকার প্রধান নির্বাচনী অফিসে প্রচারণা সভায় দেওয়া এমন একটি বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, ভুলবশত সরকারের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে বর্তমান চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ করে কথাগুলো বলা হয়েছে।

৪২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, রফিক মোল্লা হ্যান্ড মাইক নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। এসময় তিনি উপস্থিত সকলের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ আমাদের এক দফা এক দাবি, স্বৈরাচার সরকার তুই কবে যাবি। স্বৈরাচার চেয়ারম্যান তুই কবে যাবি। এটা আমাদের শ্লোগান থাকবে।’

এসময় উপস্থিত মানুষের প্রশ্ন রেখে বলেন, কয় দফা? জিজ্ঞেস করেন তিনি। উপস্থিত মানুষ উচ্চ স্বরে উত্তর দেন ‘এক দফা’।

রফিক মোল্লা আবার বলেন, আগামী ৫ই জানুয়ারি আমরা প্রমাণ করে দিব, আপামর জনতা কৃষক শ্রমিক জনতা, দোকানদার থেকে পানওয়ালা, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধা মা-বৃদ্ধ পিতা সবারই একটি কথা, হটাও সন্ত্রাস বাঁচাও দেশ। এদেশে সন্ত্রাস আর কেউ দেখতে চাই না বলে দিক-দিগন্তে জন রব উঠেছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় চরবাগডাঙ্গ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ওমর আলীর সঙ্গে। তার প্রধান নির্বাচনী অফিসে বক্তব্য দেওয়া ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে তিনি জানান, ওই ব্যক্তির নাম রফিক মোল্লা। বর্তমানে সে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। রফিক মোল্লার রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এদিকে এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ওমর আলী নৌকা প্রতীক পেলেও একমাত্র তার ভাই লতিফ ছাড়া ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনরা অধিকাংশই সক্রিয়ভাবে জামায়াতে ইসলামী করেন। তাই জামায়াত নেতাকর্মীরাই এখন নৌকার ভোট করছেন। ওমর আলীর নির্বাচনী সভায় সরকার পতনের ডাক দেওয়া রফিক মোল্লাও কট্টর জামায়াত। স্বভাবতই সে সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রফিক মোল্লা জামায়াত নেতা। বর্তমানে জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য চরবাগডাঙ্গা ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার পক্ষে কাজ করছেন।

চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জামিরুল ইসলাম রফিক মোল্লার পরিচয় উল্লেখ করে জানান, সে আগে জামায়াতের ভোট করেছে। তবে জামায়াতের সংগঠনে তার কোনো পদ নাই। দীর্ঘদিন থেকে সে আওয়ামী লীগ করে।

ভিডিওর বিষয়ে তিনি বলেন, আমার জানা মতে রফিক মোল্লা সরকারের বিপক্ষে বলেনি। সে বর্তমান চেয়ারম্যানকে স্বৈরাচারী বলতে গিয়ে ভুল করে সরকারকে বলে ফেলেছে। বর্তমান চেয়ারম্যান শহিদ রানা এলাকার কোন উন্নয়ন করেনি বলে তার অভিযোগ। এই ক্ষোভ থেকে সে কথাগুলো বলেছে। তবে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছে সেটা আমার জানা নেই।

তবে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদ রানা বলেন, আমার আমলে সরকারি অনুদান সহায়তা যা এসেছে তার মেম্বারদেরকে আনুপাতিকহারে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কারো শক্তি নেই বলতে পারে যে, সরকারি অনুদান ও সাহায্যের একটি টাকাও আমি পকেটে ভরেছি। আমি সাধ্যমতো এলাকার উন্নয়ন করেছি।

শহিদ রানা আরও দাবি করেন, তার বাপ দাদারাই আদি আওয়ামী লীগ। বরং ওমর আলীর পুরো জেনারেশন বিএনপি ও জামায়াত করেন। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন। তারা আমার মোটরসাইকেল প্রতীকের জন্য ভোট করছেন।

এসএইচ-২৮/২৪/২১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক, সূত্র: সময়)