ধর্ষণ বাড়ছে, দায়ি কে?

কোন শিশু রেপ্ট হচ্ছে। নিউজ পেপারের পাতা গুলোতে এটা যেন প্রতিদিনের রুটিন মাফিক খবর হয়ে দাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত যত গুলো নিউজ পড়লাম সব গুলো মেয়ের বয়স ১২ বছরের নিচে। আর যারা রেপিস্ট তাদের বয়স ৪০ এর উপরে। এর জন্য দায়ী কে? মানুষ কেনো তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে একটা শিশুর উপর ঝাপিয়ে পড়ে তার শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্য? শারীরিক চাহিদা বয়স হলে যদি কম হয়, তবে রেপিস্টরা সব ৪০ বছরের উর্দ্ধে কেনো? মনোবিজ্ঞানীরা কি বলেন? এ নিয়ে আমি তেমন জানি না। তবে প্রতক্ষ্য পরোক্ষ্য ভাবে আমরা কি দায়ী না?

একজন ছেলের যখন বিয়ের বয়স হয়। তখন তাকে বিয়ে দেওয়া হয় ঠিকই। কিন্ত বিয়ের পরের দিন থেকেই বাবা- মা এবং পরিবার পরিজন দিন গুনতে থাকে কখন তারা দাদা- দাদী, নানা-নানী হবেন।সময় যত পার হবে তাদের আকাঙাখা আরো বেড়ে যায়। দেরি হলে ছেলের বউ এবং ছেলেকে কথা শুনতে হয় সবার। একটা ছেলে/ মেয়ে বিয়ে মানে বাচ্চা জন্ম না শুধু। তাদের দুইজন দুইজনকে জানা বোঝা, তাদের শারীরিক মানষিক চাহিদা পূরনের অবল্বন। কিন্তুু তা পুরন হয় কয়জনের আমাদের সমাজে? চেনা জানা আর চাহিদা পূরনের আগেই মেয়েটা হয়ে যায় মা। আর ছেলেটা হয়ে যায় বাবা।

বিয়ের এক বছর না যেতেই পরের বছর তাদের মাঝে চলে আসে নতুন আরেকজন। তখন মেয়েটা পালন করে মার দায়িত্ব্। আর ছেলেটা বাবার। নতুন শিশুর আগমনে তারা সাময়িক সময়ের জন্য ভুলে যায় তাদের শারীরিক চাহিদা। সুপ্ত থেকে যায় তাদের চাওয়া গুলো কারো তা সময়ের সাথে সাথে পূরন হয়, কারো তা থেকে যায় অপূরন। এই না পাওয়া গুলো তিলে তিলে রূপ নেয় ভয়ঙ্কর। কেউ কেউ জড়িয়ে যায় পরোকিয়া সম্পর্কে। আর যারা তা করতে পারেনা তারা নিজের ভেতর নিজেকে দমিয়ে রাখেন। একটা সময় নিজের সুবিধা মত সুযোগ পেলে তার আকাঙ্খা গুলো রূপ নেয় ভয়ঙ্কর ভাবে। তখনি হয়ে যায় কেও কেও রেপিস্ট। তখন হিতাহিত জ্ঞানের পরিমান হয়ে যায় শূন্য। আমাদের সমাজে কতজন পুরুষ / মহিলা শারীরিক সম্পর্কে সুখি? নিজেরা নিজেকে জিজ্ঞাসা করলেই হয়ত অনেকের উওর হবে সে সুখি না।

২৫ বছরের আগে পর্যন্ত মানুষ বুঝতে পারেনা তার পছন্দ, অপছন্দটা কি? কারন প্রতিটা বছর তার পছন্দ পাল্টে যায়। বয়সের সাথে তার পরিবর্তন ঘটে পছন্দের। তাই একজন ছেলে/ মেয়ে ২৫ বছরের পরে ভালো লাগার মানুষকে বেছে নেওয়া উচিত। কারন ২৫ বছর বয়সে মনটা স্হীর হয়, সে বুঝতে পারে তার মনের চাহিদা। আমাদের সমাজে বিয়েটা অনেক সময় এই চাহিদা বুঝার আগেই হয়ে যায়। যার কারনে ৩০ বছর পার করার পর যখন সে বুঝতে পারে তার পছন্দ অপছন্দ, তখনি শুরু হয়ে যায় সংসারে অশান্তি। কেউ কেউ সমাজের জন্য তা মেনে ঠিকই। কিন্তুু সমাজ আর লোকচক্ষুর আড়ালে নিজের চাহিদা পূরনের আলাদা জগত তৈরী করে নেয়।

আমাদের নিজেদেরকে আগে বুঝতে হবে আমাদের চাওয়া পাওয়া কি? খালি জায়গা যখন থাকে তা পুরনের চেষ্টা সবাই করে। তা হয়ত কারো জন্য সুখের কারো জন্য কস্টের। আমাদের সমাজের মেয়ে / ছেলে কেউই আসলে সুরক্ষিত না। যতদিন আমরা আমাদের নিজেকে চিনতে না পারবো, এ ধরনের চাহিদা পূরনের লোকগুলো কাউকেই ছাড় দিবে না। মেয়ে শিশুকে করবে রেপ্ট আর ছেলেদের করবে বলাতকার। এর সমাধান কিসে? নতুন বউ,- বরকে সমাজের জন্য- পরিবারের জন্য না বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করতে হবে নিজেদের জন্য। আর নিজেদের চাওয়াগুলোর জন্য।

আমরা সবাই এসব ঘটনার জন্য পরোক্ষ্ ভাবে দায়ী, রেপিস্ট তৈরী করি আমরাই। সচেতনতা বাড়িয়ে দিতে হবে সমাজের নিজের। আর একজন রেপিস্টকে জনসম্মূখে শাস্তি দিলে তখন এসব মানুষরূপি অমানুষ গুলো তার চাহিদা গুলো পূরনের জন্য তার ঘরমুখি হবে। তার জন্য প্রয়োজন তার জীবন সঙ্গীনির সহযোগিতা। আমরা দিন দিন ভালোবাসতে ভুলে যাচ্ছি ” ভালোবাসা” কথাটি কেবল মাএ শব্দই হয়ে যাচ্ছে। সম্পর্ক গুলোর মান থাকছেনা। থাকছেনা সম্মান। যার জন্য এসব অঘটন ঘটছে প্রতিনিয়ত।

এসএইচ-৩৯/০৪/১৯ (নারগিস পারভিন সোমা। লেখক : রাজশাহী চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ও আন্তর্জাতিক চিত্রশিল্পি)