“আমাদের বাবা মা আমাদের কে নিয়ে সত্যি খুব ভাবেন “

আমি এখন যেই কথাগুলো লিখছি তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা নাও পেতে পারে।

আমি গ্রামে গেলে অনেক মামা চাচা বলেন, বাবা দেখোনা একটু চেষ্টা করে, যতো টাকা লাগে দিবো আমার ছেলেটার তবুও একটা সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দাও। হোক সেটা পিয়নের চাকরি। তবুও মাস শেষে বেতনের টাকাটা নিয়ে তো আর টেনশন করতে হবেনা , নিশ্চিত ভবিষ্যত।

আবার অনেকেই আছে যার সন্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর পর অন্যের কৃষি ফার্মে কাজের জন্য এর ওর হাত পা ধরে বেড়ান। প্রথমে বেতন কম দিবে দিক , কাজ শিখলে পরে বেশি পাওয়া যাবে , তবুও চাকরি তো।

অনেকের সন্তান ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা পর পর ই বাবা মা অন্যের আইটি ফার্মে ঢুকানোর জন্য যোগাযোগ শুরু করে দেন ।

আর বিবিএ, এমবিএ পাশ করা স্টুডেন্টের কথা আর কি বলবো । এরা পাশ করার পর তো চাকরির অভাব নেই , যেকোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাত্র ১০০০০ টাকার চাকরিতো রেডি থাকে এর ওর রেফারেন্সের ,মাধ্যমে, যদিও সেই প্রতিষ্ঠানে এইচ এস সি পাস টেলিফোন অপারেটর বা ড্রাইভার ১৮/২০ হাজার বেতন পান।

উপরের দৃশ্যগুলো কিন্তু আপনার আমার খুব চেনা বা দেখা।

একটা বার চিন্তা করেন বাবা তার সন্তান এর পিছনে লক্ষ লক্ষ টাকা ঢালছেন ছেলেকে বড় সাহেবের চাকর বানানোর জন্য ।

আবার কোন কোন বাবা তো ২০/৩০ লক্ষ টাকা নিয়ে বসে থাকেন ছেলেকে পুলিশের এএসআই এর চাকরি নিয়ে দেবার জন্য , কারন তিনি খুব ভালো করেই জানেন যে চাকরি পেলেই এই টাকা তুলতে ছেলের সর্বোচ্চ এক বছর সময় লাগবে। আর চাকরি জীবনে যা কামাবেন তা দিয়ে পরবর্তী ৫ প্রজন্ম বসে খেতে পারবে।

আবার আরেকটি বিষয় খেয়াল করবেন ইদানিং বাবা মায়ের ভিতরে একটা অনুভুতি কাজ করে , সন্তান চাকরি না করলে নাকি সমাজে তারা মুখ দেখাতে পারেন না । তাই তাদের সন্তানের চাকরি করতেই হবে, এতে সন্তানের জীবন থাকুক আর নাই থাকুন , সে চাকরি ছোট হোক বা বড় সেটা বড় বিষয় না , ছেলে আমার চাকরি করে ।

আপনি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খেয়াল করে দেখবেন যে বাবা মা ১০/১৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে ছেলেকে পিয়নের চাকরি নিয়ে দিচ্ছে কিন্তু কখন ২ লক্ষ দিয়ে বলবেনা যে, বাবা তুই বিজনেস শুরু কর, যা লাগবে আমি দেখছি,

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছেলে পাশ করার সাথে সাথে বড় কোম্পানির কৃষি ফার্মে চাকরি তে জয়েন করার জন্য উঠে পড়ে লাগবে কিন্তু কখনও উৎসাহ দিয়ে বলবেনা যা নিজেই একটা কৃষি খামার গড়ে তোল আমরা তোকে সাহায্য করছি।

প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর ছেলে কে বলেনা যে নিজেই একটা আই টি হাব কর আমরা তোকে সব কিছু দিয়ে সাহায্য করছি ।

অথবা বি বি এ, এম বি এ পাশ করার পর বাবা মা বলবেনা যে নিজেই একটা ইকমার্স বিজনেস শুরু কর আমরা তোকে সাহায্য করছি ।

জানেন কেন তারা এসব ক্ষেত্রে এগিয়ে আসেনা । কারন তারা ভয় পায় , যদি ছেলে বিজনেসে লস খায় , যদি সে না পারে তাহলে সব শেষ । কিন্তু তারা জানেনা যে, তার সেই সন্তান অন্যের প্রতিষ্ঠানে না পারা সব কাজ করে চলেছে দিন রাত্রি।তারা বুঝতেই পারছেনা যে তাদের সন্তানের সবচেয়ে মুল্যবান সময় ও মেধা খুব অল্প টাকায় অন্যের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য বিক্রি করে দিচ্ছে । যদি সেই ছেলে বা মেয়ে তার মেধা আর সময় নিজের প্রতিষ্ঠনের পিছনে খরচ করতো তাহলে যেমন সে এগিয়ে যেতো ঠিক তেমনি পরবর্তী প্রজন্ম এর সুফল পেতো । আর এখন সেই সুফল পাচ্ছে অল্প টাকায় শ্রম কিনে নেয়াা সেই প্রতিষ্ঠান।

নিজের ছেলে যদি একটা গার্মেন্টস এর দোকান দিয়ে জামা কাপড় বিক্রি করা শুরু করে তাহলে নাকি বাবা মা পরিবারের সম্মান থাকেনা সমাজে, সবাই ছি ছি করে , বলে যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে ছেলে এখন কাপড় বিক্রি করে বা মেয়ে একটা বুটিকের শো রুম দিলে বলে মেয়ে কে শিক্ষিত করছো এইসব দোকানদারি করানোর জন্য । অথচ ঐ ছেলে মেয়েই যদি অন্যের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেলসে কাজ করে তখন নাকি বাবা মায়ের গর্বের শেষ থাকেনা বলে ছেলে আমার মস্ত বড় কোম্পানিতে সেলস এক্সিকিউটিভ। ছেলে আমার চাকরি করে। বিয়ের বাজারে সেই দাম । মেয়ে দেখার সিরিয়াল দিয়ে শেষ করতে পারছেন না ।

আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখি লেখা পড়ার শেষ করার পর ভবিষ্যৎ নিয়ে হায়- হুতাশ করে , এখন কি করবো , কোথায় যাবো, কোন চাকরি করবো, কে আমাকে চাকরি দেবে , আমাদের তো কেউ নেই ব্লা ব্লা ব্লা। এটা একটা কমন সাইকোলজি আমাদের সমাজের । কিন্তু এই চিন্তা বা ভাবনা টা যদি হাই স্কুল থেকেই আপনার সন্তানের সাথে শেয়ার করেন , তার ভালো লাগা মন্দ লাগা যদি আপনি বুঝতে পারেন এবং সামনের দিনগুলো তার জন্য কতটা কঠিন সময় আসছে সে সম্পর্কে সচেতন করেন , তার ভাল লাগা বা স্বপ্নের কাংখিত লক্ষ্যে পৌছাতে সাহায্য করেন তাহলে কিন্তু এই সময়ে এসে হায়-হুতাস করতে হয়না বা লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে ঘুষ দেবার জন্য দৌড়াতে হয়না ।

বেশির ভাগ সময় ই দেখা যায় যে যখন বাবা মার সময় দেয়ার কথা ছিল সন্তান কে সেই সময় তারা সময় দিয়েছেন তাদের পরিবার পরিজন, আত্বীয় স্বজন,বন্ধু বান্ধব, কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি ইত্যাদি তে ।

সর্বশেষ শুধু সব বাবা মা কে বলব শুধু চাকরীজীবির বাবা মা না হয়ে চাকরী দাতার বাবা হবার চেষ্টা করুন।

আপনি আমার কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন ।

এসএইচ-০১/০৯/২২ (তানভীর, লেখকের নিজস্ব মতামত)