ভারতের ধর্মশালায় গত ৭ অক্টোবর মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। ওই ম্যাচে স্পিনারদের রাজত্বের দিনে ৬ উইকেটের বড় জয় তুলে নিয়েছিল লাল-সবুজেরা। ধারণা করা হচ্ছিল, একই মাঠে ১০ অক্টোবর ইংল্যান্ডের সঙ্গে আধিপত্য বিরাজ করবে বাংলাদেশের স্পিন ইউনিট। তবে সমর্থকদের হতাশায় ডুবিয়ে টাইগাররা উল্টো উপহার দিয়েছে ১৩৭ রানের বড় পরাজয়।
ইংলিশ পরীক্ষায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের হারের পেছনে পাঁচটি কারণ খুঁজে পাওয়া যায়।
একাদশে বাড়তি স্পিনার : আগের ম্যাচে স্পিনারদের দাপটের সুবাদে এই ম্যাচে জেনুইন একজন ব্যাটারকে বসিয়ে একাদশে একজন বাড়তি স্পিনার যোগ করেছিল বাংলাদেশ। যা দিনশেষে বাংলাদেশের হারের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, বাংলাদেশের বিপক্ষে দাপট দেখিয়েছে ইংল্যান্ডের পেসাররা। বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার দিনে ৮ উইকেটই নিয়েছে ইংলিশ পেসাররা। আর বাংলাদেশের পেসাররাও নিয়েছে ৪ উইকেট। তাই পিচ বিবেচনায়, ভালো সুবিধা পেয়েছেন পেসাররা। যে কারণে স্পিন অলরাউন্ডার মঈন আলিকে বসিয়ে রেখে চতুর্থ পেসার হিসেবে রিচ টপলিকে দলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল ইংল্যান্ড।
ডাগআউটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : গত দুই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সঙ্গে জিতেছে বাংলাদেশ। এবার সুযোগ ছিল তৃতীয়বারের মতো জয় ছিনিয়ে নিয়ে সেমির দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার। তবে এই ম্যাচের একাদশে জায়গা হয়নি অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। যা বাংলাদেশের হারের আরও এক কারণ। পরিসংখ্যান বলছে, বরাবরই ইংলিশদের সঙ্গে ভালো ব্যাটিং করেছেন রিয়াদ। আর বিশ্বমঞ্চে ইংল্যান্ডের সঙ্গে দুই জয়েও অবদান আছে তার। রিয়াদের পরিবর্তে যাকে একাদশে নেওয়া হয়েছে, সেই শেখ মেহেদী ৭১ রান খরচায় ৪ উইকেট পেলেও ব্যাট হাতে ছিলেন প্রায় ব্যর্থ। আর মেহেদীর উইকেট উদযাপনের মুহূর্তে ৩০০ পেরিয়ে যায় ওয়ানডে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
পিচ বিবেচনায় ভুল : পিচ চিনতে বাংলাদেশ ভুল করেছে, সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন ইংলিশ ব্যাটার। ঠিকই তাই; কেননা, ম্যাচের আগে ধর্মশালার পিচে তীক্ষ্ণ নজর ছিল বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের। ঘুরেফিরেই বিষয়টি দেখছিলেন তারা। তবে ইংলিশদের ব্যাটিং দেখে মনে হতেই পারে, লাল-সবুজের সিদ্ধান্ত ভুলই ছিল। কারণ, স্পিন ভাবনার পিচ বনে গেল ব্যাটিং পিচ। যেখান থেকে শুরুর দিকে কোনোভাবেই সমীহ আদায় করতে পারেনি মোস্তাফিজ-তাসকিনরা।
ওপেনিং জুটি : আফগানদের বিপক্ষে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিলেন লাল-সবুজের দুই ওপেনার তানজিদ ও লিটন। ইংলিশদের বিপক্ষে লিটন রান খরা কাটালেও ব্যর্থতার বৃত্তেই কাটা পড়েন তরুণ ওপেনার তানজিদ। যা বাংলাদেশের ম্যাচ হারের অন্যতম কারণ। ম্যাচ শেষে টাইগার অধিনায়ক সাকিবও বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন।
বোলারদের দায়িত্বশীলতার অভাব : ম্যাচের শুরু থেকেই আগ্রাসী ছিলেন ডেভিড মালান থেকে জনি বেয়ারস্টো। বিপরীতে ভয়ে ভয়ে ব্যাট চালিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। আর দায়িত্ব নিয়ে বল করতে পারেননি লাল-সবুজের বোলাররা। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধান কোচ হাথুরুর হারের দায় বোলারদের ওপরই চাপিয়েছেন। তার মতে, ফর্মেই আছেন ব্যাটাররা। আর বুদ্ধি কাটিয়ে বল না করতে পারায় ব্যর্থ বোলাররা।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) হিমাচল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৬৪ রান তুলে ইংল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৪০ রান করেন ওপেনার ডেভিড মালান। এ ছাড়া জনি বেয়ারস্টো ৫২ ও জো রুট ৮২ রান করেন। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট শিকার করেন শেখ মাহেদী।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ৪ উইকেট হারিয়ে খাঁদের কিনারায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে টাইগাররা। কিন্তু দুজনেই ফিফটির পর আউট হয়ে যান। ফলে ৪৮ দশমিক ২ ওভারে ২২৭ রান তুলে অলআউট হয় বাংলাদেশ। যেখানে সর্বোচ্চ ৭৬ রান এসেছে লিটনের ব্যাট থেকে। আর মুশি করেন ৫১ রান।
এসএ-০৬/১০/১১(স্পোর্টস ডেস্ক)