বিশ্বকে অবাক করেছে বিশ্বকাপের আরও ১০ বড় অঘটন

রশিদ খানদের বিপক্ষে হার ভুলে যেতে চাইবে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। বিশ্বকাপে একাধিক বার ক্রিকেটবিশ্বের তথাকথিত ছোট দলগুলি হারিয়ে দিয়েছে বড়দলগুলোকে। গতকাল যেমন ‘ডেভিড’ হয়ে উঠলেন রশিদরা, তেমনই বিভিন্ন সময়ে শক্তিশালী দলগুলির বিপক্ষে জয় পেয়েছে তথাকথিত ছোট দলগুলি। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমনই ১০টি ম্যাচ।

আয়ারল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০১৫ বিশ্বকাপ

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড আয়োজিত ২০১৫ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ড শুরুই করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে। চার উইকেটে জিতেছিল উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডের আয়ারল্যান্ড। যদিও তিনি মনে করেন না যে, এই জয় কোনও অঘটন ছিল । ৮৭ রানে চার উইকেট হারিয়েছিল ক্যারিবিয়ান দল। যদিও সেখান থেকে লেন্ডল সিমন্সের শতরানে ৩০৭ রান তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২৫ বল বাকি থাকতে জয়ের রান তুলে নেয় আয়ারল্যান্ড। পল স্টার্লিং (৯২) এবং এড জয়েস (৮৪) ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছিলেন।

বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান, ১৯৯৯ বিশ্বকাপ

সেই সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বে সবে পা রেখেছে। টেস্ট স্ট্যাটাসও পায়নি তখনও। ওই সময় বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়েছিল টাইগাররা। প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ২২৩ রান তোলে বাংলাদেশ দল। সেই রান তাড়া করতে নেমে ৪২ রানে ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তান। তখনই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, পাকিস্তানের পক্ষে ম্যাচ জেতা কঠিন হবে। সেই আশঙ্কা সত্যি করে ১৬১ রানে শেষ হয়ে যায় পাকিস্তান। তাতে যদিও সাকলিন মোস্তাকদের সেমিফাইনালে ওঠা আটকায়নি।

বাংলাদেশ বনাম ভারত, ২০০৭ বিশ্বকাপ

শুধু পাকিস্তান নয়, ভারতের বিপক্ষেও বিশ্বকাপের মঞ্চে জয় আছে বাংলাদেশের। সেবার শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং বারমুডার সঙ্গে এক গ্রুপে ছিল ভারত। প্রথম ম্যাচেই ভারত হেরে যায় বাংলাদেশের কাছে। মাত্র ১৯১ রানেই গুটিয়ে যায় রাহুল দ্রাবিড়ের ভারত। সেই সময় তরুণ মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ৫৬ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ জিতিয়েছিল টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে। সেই হারের ধাক্কায় ভারত সে বার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়।

জিম্বাবুয়ে বনাম ভারত, ১৯৯৯ বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপের মঞ্চে জিম্বাবুয়ের কাছেও হারতে হয়েছে ভারতকে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২৫২ রান তোলে জিম্বাবুয়ে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভারতের শেষ দু’ওভারে দরকার ছিল ৯ রান। কিন্তু ২৪৯ রানে অল আউট হয়ে যায় টিম ইন্ডিয়া। হেনরি ওলঙ্গা ম্যাচ জিতেছিলেন ৩ রানে নিয়ে।

জিম্বাবুয়ে বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, ১৯৯৯ বিশ্বকাপ

বড় দলকে হারানো অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছিল জিম্বাবুয়ে। ভারত ছাড়াও সেবার তারা হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। প্রথমে ব্যাট করে জিম্বাবুয়ে ২৩৩ রান করেছিল। দেশটির নিল জনসন হয়ে উঠেছিলেন নায়ক। ব্যাট হাতে ৭৬ রান করেছিলেন তিনি। বল হাতেও ছিলেন বিধ্বংসী মেজাজে। নতুন বলে জনসন এবং হিথ স্ট্রিক নাড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রোটিয়াবাহিনীকে। ১৮৫ রানে শেষ হয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।

কেনিয়া বনাম শ্রীলঙ্কা, ২০০৩ বিশ্বকাপ

২০০৩ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলেছিল কেনিয়া। বড় দলের বিপক্ষে তারা একের পর এক অঘটন ঘটিয়েছিল। সেই সময় শ্রীলঙ্কা ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী দল। কেনিয়াকে মাত্র ২১০ রানে শেষ করে দেয়ার পরেও হেরে যায় সনৎ জয়সুরিয়ারা। কেনিয়ার কলিন ওবুয়া ১০ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ৫ উইকেট তুলে নেন। ১৫৭ রানে অল আউট হয়ে যান কুমার সঙ্গকারারা।

আয়ারল্যান্ড বনাম পাকিস্তান, ২০০৭ বিশ্বকাপ

ক্রিকেট বিশ্বে আয়ারল্যান্ড নিজেদের পরিচয় তৈরি করেছিল ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে। পাকিস্তান প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৩২ রানে থেমে যায়। আইরিশ পেসারদের সামলাতে পারেননি পাক ব্যাটাররা। বৃষ্টির জন্য সেই রানের লক্ষ্য কমে হয় ১২৭ রান। ৩ উইকেট হাতে নিয়ে ম্যাচ জিতে নেয় আয়ারল্যান্ড। যদিও সেই ঘটনাকে ছাপিয়ে যায় পরের দিন পাকিস্তানের কোচ বব উলমারের মৃত্যু।

জিম্বাবুয়ে বনাম অস্ট্রেলিয়া, ১৯৮৩ বিশ্বকাপ

১৯৮৩ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছিল জিম্বাবুয়ে । প্রথম ম্যাচেই সামনে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া। যে দলে ছিলেন ডেনিস লিলি এবং জেফ থমসনের মতো ক্রিকেটার। তরুণ অ্যালান বর্ডারও তখন দলে। সেই ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ে এক সময় ৯৪ রানে ৫ উইকেট হারায়। সেখান থেকে অধিনায়ক ডানকান ফ্লেচারের ব্যাটে ভর করে ২৩৯ রান তোলে জিম্বাবুয়ে। অস্ট্রেলিয়া শেষ হয়ে যায় ২২৬ রানে। হাতে উইকেট থাকলেও ওভার শেষ হয়ে যায় অজিদের।

কেনিয়া বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৯৯৬ বিশ্বকাপ

নিপুণ বোলিংয়ের দাপটে সেবার ক্যারিবিয়ান দৈত্যদের হারিয়ে দেয় কেনিয়া। প্রথমে ব্যাট করে কেনিয়া মাত্র ১৬৬ রান করে। এর মধ্যে ৩৭ রান অতিরিক্ত পেয়েছিল তারা। সেটাই কাল হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। মাত্র ৯৩ রানেই ইনিংস শেষ হয়ে যায় ব্রায়ান লারাদের। বিশ্বকাপে সেটাই ক্যারিবিয়ানদের সব থেকে কম রানের ইনিংস।

ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৯৮৩ বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপের ইতিহাসে সব থেকে বড় অঘটন ঘটিয়েছিলেন কপিল দেবরা। বিশ্বকাপের ফাইনালে তারা হারিয়ে দিয়েছিলেন দু’বারের বিশ্বজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। সেই সময়ের সব ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের কাছেই অবিশ্বাস্য ছিল ভারতের ফাইনালে ওঠা। সেখানে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে কপিলেরা বিশ্বকাপ জিতবেন, তা ভাবা আরও কঠিন ছিল। সেই অসাধ্য কাজটাই সাধন করেছিলেন কপিলেরা। ১৮৩ রান করেছিল ভারত। সেই রান তাড়া করে জয় ভিভ রিচার্ডসদের কাছে যে কঠিন হবে তা ভাবা যায়নি। কিন্তু ৩৩ রানের মাথায় ভিভ আউট হতেই খেলা রং পাল্টাতে শুরু করে। কপিল উল্টো দিকে দৌড়ে গিয়ে ক্যাচ নিয়েছিলেন ভিভকে আউট করতে। ১৪০ রানে শেষ হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনংস।

এসএইচ-০৩/১৬/২৩ (স্পোর্টস ডেস্ক)