বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত ‘বড় ম্যাচে’র অপেক্ষা

বিশ্বকাপকে জাগিয়ে তুলতে অঘটন লাগে। তা সেই অঘটন তো ঘটল। বিশ্বকাপ কি আদৌ জাগল?

গ্যালারিতে কোনো প্রমাণ নেই। দিল্লিতে আফগান-রূপকথা লেখা হওয়ার পরদিনই এর সবচেয়ে কাছের বিশ্বকাপ ভেন্যু লক্ষ্ণৌতে মুখোমুখি সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কা। প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে দেয়ালে যাদের পিঠ ঠেকে গেছে। অথচ এমন একটা ম্যাচেও কিনা গ্যালারিতে সারি সারি শূন্য চেয়ার!

১৯ অক্টোবর পুনেতে তা হবে বলে মনে হয় না। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ভরা গ্যালারির সামনে খেলতে পারার একটাই শর্ত—প্রতিপক্ষ হতে হবে ভারত। ভারত-পাকিস্তান স্বাভাবিক ক্রিকেট ম্যাচের মধ্যে পড়ে না।

গত ১৪ তারিখে আহমেদাবাদের ম্যাচ নিয়ে উন্মাদনা যে পর্যায়ে পৌঁছেছিল, সেমিফাইনাল বা ফাইনালে এই দুই দল আবারও মুখোমুখি হলেই শুধুই সেটিকে ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে পুনেতে বাংলাদেশ দলের ঠিকানা কনরাড পুনের সুইমিংপুলের তত্ত্বাবধায়কের মুখে যে কথাটা শুনলাম, তা একটু অবাক করার মতোই। ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক নানা কারণে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে অবশ্যই এগিয়ে রাখছেন। তবে সেটিকে সবার ওপরে রেখেই বলছেন, এই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের পর ভারতের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ নাকি বাংলাদেশ!

বাংলাদেশ প্রথম তিন ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে। আর অপরাজিত ভারত মাত্রই গুঁড়িয়ে দিয়ে এসেছে পাকিস্তানকে—এটা মনে করিয়ে দেওয়ার পরও নিজের বক্তব্যে অটল ওই তরুণ। এটা যে শুধু তাঁর কথাই নয়, তার প্রমাণ পেলাম কিছুক্ষণের মধ্যেই। হোটেলের টিভিতে স্টার স্পোর্টস ইংরেজি হয় নেই, অথবা খুঁজে পাইনি। অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের হিন্দি ধারাভাষ্যে হঠাৎই বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের প্রসঙ্গ আসায় ভলিউমটা একটু বাড়িয়ে দিতে হলো।

ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ কাইফ বলছেন, ‘ভারত ভালোমতোই জানে, বাংলাদেশ এমন এক দল, যাদের একটু হালকাভাবেই নিলেই সর্বনাশ।’ প্রমাণ হিসেবে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশে দুই দলের সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজের কথা বললেন। যেটিতে বাংলাদেশ ২-১ ম্যাচে জিতেছে। ওই সিরিজের কোন একটা ম্যাচে সাকিব আল হাসান এক ওভারেই রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলিকে আউট করে দিয়েছিলেন, এটাও মনে করিয়ে দিলেন। সহভাষ্যকার সংগত করলেন মাসখানেক আগে গত এশিয়া কাপের ম্যাচটার কথা তুলে। শুবমান গিলের শতকের পরও ভারত যেটিতে হেরে গিয়েছিল।

বাংলাদেশকে এই সমীহ করাটা কি শুধুই খেলোয়াড়ি ভদ্রতা? স্টার স্পোর্টসের হিন্দি ধারাভাষ্য ইংরেজির মতো অত প্রথাগত নয়। এটা যেহেতু ভারতের আমজনতার জন্য, ধারাভাষ্যকারেরা সেখানে রীতিমতো মারকাটারি ব্যাটিং করেন। একেবারে মন খুলে কথা বলতে বলতে কখনো কখনো উসকে দেন জাতীয়তাবাদকেও। তাহলে কাইফরা এমন কেন বলছেন?

মনে এই প্রশ্ন জাগতে না জাগতেই টিভি পর্দায় ভেসে উঠল একটা পরিসংখ্যান। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ-ভারত ওয়ানডে‌ ম্যাচের জয়-পরাজয়ের হিসাব। ম্যাচ হয়েছে মাত্র ৪টি। যার ৩টিই জিতেছে বাংলাদেশ। ভারত মাত্র একটি, সেটিও বাংলাদেশে সিরিজ হেরে যাওয়ার পর। এবার পক্ষে একটা যুক্তি পেয়ে মোহাম্মদ কাইফের কণ্ঠ আরও উঁচু, ‘কী বলেছিলাম না, বাংলাদেশ খতরনাক টিম।’

বাংলাদেশকে আসলেই ‘খতরনাক টিম’ মনে না করলে টেলিভিশনে পরের স্লাইডটা আসত না। এই বিশ্বকাপে সামনের বড় ম্যাচগুলোর তালিকায় প্রথমেই ভারত-বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দল একটু দম নিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ১৪ তারিখে চেন্নাই থেকে পুনেতে আসার পর কেউ ব্যাট-বল হাতে নেননি। পুরো বিশ্রামের মধ্যেও শরীরটা চনমনে রাখার জন্য কারও কিছু করতে ইচ্ছা হলে করেছেন।

সোমবার দুপুর ছুঁই ছুঁই সকালেই যেমন জিমে অনেকক্ষণ সময় কাটালেন মাহমুদউল্লাহ। কিছুক্ষণ পর তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন হাসান মাহমুদ ও মেহেদী হাসানও। বাংলাদেশ দলের পরামর্শক শ্রীধরন শ্রীরামের কাছে পুনের সবচেয়ে বড় শপিং মলের খোঁজ নিতে দেখে বোঝা গেল, বিকেল-সন্ধ্যায় সেখানে ঘুরে আসার একটা পরিকল্পনাও হয়তো আছে।

এর আগেই হোটেল থেকে বেরিয়ে গেছে তিন ক্রিকেটারের আরেকটা দল। হোটেলের জিমে মোটামুটি সবই আছে। কিন্তু সেটিকেও যথেষ্ট মনে না হওয়ায় সহকারী কোচ নিক পোথাসকে নিয়ে শহরের অত্যাধুনিক জিমে চলে গেছেন মুশফিক, লিটন আর মিরাজ। সন্ধ্যার পর কোচিং স্টাফের সবাই মিলে পুনেতে এক সাবেক ক্রিকেটারের গড়ে তোলা ক্রিকেট জাদুঘর দেখতে গেলেন। আমন্ত্রণটা ক্রিকেটারদের জন্যও উন্মুক্ত ছিল। অনুমিতভাবেই ক্রিকেটাররা খুব একটা আগ্রহ দেখাননি। ব্যতিক্রম শুধু হাসান মাহমুদ।

পুনের স্টেডিয়াম শহর থেকে অনেক দূরে। মুম্বাই-পুনে হাইওয়ের পাশের সেই স্টেডিয়ামে যেতে হোটেল থেকে নাকি দেড়-দুই ঘণ্টা লাগবে। দেড় ঘণ্টা না দুই ঘণ্টা, তা জানা যাবে আজ। বেলা ২টা থেকে পুনেতে বাংলাদেশের প্রথম অনুশীলন সেশন। যেটি একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের চোটের অবস্থাটা বুঝতে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সময় ঊরুতে চোট পাওয়ার পরও পুরো ১০ ওভার বোলিং করেছেন। সেই রাতেই ঊরুর স্ক্যান করানোর পর চেন্নাইয়ের বিখ্যাত চক্ষুবিশেষজ্ঞকে চোখও দেখিয়েছেন।

চোখ দেখানো কেন, তা এই ম্যাচের আগে জরুরি প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন, ঊরুর চোটটা ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ না খেলার মতো কি না। ব্যথা নেই, হাঁটতেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে মাঠে তো শুধু হাঁটলেই চলে না। চোট পাওয়ার পর আজই প্রথম দৌড়াদৌড়ি করে সাকিব নিজের অবস্থাটা বুঝবেন।

আপাতত বাংলাদেশ দল সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী এই ম্যাচে সাকিবকে নিয়ে কোনো সংশয় আছে বলে মনে হচ্ছে না। বিশ্বকাপে আসার আগে ফিটনেস নিয়ে যা-ই বলে আসুন না কেন, একটা ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন। পরের ম্যাচগুলো হুমকির মুখে গেলে ভিন্ন কথা। নইলে পুরো ফিট না হলেও সাকিব এই ম্যাচটা খেলবেনই খেলবেন।

এসএইচ-০৪/১৭/২৩ (স্পোর্টস ডেস্ক)