চ্যাম্পিয়নের অপর নাম অস্ট্রেলিয়া

গ্রুপ পর্বে নয় ম্যাচের সবগুলোতে শুধু জেতেইনি ভারত, প্রতিপক্ষকে ধসিয়ে দিয়ে জিতেছে। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডও পাত্তা পায়নি। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া? প্রথম দুই ম্যাচে ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে অসহায় হারে বিশ্বকাপ শুরু করতে না করতেই শিরোপার হিসাব থেকে তাদের বাদ দেওয়ার উপক্রম। অনেকের বিশ্লেষণে প্যাট কামিন্সের এই অস্ট্রেলিয়া তখন পেয়েছে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে দুর্বলতম দলের স্বীকৃতি।

আহমেদাবাদে রোববার ফাইনালের আগে কেউ বিশ্বকাপের কোনো খবরাখবর না রেখে থাকলে তাঁকে ওপরের প্যারাগ্রাফ বিশ্বাস করানো কঠিন হবে।

ফাইনালে যে অস্ট্রেলিয়া বুঝিয়ে দিল, ম্যাচটা যখন বিশ্বকাপের ফাইনাল, অস্ট্রেলিয়া সেখানে অন্য ধাতুতে গড়া দল। বোঝাল, তারা পাঁচটা বিশ্বকাপ জেতা দল, আজ সংখ্যাটা ছয়-এ উঠল। বোঝাল, বিশ্বকাপ এভাবেই জিততে হয়।

ব্যাটে-বলে, তার পাশাপাশি আলাদা করে বললে ফিল্ডিংয়ে, আর এসবের চেয়েও বেশি বুদ্ধিতে ভারতকে বলতে গেলে অসহায় বানিয়ে রেখে বিশ্বকাপটা জিতে গেল অস্ট্রেলিয়া। ব্যাটিং যাদের গর্বের জায়গা, সেই ভারতকে ২৪০ রানে গুটিয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত সে রান ৪ উইকেট আর ৪২ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। আর কোনো দলের যেখানে দুবারের বেশি বিশ্বকাপ জেতা হয়নি, সেখানে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ হয়ে গেল ছয়টি!

এর মধ্যে প্রথমটি বাদে বাকি সবগুলোতেই তো ফাইনালে এভাবেই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া! একপেশে, অস্ট্রেলিয়ার দাপট দেখানো ফাইনাল!

ভাগ্য সঙ্গ দিল, তা বিজয়ীদেরই দেয়। হেড-লাবুশেনের ব্যাটের আশপাশ দিয়ে বল গেল কয়েকবার। ভারত আফসোস করল, কিন্তু তাদের বিশ্বাস ভাঙার মতো কিছু তখনো হয়নি। এর মধ্যেই ট্রাভিস হেডের সঙ্গে মারনাস লাবুশেন মিলে শুরু করলেন বন্ধুর পথে পথচলা।

হেডের ফুটওয়ার্ক মোটেও ব্যাকরণসিদ্ধ নয়, কিন্তু শুরুতে ভয়ংকরদর্শন পিচে মনে হচ্ছিল, ফুটওয়ার্ক না থাকাই বুঝি এখানে আশীর্বাদ। সামনের পা ‘প্ল্যান্ট’ করে খেলতে গেলেই এই পিচে বরং বিপদ বেশি! পেছনের পায়ে ভর দিয়ে চোখ আর মাথার সমন্বয়েই হেড খেললেন, লাবুশেনও। মোতেরা স্টেডিয়ামে উশখুশ শুরু।

অস্ট্রেলিয়ার দিকে প্রকৃতিও ততক্ষণে হাত বাড়িয়ে দিল। সময় গড়াল, কুয়াশা পড়ল। ওভার বিশেক যেতে যেতে মনে হলো, বুমরা-কুলদীপ-জাদেজা-শামিদের বলে তেমন বিষ আর দেখা যাচ্ছে না। প্রথম সাত ওভারের তুলনায় বিশ ওভারের সময়ের পিচকে মনে হচ্ছিল যেন ভিন্ন দুই পিচ! সময় যত গড়াল, পিচে আর কিছুই থাকল না বোলারদের জন্য। ভারতের খেলোয়াড়দের কাঁধ তখন ঝুলে গেছে। ধারাভাষ্যে রিকি পন্টিং তার কিছুক্ষণ আগেই বললেন, যারা এই ম্যাচে আগে প্যানিক করবে, তারাই হারবে। ভবিষ্যদ্বাণী!

এরপর তো যত সময় গড়িয়েছে, অস্ট্রেলিয়া অনায়াসে রান তুলেছে। আর স্টেডিয়ামের ১ লাখ ৩০ হাজার ভারতীয় যেন প্রার্থনায় বসলেন, যদি কিছু হয়! হলো না। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম ততক্ষণে চুপচাপ।

শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ারগ্লেন ম্যাক্সওয়েল নেমে প্রথম বলেই দুই রান নিয়ে যখন অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করে দিল, ভারত বুঝল, বিশ্বকাপটা এভাবেই জিততে হয়! যেভাবে অস্ট্রেলিয়া জেতে। বারে বার। এ নিয়ে ছয়বার।

ফাইনালের দিন আহমেদাবাদের পিচ খুব একটা ব্যাটিং সহায়ক ছিল না। এর মধ্যেও দারুণ ব্যাটিং করেছেন অস্ট্রেলিয়ার এক ব্যাটার। তিনি ট্রাভিস হেড। পুরো টুর্নামেন্টে অপ্রতিরোধ্য ভারতের বোলিং লাইনকে ফাইনালে রীতিমতো নাকানিচুবানি খাইয়েছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। তাতে ম্যাচসেরার পুরষ্কারও জিতেছেন তিনি।

এসএইচ-১৬/১৭/২৩ (স্পোর্টস ডেস্ক)