যে গ্রামে পাখির মিলনমেলা

পানকৌড়ি আর বক পাখিদের নিরাপদ আস্তানা ফুলবাড়ীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম বলিহরপুর। ভোর হওয়ার সাথে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে ওই গ্রামের মানুষের। বাশঁঝাড় কিংবা উচুঁ গাছের দিকে তাকালে দেখা যাবে শত শত পানকৌড়ি আর বকের নিরাপদ প্রজনন আবাসস্থল। এখানেই জন্ম নিচ্ছে পাখির বাচ্চা।

প্রজননের জন্য আসা এসব পাখিদের ভালবাসে গ্রামবাসীও। তাই কেউ চুপিসারে পাখি শিকারে এলে বাধা দেয় ওই গ্রামের মানুষ। মহাসড়কের পাশে হওয়ায় প্রতিদিনই পাখিদের দেখার জন্য ছুটে আসে মানুষ। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, ওই গ্রামের গাছে গাছে যেন থোকায় থোকায় পাখির সাদা কালো ফুল ফুটে আছে। পাখিদের মিলন মেলা বলিহরপুর গ্রাম।

পানকৌড়ি ও বক এর প্রজনন দেখতে গেলে দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কের ঘেষা ফুলবাড়ী থেকে ৭/৮ কিলোমিটার পশ্চিমে বলিহরপুর গ্রামে যেতে হবে সকালে অথবা সন্ধায়। বলিহরপুর গ্রামের মানুষ প্রকৃতি প্রেমিক-পাখি প্রেমী। এ কারনে পাখীদের অভয়ারন্য বলিহরপুর গ্রাম। গ্রামের গাছে গাছে দেখা যায় পাখি কোনটি উড়ছে, কোনটি ডাকছে এবং পুকুরগুলোতে দেখা যায় কোন পাখি মাছ শিকারে ব্যস্ত।

এ গ্রামের প্রবেশ পথের পার্শ্বে পুকুর পাড়ের বাঁশঝাড়ের মাথায় বক, পান-কৌড়ির কলকাকলীসহ এসব দৃশ্য দেখা যায়। সকালে আর বিকালে পাখিদের আনাগোনায় মন জুরিয়ে যাবে সবার। পরিবেশ বান্ধব এ গ্রামে বিকেল বেলায় পাখিদের কলকাকলীতে প্রকৃতি রুপ ফুটিয়ে তোলে। এখানে কেউ কোন পাখি শিকার করেও না এবং কাওকে করতে দেয়না। কেউ কোন বক বা পান-কৌড়িকে ধাওয়া করে না বা করতে দেয় না স্থানীয় মানুষ। গাছ-গাছালীও বেশী। পরিবেশ এবং নিজেদের স্বার্থেই পাখীদের রক্ষা করা প্রয়োজন বলে এলাকার মানুষ মনে করেন।

এই পানকৌড়ি ও বক এর কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউপির বলিহরপুর গ্রামের মানুষের। আবার পাখিদের কলতানে সন্ধা নামে। সকাল হলেই মা পাখিরা খাবারের সন্ধানে উড়ে যায় আবার সন্ধার নামার সাথে ফিরে আসে নীড়ে। এবার এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এসব বক ও পানকৌড়িগুলোর খাবার সংকট হচ্ছে। তবে সরকারিভাবে এদের খাবারের ব্যবস্থা করা গেলে বক, পানকৌড়ি ছাড়াও অন্যান্য পাখিদেরও এটি হতে পারে নিরাপদ প্রজননের আবাসস্থল। এমনটাই বললেন স্থানীয় অনেকেই।

দীনেশ চন্দ্র রায়সহ স্থানীরা বলেন, ইতিমধ্যে ওইসব পাখি শিকারীরা না মারে এবং বিরক্ত না করতে পারে সেজন্য জনসচেতনতামূলক আলোচনাও হয়েছে। তবে গ্রামটিকে ‘পাখি প্রজনন কেন্দ্র’ ঘোষনা করা হলে আরও পাখির প্রতি মমতা ও ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে মানুষের। বলিহরপুর গ্রামে মহাসড়কের পাশে বাঁশঝাড় ও বিভিন্ন গাছের ডালে শত শত পানকৌড়ি আর বক আবাস গড়েছে। এরা বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আসতে শুরু করে এবং প্রজনন শেষে তাদের বাচ্চাগুলো বড় করে ভাদ্র মাসে চলে যায়।

এখানে ৫ মাস তারা অবস্থান করে। গ্রামের পাশের নদী-নালা, খাল-বিল আর ফসলের মাঠে নানানর জাতের মাছ, পোকামাকর, শামুক-ঝিনুক খেয়ে জীবন ধারন করে। এখানেই নিরাপদ আশ্রয়ে বাসা বেঁধে ডিম দেয় এবং তা দিয়ে বাচ্চা ফুটায় তারা।

পাখি দেখতে আসা মেহেদি হাসান জানায়, এমন প্রকৃতির দৃশ্য সত্যি মনোরম,আনন্দদায়ক। সকাল-সন্ধায় পাখিদের কোলাহল এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরী করে।

এসএইচ-১৯/০৬/২১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)