ঈদে নতুন আতঙ্ক দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

ঈদ মানেই আনন্দ। আর নতুন জামা, পাঞ্জাবি, জুতা কেনাটা আনন্দেরই অংশ। ছোট ছোট ছেলেমেয়ের জন্য যেন এগুলো কিনতেই হবে। দীর্ঘদিন মহামারি করোনার কারণে থমকে ছিল আয়-রোজগার। করোনা মহামারি একটু স্বাভাবিক হলেও আবার নতুন আতঙ্ক দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। দ্রব্যমূল্যের যখন ঊর্ধ্বগতি, তখন নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর নাভিশ্বাস।

সমাজে অনেক মানুষের রোজকার আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আর এসব মানুষের কাছে নতুন জামাকাপড় কেনা একটা স্বপ্ন। যখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন তাদের কাছে ঈদ মানেই দুঃস্বপ্ন।

ঈদে কীভাবে ছেলেমেয়েকে নতুন কাপড় কিনে দেবেন, সেই চিন্তায় বেসামাল নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকেই পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন জামা-পাঞ্জাবি কিনলেও নিজের জন্য দিনশেষে কিছুই কিনতে পারছেন না। তারপরও কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। শুধু কাপড়ের দোকানই নয়, ভিড় বেড়েছে জুতা ও কসমেটিকের দোকানেও।

নতুন জুতার পাশাপাশি পুরানো জুতা রং করার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন অনেকে। তেমনি ব্যস্ততা বেড়েছে জুতার কারিগরদের মাঝেও। দম ফেলার যেন সময় নেই এসব কারিগরের।

রোববার দিনাজপুরের হিলি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কাপড়ের বড় বড় দোকানে উপচে পড়া ভিড়। আবার রাস্তার পাশের কাপড়ের দোকানগুলোয়ও নিম্ন আয়ের মানুষজনকে কাপড় কিনতে দেখা গেছে।

কথা হয় হিলি বাজারে কাপড় কিনতে আসা মুনসুরের সঙ্গে। জানতে চাইলে মুনসুর বলেন, ‘আমি হিলি পানামা পোর্টে লেবারের কাজ করি। প্রতিদিন আয় গড়ে ৩০০-৩৫০ টাকা। আগেও যে রোজগার ছিল এখনো তাই, মোটেও বাড়েনি। উল্টো মাঝেমধ্যে আয় কমে যায়। আমার পরিবারে সদস্য পাঁচজন। এ ছাড়া বৃদ্ধ মা আছেন। এত অল্প রোজগার দিয়ে সংসার চালানো খুবই কষ্টের। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের। তারপর আবার সামনে ঈদ। ঈদে কীভাবে যে বাচ্চাদের নতুন কাপড়ের আবদার পূরণ করব, ভেবে পাচ্ছি না।’

আরেকজন রিকশাচালক মতিন বলেন, ‘সারা দিন রিকশা চালিয়ে রোজগার ৩০০-৪০০ টাকা, যা রোজগার হয় তা দিয়ে সংসার চলে কোনোরকমে। বাজারে আসছি ছেলেমেয়ের আবদার নতুন জামার। বড় বড় কাপড়ের দোকানে গেলাম, যে দাম চাচ্ছে, একটা জামার দাম নাকি ৫০০ টাকা। প্যান্টের দামও একই। কীভাবে নেব, তাই রাস্তার পাশের দোকান থেকে বাচ্চার একটা জামা নিলাম ১০০ টাকা আর একটা প্যান্ট নিলাম ১৫০ টাকায়। মেয়েটার জন্য এখনো নিতে পারিনি। আর দুদিন কাজ করে টাকা জমিয়ে হয়তো কিনব।’

বাজারে জুতার কারিগরের দোকানে অনেকটাই ভিড়। পুরানো জুতা কালি করছেন নতুন করতে।

জুতা কারিগর দিলীপ রবিদাস বলেন, কয়েক বছর পর মনে হচ্ছে বাজার আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়েছে। আগের থেকে কাজ অনেকটাই বেড়েছে। বর্তমানে হাতে প্রচুর কাজ রয়েছে। সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করছি, তারপরও কাজ শেষ হচ্ছে না। নতুন জুতা তৈরি থেকে শুরু করে পুরানো জুতা সেলাই ও পলিশের কাজ করছি সারা দিন। তবে নতুন জুতার কাজের পাশাপাশি পুরানো জুতার কাজ বেড়েছে অনেকটাই।

এসএইচ-২০/২৪/২২ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)