ঈদুল আজহা উপলক্ষে লম্বা ছুটি মেলায় দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মাঝে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা বেড়েছে। স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, চিকিৎসা, ব্যবসা, কেনাকাটার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ছেন মানুষ। বিশেষ করে ভারতে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভিড়। তবে ভারত থেকে দেশে আসার চাইতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার সংখ্যাই বেশি। এদের কেউবা যাচ্ছেন আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে আবার কেউবা যাচ্ছেন ঘুরে বেড়াতে। পাসপোর্ট যাত্রী পারাপার বাড়ায় সরকারের রাজস্ব আহরণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দিনাজপুর থেকে ভারতে যাওয়া মিজানুর রহমান বলেন, আমরা এবার ঈদের ছুটিতে চার বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করেছিলাম যে ভারতের কলকাতায় ঘুরতে যাবো। সেই মোতাবেক শুক্রবার হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে এসেছি ভারতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ইমিগ্রেশনে এসে দেখি প্রচণ্ড ভিড় আমাদের মতো অনেকেই ভারতে ঘুরতে বা বেড়াতে যাচ্ছেন। যার কারণে অনেক সময় লাগছে আগে যেখানে ১৫ মিনিট থেকে আধাঘণ্টার মধ্যে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হতো এখন সেখানে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। ইমিগ্রেশনের সামনে লম্বা লাইনের কারণে অনেক ধীরগতিতে কার্যক্রম সম্পন্ন হচ্ছে। ইমিগ্রেশনে ইন্টারনেট স্লোর কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে যাদের বাস বা ট্রেনের টিকিট কাটা রয়েছে এই ধীরগতির কারণে তাদের সেই বাস বা ট্রেন মিস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জয়পুরহাটের পারমীতা পাল বলেন, আমার স্বামী ভারতের কলকাতায় চাকরি করেন সেই সুবাদে প্রতিনিয়ত আমাকে এই পথ দিয়ে ভারতে যাতায়াত করতে হয়। অন্যান্যবার কম সময়ের মধ্যেই ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম সম্পন্ন করে ভারতে যেতে বা আসতে পারি। কিন্তু আজকে ইমিগ্রেশনে প্রচণ্ড ভিড় যার কারণে ইতোমধ্যেই একঘণ্টার বেশি সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। আরও কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে সেটি বলতে পারছি না। এতে বাড়তি সময় লাগছে সেই সঙ্গে শারীরিক ক্লান্তি তো রয়েছে।
সৈয়দপুর থেকে ভারতে যাওয়া রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি যার কারণে ঈদে বেশি সময় ছুটি পেয়ে থাকি। আমার শ্বশুরবাড়ির অনেক আত্মীয়স্বজন রয়েছে ভারতে, মূলত তাদের সঙ্গে দেখা করতেই যাওয়া, সেই সঙ্গে কলকাতা শহরটা ঘুরে দেখবো। সবার সঙ্গে দেখা সাক্ষাত হবে ভালো লাগবে মূলত এই কারণেই ভারতে যাওয়া। এছাড়া বেড়াতে সবারই ভালো লাগে মনটা রিফ্রেশ হয়, সেজন্যই আসলে আজকে ছেলে মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি।
বদিউজ্জামান বলেন, ভারতে থাকা আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার জন্য হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে এসেছি। কিন্তু ঈদের পরেরদিন ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে পাসপোর্ট যাত্রীদের এতো পরিমাণ ভিড় হবে তা কল্পনা করিনি। আসার পর দেখলাম হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়। অনেকেই ভারতে যাচ্ছে যার কারণে দুঘণ্টা সময় লাইনে দাঁড়িয়ে তারপর পাসপোর্টের কাজ সম্পূর্ণ করতে পারলাম। এতে আমাদের মতো বয়স্ক মানুষদের কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে, কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। যাই হোক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পেরেছি এখন আমরা ভারত যেতে পারছি এটাই আনন্দের।
শিশু মায়িশা আকতার বলেন, আমি আমার মায়ের সঙ্গে ঈদের ছুটিতে ভারতে বেড়াতে যাচ্ছি। আমি সেখানে কলকাতা শহর ও ডায়মন্ড হারবার ঘুরে দেখবো। বেরেনডুলিতে আমার দাদু বাড়ি ঘুরে দেখবো সবমিলিয়ে অনেক মজা করবো।
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কর্মকর্তা শেখ আশরাফুল বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রী আগমন বহির্গমন দুটোই কিছুটা বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে এই চেকপোস্ট দিয়ে ৩০০ যাত্রী পারাপার করতেন এখন সেখানে ৪০০ এর ওপরে পারাপার করছেন। এদের মধ্যে কেউবা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে আবার কেউবা ঘুরতে যাচ্ছেন। তবে কেউ কেউ চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। তবে আসার চাইতে যাওয়ার সংখ্যাই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমন অবস্থা ঈদের যে কয়দিন ছুটি রয়েছে এই সময়টা জুড়েই সাধারণত হয়ে থাকে।
এসএইচ-১৫/০১/২৩ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)