বেশ কয়েকদিন উর্দ্ধমুখী থাকার পর কমতে শুরু করেছে কাঁচা মরিচের ঝাঁজ। মাত্র একদিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে কাঁচা মরিচের দাম কমেছে কেজিতে ১শ থেকে ১শ ২০ টাকা পর্যন্ত। একদিন আগেও ৫শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ৩৮০ থেকে ৪শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সবগুলো বন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হলে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমবে বলে দাবি আমদানিকারক ও বিক্রেতাদের। দাম কমায় খুশি জানিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার দাবি জানিয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষরা।
হিলি বাজারে কাঁচামরিচ কিনতে আসা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম উর্দ্ধমুখী এতে করে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে বিশেষ করে আদা ও কাঁচা মরিচের যে ঝাঁজ তাতে করে আমাদের মতো মানুষদের মরণ অবস্থা দাঁড়িয়েছে। যে হিসেব করে বাজার করতে টাকা নিয়ে আসছি তার কোনটিই হিসেব মিলছে না। কাঁচা মরিচের দামের যে উর্দ্ধমুখী তাতে করে গত কয়েকদিন ধরে ভয়েই এর দোকানে যায়নি। আজকে শুধু দাম শুনলাম তাতে করেও হাতে আগুন লাগার মত অবস্থা। ৪শ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। দামটা যদি কমে তবেই আমরা কিনে খেতে পারব নচেৎ নয়।
কাঁচা মরিচ বিক্রেতা বিপ্লব শেখ জানান, অতিরিক্ত গরম ও প্রচন্ড খরাসহ বৈরি আবহাওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাঁচা মরিচের ফুল ঝরে গিয়ে ও গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দেশিয় কাঁচা মরিচের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। যেসব ক্ষেত ভালো রয়েছে সেগুলো থেকেও পর্যাপ্ত পরিমানে কাঁচা মরিচ পাওয়া যাচ্ছে না। যে জমি থেকে পূর্বে কৃষকরা ৫ মণ কাঁচা মরিচ পেতেন সেখান থেকে বর্তমানে তারা ১ মণ মরিচ পাচ্ছেন। যার কারণে সরবরাহ কমায় পণ্যটির দাম উর্দ্ধমুখী। এর ওপর ভারত থেকে মাত্র একদিন কাঁচা মরিচ আমদানি হওয়ার পরই ঈদের ছুটির কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে মোকামে হু হু করে বাড়তে শুরু করে কাঁচা মরিচের দাম। বিশেষ করে ঈদের পর এর দামটা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। আমরা যখন যেভাবে মোকাম থেকে কাঁচা মরিচ ক্রয় করছিলাম ঠিক সেই মোতাবেক বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি করছি। ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা ক্ষেত থেকে সাধ্যমত কাঁচা মরিচ তুলছেন এছাড়াও মোকামের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাঁচা মরিচ বাজারে আসছে যার কারণে সরবরাহ কিছুট বাড়ায় দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। যার কারণে গতকালকের চেয়ে আজ মোকামে কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কম। দেশিয় কাঁচা মরিচের পাশাপাশি স্থলবন্দর দিয়ে আজ থেকে আমদানি শুরু হলে দাম কমে আসবে।
কাঁচামরিচ আমদানিকারক আনোয়ার হোসেন বলেন, সরবরাহ কমে গিয়ে দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। দাম নিয়ন্ত্রণে ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গত ২৫ জুন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। এ পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দরের ৭ জন আমদানিকারক ৩ হাজার টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি পায়। আইপি হাতে পেয়ে কাঁচা মরিচের এলসি খুলে আমদানিকারকগন ভারতীয় রফতানিকারককে কপি দেয়ায় দীর্ঘ ১০ মাস বন্ধের পর ২৬ জুন থেকে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি শুরু হয়।
তবে একদিন পরেই ঈদের ছুটির ফাঁদে বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। ছুটি শেষে আজ রোববার থেকে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি শুরু হওয়ায় ওই সব বন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচও আমদানি শুরু হবে। এতে করে বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে পারে। তবে আগামীকাল সোমবার থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি শুরু হবে। দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের বাড়তি চাহিদাকে মাথায় রেখে আমদানির অনুমতি পাওয়া সকল আমদানিকারকগণ কাঁচা মরিচ আমদানি করবেন। তার সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন আজকেই আমদানিকারকরা রফতানিকারকদের কাঁচা মরিচের ট্রাক লোডিং করতে বলবেন যেন সোমবার বন্দরে প্রবেশ করতে পারে।
উল্লেখ্য, ঈদের আগে বন্দর দিয়ে ৫ ট্রাকে ২৭ টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয় এতে করে বন্দরে ২শ থেকে ২শ ২০ টাকা দরে মরিচ বিক্রি করা হয়েছিল। কিন্তু রফতানি শুরু হওয়ায় ভারতের বাজারেই কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা বাড়িয়ে দেয় ব্যবসায়ীরা। পূর্বে যে কাঁচা মরিচ ১শ থেকে ১শ ১০ রুপিতে ক্রয় করে আমদানি করা যেত বর্তমানে তা বেড়ে ১৪০ রুপি পড়ছে। তাতে করে পরিবহন খরচ ও আমদানি শুল্ক মিলিয়ে ২৪০টাকা পড়তা পড়বে যার কারণে ২৫০ টাকার নিচে বিক্রি সম্ভব নয়।
এসএইচ-১৮/০২/২৩ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)