জেনে নিন ঈদুল আজহার দিনের সুন্নতসমূহ

ঈদুল আজহার

ঈদুল আজহা মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। পবিত্র এই দিনটি শুধু উৎসবের নয়, আনন্দের পাশাপাশি দিনটি আল্লাহ’র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যও অতি গুরুত্বপূর্ণ।

কোরবানি দেয়া কী ফরজ, সুন্নত নাকি ওয়াজিব এ বিষয়ে অনেকেরই ভালোভাবে জানেন না। প্রথম কথা হচ্ছে, কোরবানি দেয়া ফরজ এ বক্তব্য আসলে আলেমদের মধ্যে কেউ দেননি। আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে কোরবানি কি সুন্নাহ নাকি ওয়াজিব, এ নিয়ে। একদল বলেছেন, এটি সুন্নত, সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটি অধিকাংশ আলেমের বক্তব্য। আরেকদল বলেছেন কোরবানি ওয়াজিব।

ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী, মুসলিম, বিবেকসম্পন্ন ও প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর কোরবানি বাধ্যতামূলক। এর সাথে আর একটি শর্ত যোগ হবে, সেটি হলো, যে ব্যক্তি ঈদুল আজহার দিন কোরবানির পশু জবাই করার সামর্থ্য রাখে, সেই ব্যক্তির ওপর কোরবানি আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটি বলেছেন অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম।

কিন্তু যারা ওয়াজিব বলেছেন, তারা দুটি শর্ত দিয়েছেন। একটি হচ্ছে, ওই ব্যক্তির নিসাব পরিমাণ সম্পদ (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বাহান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের সম্পদ) থাকতে হবে, যেই পরিমাণ সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ হয়। অন্যটি হচ্ছে তাকে মুসাফির হওয়া যাবে না। এ দুটি শর্ত করে বলা হয়েছে কোরবানি ওয়াজিব। এ দুটির একটি শর্তও যদি কোনো ব্যক্তি পূরণ করতে না পারে, তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না।

কিন্তু বিশুদ্ধ বক্তব্য হচ্ছে, রাসুল (সা.) যে হাদিস দিয়ে ওয়াজিবের দলিল দিয়েছেন সেটি। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, সে যেন কোরবানি করে।’ সামর্থ্যকে রাসুল (সা.) সাধারণ রেখে দিয়েছেন।

অন্য রেওয়াতের মধ্যে এসেছে, ‘সামর্থ্য থাকার পরও যদি সে কোরবানি না করে, তাহলে সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ এই হাদিস দিয়েই ওয়াজিবের দলিল দেয়া হয়েছে। নবীজি (সা.) নেসাব পরিমাণ সম্পদের কথা মোটেও বলেননি, এটি না থাকলেও চলবে।

ব্যাংকে কোরবানি দেয়ার মতো অর্থ যদি আপনার থাকে, তাহলে আপনি কোরবানি দিতে পারবেন।

জেনে নিন ঈদুল আজহার দিনের ১৩টি সুন্নাত সম্পর্কে:

ঈদুল আজহার সুন্নাতসমূহ ঈদুল ফিতরের সুন্নাতের মতই প্রায় একই। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সামান্য পার্থক্য রয়েছে যেমন-

ঈদুল আজহার দিনে কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত।

ঈদুল আজহার দিনে ঈদগাহে যাওয়া ও প্রত্যাবর্তনের সময় তাকবির (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ) উচ্চস্বরে পড়া সুন্নাত।

ঈদুল আজহার নামাজ ঈদুল ফিতর অপেক্ষা অধিক সকালে পড়া সুন্নাত।

ঈদুল আজহার নামাজের পর সক্ষম ব্যক্তির জন্য কুরবানি করা ওয়াজিব।

ঈদুল আজহা বা ঈদুল ফিতরের নামাজের কোনো আযান বা একমত নেই।

ঈদের নামাজের কোনো কাযা নাই।

ঈদের নামাজ সহীহ হবার জন্য জামা’আত শর্ত।

দুই ঈদের রাত্রির (চাঁদ রাত) ফযিলত :

নবী (সাঃ) বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাত্রে জাগরিত থেকে আল্লাহ্ পাকের ইবাদাত বন্দেগীতে মশগুল থাকবে, যে দিন অন্যদের অন্তর মরবে, সে দিন তার অন্তর মরবে না (তাবরানী)’।

তাই দুই রাত্রে সওয়াব অর্জনের কাজ করতে না পারলেও ফিৎনায় শরিক হয়ে যেন গুনাহগার না হয়, সেদিকে কঠিন দৃষ্টি দেয়া আমাদের খুব জরুরি।

আরএম-০৫/০৭/০৮ (ধর্ম ডেস্ক)