বিশ্ব মানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতে আমরা ভিষনভাবে পিছিয়ে গেছি

শিক্ষামন্ত্রী ড. দিপু মনি বলেছেন, বিশ্বমানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতে আমরা ভিষনভাবে পিছিয়ে গেছি। রোববার সকাল ১১ টায় রাজশাহী কলেজে অনুষ্ঠিত ১৩টি শতবর্ষী সরকারি কলেজের শিক্ষার উৎকর্ষ সাধন শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু কর্ণার প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে না জানলে বাংলাদেশকে জানা যাবেনা। বাংলাদেশকে না জানলে আমি যতো শিক্ষিতই হই আমার মধ্যে দেশপ্রেম থাকবেনা। আমি সত্যিকারের সু-নাগরিক হতে পারবোনা। সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারবোনা। শুধু জীব হবো তার থেকে বেশি কিছু হতে পারবোনা। সেই জন্য বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে জানতে হবে।

কর্মশালায় ১৩ কলেজের অধ্যক্ষদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আপনাদেরকে দেখতে হবে কতজন শিক্ষার্থী আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত। যতজন উপযুক্ত ততজনকে ভর্তি করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় আমরা প্রতিষ্ঠানে ভবনের সংখ্যাবাড়াচ্ছি, বিষয় বাড়াচ্ছি, শিক্ষার্থী বাড়াচ্ছি। কিন্তু যখন আমরা বিশ্বমানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতের কথা বলছি তখন আমরা ভিষন ভাবে পিছিয়ে গেছি। কিন্তু আমরাতো পিছিয়ে ছিলামনা। একটা সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতমান-সম্মত জায়গায়ছিলো। এই যে আমাদের একটি প্রবণতা শুধু বাড়াবো বাড়াবো, ছাত্র আসলেই ভর্তি করিয়েনিচ্ছি। কিন্ত আমাদের যে ক্লাসরুম সেটা এত শিক্ষার্থীর জন্য উপযুক্ত কিনা সেটা দেখতে হবে।

মন্ত্রী আরো বলেন, আমাদেরকে মান-সম্মত বা বিশ্বমানের লেখাপড়া করাতে হবে। বিশ্বমানের লেখাপড়া যে সম্ভব না তা নয়, বর্তমানে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যে জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন সেখানে আন্তর্জাতিক মান বাস্তবায়নে আমিও অবদান রাখবো অর্থ্যাৎ বাংলাদেশ অবদান রাখবে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে অনেক ক্ষেত্রে স্ট্যন্ডার্ড মানা হবে। বর্তমানেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে স্ট্যান্ডার্ড মানাহচ্ছে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও হয়তো স্ট্যান্ডার্ড মানা হবে। কিন্তু এখন যদি আমরা সেই জায়গায় যেতে চাই তাহলে এই যে শুধু বাড়াবো বাড়াবো করলে হবেনা, আমাদের মান ঠিক রাখতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমি কতজন শিক্ষার্থীকে পড়ায় সেটা বেশি জরুরী নাকি আমার প্রতিটি শিক্ষার্থীদের যে শিক্ষা পরবর্তীতে যা কাজে লাগবে তা নিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যাওয়া উচিত? অবশ্যই পরেরটা হওয়া উচিত। আমাদের সবার আগে ঠিক করতে হবে কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি করবো। আনলিমিটেড শিক্ষার্থী নেওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে আর ২-৪ বছর পরে কেউ আসবেনা। কারণ অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে, আর দরকার হবে না।

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন,আমি প্রতিদিন শিক্ষকদের দেশের বাইরে প্রশিক্ষণে যাওয়া নিয়ে বহু ফাইল সাক্ষর করে থাকি। দেশের বাইরে থেকে এসে শিক্ষাক্ষেত্রে সেই প্রশিক্ষণ কাজে লাগাচ্ছে কিনা,সঠিক ব্যক্তি সঠিক প্রশক্ষণ পাচ্ছেকিনা, নাকি শুধু বিদেশে যাচ্ছে আমাদের সেটা দেখতে হবে।

এর আগে কর্মশালা শুরুর আগে সাংবাদিকদের দেয়া সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী বলেন, অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং সমস্ত কিছু সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা মানসম্মত শিক্ষায় পৌঁছাতে চাই।

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন কারণে নিয়ম শৃঙ্খলার অবনতি হলে সেগুলোর বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। তাদের যে দায়িত্ব রয়েছে, সেই দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবে। তার মধ্য দিয়ে এই শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌছাতে চায়। শিক্ষাকরা কোন আন্দোলন করছেনা। এখানে কিছু অভিযোগ তারা দিয়েছেন। প্রথাঅনুযায়ি সেগুলোর যদি কোন প্রামাণ থাকে তাহলে অন্য জায়গায় যেমন ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজশাহী কলেজ মিলনায়েতনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যলয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন অর রশিদ এর সভাপতিতে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. ডিপু মনি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষা মন্ত্রনালয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, জাবি প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু, জাবি প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মশিউর রহমান, জাবি ট্রেজারার প্রফেসর নোমান উর রশীদ প্রমুখ।

এছাড়াও রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা.হবিবুর রহমানসহ ১৩টি শতবর্ষী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষগণ অংশগ্রহন করেন। শতবর্ষী ১৩ টিকলেজগুলো হলো- রাজশাহী কলেজ, চট্রগ্রাম কলেজ, চট্রগ্রামের হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ, বরিশালের ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ, সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ, পবনার এডওয়ার্ড কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, খুলনার ব্রজলাল (বিএল) কলেজ, ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ, রংপুরের কারমাইকেল কলেজ, বাগেরহাটের প্রফুল্ল চন্দ্র (পিসি) কলেজ ও ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ।

বিএ-০৫/০১-১২ (নিজস্ব প্রতিবেদক)