পরীমনি “হট অব দ্যা টপিক” কেন?

টপিক

জি. এম. মুরতুজা: বর্তমানে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে, ফেসবুকে, ইউটিউবে আর মানুষের ভাব-ভাষ্য-মতামত দেখে মনে হচ্ছে পরীমনি “হট অব দ্যা টপিক”। কেননা কোনো ইস্যু এতদিন মূলধারার গণমাধ্যম, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বাসে-ট্রেনে, হাটে-বাজারে, বিমানবন্দর-জাহাজঘাটে “হট অব দ্যা টপিক” বা টেন্ড্রে থাকার ঘটনাও বিরল।

এমনকি অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের সাথে দূর্দান্ত সিরিজ জয় এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরপর দুই ম্যাচ জয়, ফুটবলের বরপুত্র মেসির বেদনাদায়ক দলবদল, অলিম্পিকের মত এতবড় ক্রীড়া ইভেন্ট, করোনা ভ্যাকসিনের সংকটের মত বড় ঘটনাও পরীমনির ইস্যুকে ট্রেন্ডহীন করতে পারেনি বা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু থেকে সরাতে পারেনি। সবাই পরীমনি ইস্যু নিয়ে মেতে আছে। পরীমনিকে নিয়ে কেন এত মাতামাতি ও হৈচৈ করছেন?

পরীমনি যে অপরাধ করেছেন তার চেয়েও ভয়ংকর অপরাধও দেখেও আমাদের চোখ সয়ে গেছে। বিডিআর বিদ্রোহে সেনা কর্মকর্তাদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা, নারায়নগঞ্জে সেভেন মার্ডার, বিশ্বজিত হত্যাকান্ড, ছাত্র নেতার ধর্ষনে সেঞ্চুরী, শেয়ার বাজার কেলেংকারী, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হ্যাক করে কয়েক হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেয়া, দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে কানাডায় বেগমপাড়া গড়ে তোলা- এমন সব মারাত্মক অপরাধও কিন্তু এতদিন আমাদের মূলধারার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “হট অব দ্য টপিক” বা ট্রেন্ডে অথবা মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে থাকেনি। আর এসব অপরাধের সাথে তুলনা করলে পরীমনি’র অপরাধ নিতান্তই নগন্য!

তাহলে পরীমনির “হট অব দ্যা টপিক” হওয়ার বড় কারন কি? মূল কারনটা হচ্ছে, পরীমনি অবশ্যই একজন অতি সুন্দরী ও রূরবতী নারী। তার রূপ ও সৌন্দর্য ব্যবহার করে যে সব রথি মহারথিরা পরীমনিকে ইচ্ছেমত ব্যবহার করে তারকা বানিয়েছিলেন-তাদের মধ্যেই পরীমনিকে নিয়ে দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। আর এসব রথি মহারথিরা এতদিন পরীমনিকে যেভাবে পারে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এরই মধ্যে পরীমনি তারকা খ্যাতি পেয়ে যাওয়ায় হয়তো এসব রথি মহারথির নিয়ন্ত্রন ও শৃঙ্খল থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে। এটাই পরীমনি’র জন্য কাল হয়ে গেছে। একপক্ষ পরীমনিকে ব্যবহার করে বোর্ডক্লাবে নাটক করিয়েছে। পরীমনি বোর্ডক্লাবে নাটক করার পর অন্যপক্ষের আতেঁ ঘাত লেগেছে।

ফলে আতেঁ ঘা লাগা পক্ষ পরীমনিকে সাইজ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। পরীমনি দুই পক্ষের কৌশল ধরতে পেরে তাদের নিয়ন্ত্রন ও শৃঙ্খল থেকে বের হয়ে গেছে। এতে দুই পক্ষই একাট্টা হয়ে পরীমনিকে পচিয়ে ফেলার জন্য যতসব কুট কৌশল ব্যবহার করা যায়, তার সবটাই প্রয়োগ করে সফল হয়েছেন।

ফলে পরীমনি সবার নিকট নষ্ট নারী ও ভিলেন হয়ে গেছেন। একা ও অসহায় হয়ে পড়েছেন। রথি মহারথীদের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে কেউই পরীমনি’র পক্ষ নিতে সাহস দেখাচ্ছে না। মিডিয়া ট্রাইলের ফলে পরীমনি এখন সবার কাছেই চরিত্রহীন নারীতে পরিনত হয়েছেন।

ফলে এখন সবাই লিখে, কথা বলে, শেয়ার দিয়ে, মন্তব্য করে পরীমনি’র চরিত্রহনন করে শুধু মজাই লুটছেন না, নিজেদের অজান্তেই পরোক্ষভাবে অন্তরালে থাকা ঐ সব রথি মহারথির স্বার্থসিদ্ধ করছেন। হুজগে বাঙ্গালী তো এটা ভালোই পারে! এ আর বলার কি? তবে পরীমনি ইস্যুটি যে এতদিন ধরে দেশে “টক অব টপিক” বা ট্রেন্ডে বা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে তা নিয়ে সত্যিকার নিরপেক্ষ সাংবাদিকগণ দারুন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে পারেন আর সামাজিক গবেষক ও মিডিয়া একাডেমিকগণ ভালো গবেষনা করতে পারেন। এ ধরনের প্রতিবেদন ও গবেষনার ফলাফল ভবিষ্যতে অনেক কাজে দিবে, এটা আমি নিশ্চিত।