মোবাইল জার্নালিজমে হাতেখড়ি

মোবাইল

জি. এম. মুরতুজা: ২০১৯ সালের শুরুটা আমার জন্য ছিল দারুন। থমসন রইটার্স ফাউন্ডেশন ব্যাংককে আয়োজন করে “Training of Trainers-ToT on Mobile Journalism” প্রশিক্ষণ। বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন্স, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে মোট ১২ জন সাংবাদিক এই ToT-এ অংশগ্রহণের সুযোগ পান।

একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার। এই প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য ছিল এই দেশগুলোতে মোবাইল জার্নালিজম চর্চা ও প্রসারের সুযোগ সৃষ্টি করা। প্রশিক্ষণটি পরিচালনা করেন বার্তা সংস্থা রইটার্স-এর প্রখ্যাত মাল্টিমিডিয়া জার্নালিস্ট মি: বার্ট নুয়ান। তিনি বিবিসি’র এবং বিবিসি’র হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন এমন তিন’শ জনের বেশী সাংবাদিককে মোবাইল জার্নালিজম প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

এছাড়াও তিনি রইটার্স-এ কর্মরত ২০০ এর বেশী সাংবাদিককে মোবাইল জার্নালিজম প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আমি পেশাগত জীবনে সাংবাদিকতা বিষয়ক দেশে বিদেশে অনেক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছি। তার মধ্যে এই প্রশিক্ষণটি ছিল নি:সন্দেহে সেরা। তিনি হাতে কলমে ধরে ধরে প্রতিটি অংশগ্রহণকারীকে মোবাইল জার্নালিজমের সকল খুঁটিনাটি বিষয়ে শুধু শিক্ষাই দেননি দক্ষ করে গড়ে তুলেছেন। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বিভিন্ন ফোকাসে ও এ্যাঙ্গলে শুটিং, সাক্ষাত্কার ও ভক্সপপ ধারণ, ভয়েসওভার রের্কডিং, টেক্স বর্ণনা সহ বিভিন্ন এডিটিং এ্যাপ ব্যবহার করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রস্তুতকরণ-সবটাই তিনি হাতেকলমে শিখিয়েছেন। মাত্র এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণে প্রতিটি অংশগ্রহণকারী কোন গাইড ছাড়াই ব্যাংককের বিভিন্ন জনবহুল এলাকা, মার্কেটপ্লেস ও অলিগলি ঘুরেঘুরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে পাঁচটি করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রস্তুত করে উপস্থাপন করেছেন। এবং এই রিপোর্টগুলো উপস্থাপনের পর প্রতিটি রিপোর্টের ক্রটিবিচ্যুতি তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন।

এমন যত্নসহকারে তিনি প্রতিটি প্রশিক্ষণার্থীর ভুলক্রটি ধরিয়ে দিয়েছেন যে, এই ভুলগুলো কেউ কোনদিন আর করবেন না। আর একটি মজার বিষয় হচ্ছে পুরো প্রশিক্ষণে তাঁর কোন সহকারী ছিলেন না। প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সকল কাজ তিনি নিজে তদারকি করেছেন। প্রতিদিন প্রশিক্ষণ শুরু হতো ঠিক সকাল ৯:০০ টায় এবং শেষ হতো সন্ধ্যা ৭:০০ টারও পরে। কিন্তু কোন অংশগ্রহণকারী সামান্যতম ক্লান্ত কিংবা বিরক্ত হতেন না। প্রতিদিন এতো এতো এ্যাসাইনমেন্ট থাকতো যে, আমরা রাতেও এডিটিংয়ের কাজ করেছি। এই প্রশিক্ষণ আমাকে শুধুমাত্র মোবাইল জার্নালিস্ট নয় পাশাপাশি মোবাইল জার্নালিজম প্রশিক্ষক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রচন্ডভাবে সহায়তা করেছে।

মি: বার্ট নুয়ান জানান, রইটার্স এবং বিবিসি মোবাইল জার্নালিজম শুরু করার পর দুই শতাধিক ভিডিও ক্যামেরাপার্সনকে চাকুরীচ্যূত করেছে। এখন রইটার্স এবং বিবিসি-এর বেশিরভাগ সাংবাদিককেই মোবাইল ফোন গিয়ে লাইভ দেয়া থেকে শুরু করে রিপোর্টিংয়ের পুরো কাজই করতে হয়। কাজেই বিশ্বে মোবাইল জার্নালিজম চর্চা পুরোদমে শুরু হলে হাজার হাজার ক্যামেরাপার্সন চাকুরী হারাবেন।

কাজেই মূলধারার সাংবাদিকতায় টিকে থাকতে হলে মোবাইল জার্নালিজমে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নাই। মূলধারার মিডিয়াগুলো যতবেশী মাত্রায় ডিজিটালাইজ হবে মোবাইল জার্নালিজমের গুরুত্ব ততোবেশী বাড়বে। যেমন ভারতের এনডিটিভি-এর ৮০ ভাগ কাজ এখন মোবাইল ফোন দিয়ে সম্পন্ন করা হয়। বাংলাদেশের বেশীরভাগ মূলধারার পত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেল এখন ডিজিটাল এবং অনলাইন সেকশনকে বেশীমাত্রায় গুরুত্ব দিয়ে গড়ে তুলছে।

কিন্তু এক্ষেত্রে দক্ষ জনবলের খুবই অভাব। কাজেই যে কেউ যদি এখন মোবাইল জার্নালিজমে দক্ষতা অর্জন করতে পারে, তাহলে তিনি অতি সহজে মূলধারার টেলিভিশন চ্যানেলে তুলনামূলক বেশী বেতনে ডিজিটাল বা অনলাইন সেকশনে চাকুরীর সুযোগ পাবেন। যদিও বাংলাদেশে মোবাইল জার্নালিজম প্রশিক্ষণ গ্রহনের সুযোগ এখনো খুবই সীমিত। হাতেগুনা কয়েকজন সাংবাদিক আছেন, যাঁরা মোবাইল জার্নালিজম প্রশিক্ষণ দেয়ার সক্ষমতা রাখেন।