পরীমনি গডফাদারদের রোষানলের শিকার!

গডফাদারদের

জি. এম. মুরতুজা: প্রথমে ভেবেছিলাম অভিনেত্রী পরীমনি নিশ্চয়ই এমন কোনো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত, যার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি ধরা অভিযানের মতো তার বাড়ীতে এভাবে ঢাকঢোল পিটিয়ে অভিযান চালিয়েছে।

কিন্তু দুধর্ষ অভিযান শেষে পরীমনি’র বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হলো সেগুলো নিতান্তই স্থূল ও হালকা। তার বাসায় মদ পাওয়া গেছে, খালি মদের বোতল পাওয়া গেছে এবং বাসায় মিনি বার পাওয়া গেছে। তাছাড়া পরীমনি নাকি পর্নোগ্রাফি ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত। কিন্তু সেই ব্যবসার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি কাকে ব্ল্যাকমেইলিং করেছেন সেটারও প্রমাণও দিতে পারেনি।

কিংবা কেউ তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগে মামলা করেনি। ঢাকা শহরের অভিজাতদের বাড়িগুলো তল্লাশি করলেও এমন শত শত বোতল মদ পাওয়া যাবে। এখনো সেলিব্রটি নায়ক, মডেল, গায়ক, রাজনৈতিক নেতা ও বড় ব্যবসায়ীর বাড়ীতে এমন মিনি বার পাওয়া যাবে।

বাড়িতে বসে মদ খাওয়া গুরুতর অপরাধ হতে পারে না। এটাকে অপরাধ বলে মনে করি না। মদ খেয়ে মাতলামি করা, কারো উপর চড়াও হওয়া, মারধোর করা অপরাধ হতে পারে। বাসায় মদ পাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত মামুলি বিষয় ও স্থূল অভিযোগ। সবাই জানে অভিজাতরা ও সেলিব্রেটিরা মদ খায়, এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়।

অভিজাতরা ও সেলিব্রেটিরা চিরকাল মদ খেয়ে এসেছেন, বাড়ীতে মদের আসর বসিয়ে এসেছেন, বাড়ীতে মদের সাথে ড্যান্স পার্টি করে আসছেন। পরীমণি এই কারণে অপরাধী হয়ে থাকলে ঢাকা শহরের কয়েক হাজার অভিজাত, সেলিব্রেটি নায়ক, মডেল, গায়ক, রাজনৈতিক নেতা ও বড় ব্যবসায়ী সমানভাবে অপরাধী।

নৈতিকতার স্বার্থেতো তাহলে ইনাদেরও আইনের আওতায় আনা ও গ্রেফতার করা উচিত। কিন্তু আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেই সাহস ও স্পৃধা কোনটাই দেখাবে না, সরকারের নতুজাত নীতি ও মনোভাবের কারনে।

সবচেয়ে বড় কথা হলো পরীমনি একজন অভিনেত্রী। একজন শিল্পী। একজন জনপ্রিয় মানুষ। লাখো মানুষ তার ভক্ত। বাংলাদেশে মডেল এবং অভিনেতা ও অভিনেত্রীর মধ্যে ফেসবুকে সবচেয়ে বেশী ফলোয়ার পরীমনি’র। তিনি কোনো অপরাধ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে তাকে গ্রেপ্তার করা যেত।

আগেও বলেছি, এখনো বলছি বিনা ওয়ারেন্টে এভাবে পরীমনিকে গ্রেফতার সমর্থন করলাম না, করি না। এটা সুস্পষ্ট মানবাধিকার লংঘন। পরীমনিকে এভাবে গ্রেফতারের মাধ্যমে জনগণের কাছে চলচ্চিত্র জগৎ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক বার্তা গেল। অভিনয় শিল্পীদের সম্পর্কে একটি খারাপ বার্তা গেল।

মানুষতো এমনিতেই চলচ্চিত্র জগত সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করেন। পরীমনির ঘটনার মধ্য দিয়ে সেই ধারণা আরো পাকাপোক্ত হবে। তাছাড়া পরীমনির পক্ষে শিল্প ও সংস্কৃতি জগতের কেউ দাঁড়াচ্ছেন না, কথা বলছেন না, প্রতিবাদও করছেন না। এটাও একদিন বুমেরাং হবে।

কেননা অভিনয় জগতের রথি মহারথিরা এভাবে চুপ করে থাকলে ভবিষ্যতে একই ঘটনা অন্য কারো সঙ্গেও ঘটতে ঘটবে, এটা নিশ্চিত থাকুন। যাইহোক নানা বিশ্লেশন থেকে এতটুকু বোঝা যাচ্ছে যে, পরীমনি বিশেষ মহলের রোষানলের শিকার। তাকে নিয়ে বেশ আনন্দেই খেলছেন এক বা একাধিক মহল। সেই খেলার জালে আটকা পড়েছেন পরীমনি।

বোটক্লাবের ঘটনার পর পরীমনিকে নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে তার গডফাদারদের মধ্যে। যে গডফাদাররা পরীমনিকে সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছেন, তাদের মধ্যেকার বিরোধের জের পোহাতে হচ্ছে এখন পরীমনিকে। এই রহস্য ও নেপথ্যের কথা আমাদের মিডিয়া হয়তো কোনদিনই প্রকাশ করার ক্ষমতা রাখে না।

গডফাদারদের খেলার জাল থেকে পরীমনি কিভাবে বেরিয়ে আসে সেটাই এখন দেখার বিষয়। হয়তো পরীমনি হারিয়ে যাবে অথবা দৃশ্যের আড়ালে চলে যাবে। নয়তে স্বগৌরবে আবার পর্দাপন করবে? কোনটা ঘটে সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।