আমারও কোচ ছোটন ভাই!

জি. এম. মুরতুজা: সাফজয়ী নারী ফুটবলারদের কোচ গোলাম রাব্বানী (ছোটন) হলেন আমারও কোচ। আমার ক্লাবও হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন তার কোচিংয়ে। সেই কিশোর বেলায় ঢাকা পাইনিয়র ফুটবল লীগে কদমতলা সংসদের হয়ে খেলতাম আমি। তখন ক্লাশ টেনে পড়ি। আমাদের প্রতিদিনের অনুশীলন হতো বাসাবো মাঠে। ছোটন ভাই তখন ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে ফকিরাপুল ক্লাবের হয়ে খেলতেন দাপটের সাথে। এই কদমতলা সংসদের কোচের দায়িত্ব পালন করতেন অতি বিনয়ী ও ভদ্রজন ছোটন ভাই। প্রতিদিন সকাল ৭ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত আমাদের অনুশীলন করাতেন তিনি। মাঠে প্রতিদিন উপস্থিত হতেন সবার আগে। আমাদের তিনি যেমন শাসন করতেন আবার ভালোবাসতেন মন উজাড় করে। তার কোচিংয়ে আমার ক্লাব কদমতলা সংসদ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঢাকা তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লীগে জায়গা করে নেয়।

তিনি যখন জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচিংয়ের দায়িত্ব পান, তখনই ভেবেছিলাম ভালো কিছু একটা পেতে চলেছে বাংলাদেশ। সত্যিই ছোটন ভাইয়ের কোচিংয়ের ফলাফল দেখিয়ে দিয়েছেন আমাদের নারী ফুটবলাররা। সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে দক্ষ কারিগর পেলে বাংলার নারীরাও পারে নতুন ইতিহাস গড়তে। সেই ছোটন ভাইকে যখন তার বন্ধুজনেরা মশকরা বা ঠাট্রা করে বলেন ‘মহিলা কোচ’ তখন আমারও কানে বাজে কথাটি। পুরুষতন্ত্র যে শুধুমাত্র নারীদের নয় পুরুষদেরও দমিয়ে রাখতে উৎসাহিত করে তার বাস্তব প্রমান হচ্ছে- ছোটন ভাইকে ‘মহিলা কোচ’ বলে সংবোধন করা। কিন্তু জাত খেলোয়াড়দের যে কোনভাবে দমিয়ে রাখা যায় না, সেটাও প্রমান করে দিয়েছেন এই ছোটন ভাই।

প্রিয় ছোটন ভাই আপনাকে স্যালুট। আপনার দীক্ষা নিয়ে হয়তো আমি ফুটবলের জন্য কিছু করতে পারিনি। কিন্তু আপনার দীক্ষা আমার পেশাগত জীবনকে করেছে অনেক সমৃদ্ধ। আপনার সাথে দেখা হলে কিন্তু আমিও বলবো আপনি ছিলেন “কিশোর কোচ”। হয়তো আপনার বন্ধুবান্ধবদের তখন মনে পড়বে-আপনি একটি কিশোর দলকে কিভাবে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন লীগে অংশ নেয়া ৮০ টি দলের মধ্যে থেকে। বলে রাখি এক সময় ঢাকা পাইনিয়র ফুটবল লীগ ছিল জাতীয় দলের জন্য ফুটবলার তৈরীর সবচেয়ে গুরুত্বতম প্লাটফর্ম। আমিও খেলেছি জাতীয় অনুর্ধ ১৯ দলের হয়ে, মোহমেডান জুনিয়র দলে এবং ঢাকা তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথম বিভাগ লীগে, রাজশাহী জেলা ও বিভাগীয় দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে। প্রিয় ছোটন ভাইয়ের কথা বলতে গিয়ে আমার ফুটবল ক্যারিয়ারের স্বর্ণালী দিনগুলোর স্মৃতি মানসপটে ভেসে উঠছে। আহা…ফুটবলের সেই স্বর্ণালী দিনগুলো! যদি আবার ফেরত যেতে পারতাম সেই স্বর্ণালী দিনে! ঢাকার কদমতলা, বাসাবো, খিলগাঁও, মুদ্দা, শাহজাহানপুর, কমলাপুর, ফকিরাপুলে সেই বিকেলগুলোতে জমজমাট আড্ডায়! বিশেষ কারনে আমার ফুটবল ক্যারিয়ারের স্থায়িত্বকাল ছিল মাত্র পাঁচ বছর। স্টেডিয়ামে খেলা চলাকালে রেফারীর সাথে অপ্রিতীকর ঘটনা ঘটিয়ে ফেলায় বাফুফে আমাকে সমস্ত প্রকার ফুটবল লীগ থেকে সাসপেন্ড করেছিল পাঁচ বছরের জন্য। সাসপেন্ড করার সংবাদ পাওয়ার দিনেই ক্ষোভে দূ:খে আমি স্বপ্নের ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে ছিলাম। আর কখনো ফিরে যায়নি ফুটবল মাঠে!