বদলি হয়েও শিক্ষকদের পিছু ছাড়েননি সেই অধ্যক্ষ

শিক্ষকদের একাংশকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন রাজশাহী কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) বিদায়ী অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মাহবুবুর রশিদ তালুকদার। নানান অনিয়মের অভিযোগে গত ২৭ মার্চ তার বদলির আদেশ দেয় জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ মন্ত্রনালয়।

এরপর থেকেই প্রতিপক্ষ শিক্ষকদের দমনে মরিয়া হয়ে ওঠেপড়ে লাগেন মাহবুবুর রশিদ। গত ৪ এপ্রিল নতুন কর্মস্থল লক্ষ্মীপুর টিটিসিতে যোগদান করেন তিনি। অভিযোগ উঠেছে, নতুন কর্মস্থলে গিয়েও তিনি রাজশাহী টিটিসির শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কলকাঠি নাড়ছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষকদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরেই তাদের চাপে রাখছিলেন অধ্যক্ষ। ছুতো পেলেই দিচ্ছিলেন কারণ দর্শানোর নোটিশ। জবাব মনো:পুত না হলেই করছিলেন তিরস্কার। তাতেও দমন করতে না পেরে শিক্ষকদের নামে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করছিলেন। অধ্যক্ষের এমন আচরণ মানতে পারছিলেননা শিক্ষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ (চলতি দায়িত্বে) আখতারা শাহীন, সিনিয়র ইন্সট্র্রাক্টর আতাউর রহমান, আফছার উদ্দিন ভূঁইয়া, আফজালুল হক প্রামানিক, নাজিম উদ্দিন আহমেদ আল সিরাজী, ইন্সট্রাক্টর গোলাম মো. সারোয়ার হোসেন ও হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ আনেন অধ্যক্ষ।

এদের মধ্যে আতাউর রহমান জনশক্তি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি টিটিসি শাখার সভাপতির পদে রয়েছেন। সমিতির সদস্যদের সংগঠিত করে অধ্যক্ষের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করেন এসব শিক্ষক। অপসারণসহ নানান অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ যায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। গোপন তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় বদলি করা হয় মাহবুবুর রশিদ তালুকদারকে।

ভুক্তভোগী শিক্ষকদের ভাষ্য, বদলির আদেশ পাবার আগেই ৩ ফেব্রুয়ারী অধ্যক্ষ মাহবুবুর রশিদ তালুকদার উপাধ্যক্ষ আখতারা শাহীনসহ ছয় শিক্ষকের বদলির জন্য জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে চিঠি পাঠান। এদের বিরুদ্ধে আনেন রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ড ছাড়াও অসদাচরণের অভিযোগ।

অধ্যক্ষের জোর তদবিরে গত ২৭ মার্চ আতাউর রহমান, আফছার উদ্দিন ভূঁইয়া এবং আফজালুল হক প্রামানিকের বদলির আদেশ আসে। ওই দিনই এই তিন শিক্ষককে অবমুক্ত করেন অধ্যক্ষ। অথচ একই দিন নিজের বদলির আদেশ পেলেও থেকে যান স্বপদেই।

২০১২ সালের ১২ মার্চ থেকে রাজশাহী টিটিসিতে কর্মরত ছিলেন মাহবুবুর রশিদ তালুকদার। এই সময়ের মধ্যে পুরো টিটিসিকে নিজের ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলেন। দীর্ঘদিন ধরে একই কর্মস্থলে থাকায় শিক্ষকদের একাংশ নিয়ে গড়ে তোলেন নিজস্ব বলয়। অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন টিটিসিকে।

অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন কারখানা সহকারী হাসিবুল ইসলামকে পদাবনমন করে বাড়ির দারোয়ান বানান মাহবুবুর রশিদ তালুকদার। বার বার স্বপদে ফেরার আবেদন করেও ব্যর্থ হন হাসিবুল। শেষ পর্যন্ত তিনি ক্ষোভে অভিমানে আত্মহত্যা করেন।

গরু-ছাগলের খামারে কাজ করতে রাজি না হওয়ায় দারোয়ান গিয়াস উদ্দিনের নামে সিসি টিভি ক্যামেরা চুরির মিথ্যে অভিযোগ আনেন অধ্যক্ষ। পরে স্বেচ্ছায় অবসরে যেতে রাজি হওয়ায় সেই অভিযোগ তুলে নেন। অন্যদিকে, অধ্যক্ষের আর্থিক অনিয়মের প্রতিবাদ করে স্বে”ছায় অবসরে যেতে বাধ্য হন শিক্ষক গ ম ফজলুর রহমান।

উল্টো আরেক দারোয়ান শহিদুল ইসলাম পলাশকে ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) নিযুক্ত করেন। এর বাইরে শিক্ষক রাশেদ আলম, দেওয়ান মঞ্জুর, রাশেদুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, নজরুল ইসলাম সরদার, রেজাউল করিম ও সাঈদা মমতাজ নাহরিনা এবং স্টোর কিপার আবদুল জলিল, কারখানা সহকারী শহিদুল ইসলাম ও আবদুল মোত্তালেব, লাইব্রেরিয়ান শাহজাহান আলীকে দেন বাড়তি সুবিধা।

তাদের সাথে নিয়েই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন অধ্যক্ষ। বদলি হবার পরও এদের মাধ্যমেই রাজশাহী টিটিসিতে অচলাবস্থা সৃষ্টির পায়তারা করছেন মাহবুবুর রশিদ তালুকদার। সর্বশেষ সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর ওয়ালিউর রহমানসহ আরো কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালান।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মাহবুবুর রশীদ তালুকদার বলেন, আমি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করিনি। এগুলো কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী মিথ্যা রটাচ্ছেন। তবে প্রতিষ্ঠানে শৃংখলা ফেরাতে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একই কর্মস্থলে থেকে বিশৃংখলা সৃষ্টি করায় ওই পাঁচ শিক্ষকের বদলির সুপারিশ করেছিলেন। তদন্তে অধিদপ্তর এর প্রমাণ পেয়েছে। এর মধ্যে তিন শিক্ষকরে বদলির আদেশ দিয়েছেন।

নতুন যোগদান করায় প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি রাজশাহী টিটিসির বর্তমান অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আবদুর রহিম। তবে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ মন্ত্রনালয়ের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. নূরুল ইসলাম বলেন, তাকে (মাহবুবুর রশিদ তালুকদার) নিয়মমেনেই বদলি করা হয়েছে। এরপরও তিনি আগের কর্মস্থালে অচলাবস্থার সৃষ্টি করছেন-বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সেখানকার কেউ আমাদের জানায়নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিএ-১৬/২২-০৪ (নিজস্ব প্রতিবেদক)