গোয়েন্দা নজরদারিতে জাবি উপাচার্য

কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্যের ঘটনা সামনে আসায় গোয়েন্দা নজরদারিতে হাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ।

গোয়েন্দারা নজর রাখছেন এই কেলেঙ্কারীতে জড়ানো জাবি ছাত্রলীগের ৫ নেতা- সাদ্দাম, চঞ্চল, জুয়েল, তাজ ও অন্তরের উপরেও।

একজন সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের একটি গোয়েন্দা দল এরই মধ্যে ছায়া তদন্ত করতে মাঠে নেমে গেছেন।

সূত্র বলছে, জাবির শিক্ষকদের একটি পক্ষ থেকে জাবি উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জমা দেয়া হয়। সে অভিযোগের অনুলিপি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগে পাঠানো হয়। গোয়েন্দা বিভাগ সে অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। তারই অংশ হিসেবে গোয়েন্দা বিভাগের দলটি সন্ধ্যায় জাবি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে টেন্ডার বাণিজ্যে কোটি টাকা কমিশন কেলেঙ্কারির বিষয়টি খোঁজ-খবর নিচ্ছেন তারা।

সোমবার সকালে জাবির প্রশাসনিক শাখায় টেন্ডার সংশ্লিষ্ট এলডিএ, ইউডিএ এবং কম্পিউটারম্যানসহ একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে গোয়েন্দারা কথা বলবেন জানা গেছে। তবে রোববার রাত থেকেই জাবির প্রশাসন শাখার একাধিক ব্যক্তিকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, শুধু জাবির প্রশাসন শাখার লোকজন নয়, গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন জাবির উপাচার্যও। তবে এখনই গোয়েন্দারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শোভন ও জিএস রাব্বানীর সঙ্গে জাবির ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে টেন্ডারের কমিশন সংক্রান্ত কথোপকথনের একটি অডিওর কপি পেয়েছে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

অডিওর কথোপকথনে রাব্বানীর সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা সাদ্দাম, জুয়েল, তাজ, অন্তর, চঞ্চলের সঙ্গে কমিশনের এক কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারার বিষয়টি উঠে এসেছে। পাশাপাশি জাবির উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের দেয়া এক কোটি টাকা তার লোকজন দিয়ে হলে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

সে এক কোটি টাকার ৫০ জুয়েল, ২৫ চঞ্চলের, ২৫ সাদ্দাম ও তাজের মধ্যে ভাগ করে নেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বা তৎকালীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শোভন ও জিএস রাব্বানীকে টাকা দেয়ার বিষয়টি পরিষ্কার নয়। কোটি টাকার লেনদেনের বিষয়টি ফোনে সাদ্দামের কাছ থেকে জেনেছেন রাব্বানী।

টেন্ডার কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে তাদের পদ ছাড়তে হয়েছে। একই অভিযোগ উঠেছে জাবি উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করে দেখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ঘটনার সত্যতা মিললে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।

বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক শিক্ষক বলেছেন, কমিশন কেলেঙ্কারির ঘটনায় জাবি উপাচার্য দায় এড়াতে পারেন না। একজন উপাচার্যের কাছে ছাত্রনেতারা কীভাবে কমিশন দাবি করার সাহস পান, এ বিষয় নিয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে উপাচার্য কীভাবে বৈঠক করেন। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনার পাশাপাশি নানা রকম গুঞ্জন উঠেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, জাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি কঠোরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আল মামুন বলেন, অভিযোগ খুবই গুরুতর তবে বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হতে পারে।

টেন্ডার বাণিজ্যে কমিশনের কোটি টাকার বিষয়ে জাবি উপাচার্য একাধিকবার ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা নজরদারিতে এসেছে গোয়েন্দাদের। বিষয়টি সরকারের নীতি-নির্ধারকদেরও নজরে আছে। ছাত্রলীগের দুই নেতাকে অব্যাহতির ঘটনার পর জাবি উপাচার্য এবং ছাত্রলীগ জাবি শাখার নেতা জুয়েল, সাদ্দাম, তাজ, চঞ্চল ও অন্তর জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পর্ব শেষ হলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেন বলেন, কমিশন আদায় করার বিষয়টি নিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কেউ কেউ উপাচার্যের এমন ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। তবে এ নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রমে কোনও প্রকার প্রভাব ফেলেনি বলে জানান এই শিক্ষক।

রোববার রাতে এ বিষয়ে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশে এই প্রথম শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাধ্যতামূলকভাবে এই দুইজনকে পদত্যাগ করানো হয়েছে। অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স অবস্থানে আছে। অন্যায়-অনিয়ম যে-ই করুক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

বিএ-০৩/১৬-০৯ (শিক্ষা ডেস্ক)