হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নির্যাতনের পর ফাহাদকে হত্যা, উধাও ছাত্রলীগ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শের-ই বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে।

এই কক্ষটি ব্যবহার করতেন চার জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে প্রত্যয় মুবিন নামের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী দুর্গাপূজার ছুটিতে দুই দিন আগে গ্রামের বাড়িতে গেছেন।

কক্ষে যে তিনজন ছিলেন তারা প্রত্যেকেই ছাত্রলীগ নেতা। ওই তিন জনই এখন পলাতক।

এরা হলেন-বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদফতর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবাবিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ ওরফে সকাল।

ফাহাদের সহপাঠীরা জানিয়েছেন, আবরার ফাহাদ শের-ই বাংলা হলের ১০১১ নং কক্ষে থাকতেন। রাত ৮টার দিকে শের-ই বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে কয়েকজন এসে ফাহাদকে ডেকে নিয়ে যায়। তাকে সেখানে নিয়ে পেটানো হয়।

পরে ফাহাদের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তার লাশ হলের নিচ তলায় একটি তোশকের ‍ওপর ফেলে রাখা হয়। প্রমাণ লোপাট করতে ঘটনার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ মুছে ফেলেন অভিযুক্তরা।

এই কক্ষটি ছিলো ছাত্রলীগের টর্চার সেল

নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে জানান, শের-ই বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষটি ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের টর্চার সেল। ইচ্ছেমত ছাত্রদের ধরে এনে এখানে নির্যাতন চালাতেন ছাত্রলীগ নেতারা।

ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কক্ষ হিসেবে ব্যবহার হতো কক্ষটি। এই কক্ষে বসেই তৈরী হতো অপকর্মের নীল নকশা।

সোমবার সকালে কক্ষটিতে অভিযান চালিয়ে নির্যাতনে ব্যবহৃত ছয়টি ক্রিকেট স্ট্যাম্প, চাপাতি ও বেশকিছু মদের বোতল জব্দ করেছে পুলিশ।

ওই হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ওই রুমে সবসময় মদ্যপান চলত। তারা রাতে মদ খেয়ে চিৎকার করতেন। তাদের কেউ কিছু বলতে গেলে গালিও দিতেন। আশপাশের রুমে যারা থাকেন, তারা ভালোভাবে ঘুমাতে পারতেন না।

এদিকে, ফাহাদের মৃত্যুর ঘটনায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও সহসভাপতি ফুয়াদ হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা দুজনই বুয়েটের শিক্ষার্থী। শের-ই-বাংলা হলে থাকেন।

পুলিশ জানিয়েছে, রোববার দিনগত রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের নিচতলা থেকে আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা। ধারণা করা হচ্ছে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনায় নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বিএ-০৪/০৭-১০ (শিক্ষা ডেস্ক)