বিক্ষোভে উত্তাল বুয়েট ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থীদের সাত দফা দাবি

বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাস। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ (২১) হত্যাকাণ্ডের প্রতিকবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকেই আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। ‘আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার চাই’—ব্যানারে এ মিছিলের হাজারো শিক্ষার্থী অংশ নেন।

পরে সাংবাদিকদের সামনে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন আন্দোলনকারীরা। একই সঙ্গে বুযেটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধেরও দাবি জানান তারা।

দাবিগুলো হলো—

১. খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২. ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিশ্চিতভাবে শনাক্তকৃত খুনিদের সবার ছাত্রত্ব আজীবন বহিষ্কার করতে হবে।

৩. দায়েরকৃত মামলা দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।

৪. বুয়েট উপাচার্য ঘটনার ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও ক্যাম্পাসে না আসার বিষয়ে মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে তাকে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে জবাব দিতে হবে। ঘটনার পর ডিএসডব্লিউ (ছাত্রকল্যাণ পরিচালক) স্যারের ঘটনাস্থল থেকে পলায়নের বিষয়ে বিকেল ৫টার মধ্যে ক্যাম্পাসে এসে তাকে জবাব দিতে হবে। না হলে বুধবার থেকে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

৫. আবাসিক হলগুলোতে র‌্যাগের নামে ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সব প্রকার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ এবং এসব ঘটনায় জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে আহসানউল্লাহ হল ও সোহরাওয়ার্দী হলে নির্যাতনের ঘটনাগুলোতে জড়িত সবার ১১ তারিখের বিকেল ৫টার মধ্যে ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে।

৬. রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে সাধারণ ছাত্র উৎখাতের ব্যাপারে নীরব থাকা ও ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে ১১ তারিখ বিকেল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।

৭. মামলা চলাকালীন সব খরচ ও আবরারের পরিবারের সব ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে।

এদিকে, দুপুরে বুয়েট শহীদ মিনারের পাদদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. একেএম মাসুদ রানা।

তিনি বলেন, অতীতে যেসব বেআইনি ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর কোনো বিচার হয়নি। তারই খেসারত হিসেবে আজকের এই হত্যাকাণ্ড। আগের ঘটনার কোনো ব্যবস্থা নিলে এ ঘটনা ঘটত না।

শিক্ষক সমিতির সদস্যরা গতকাল (সোমবার) ভিসির সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি বলেছেন, ব্যবস্থা নেবেন। তারপর আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষক সমিতি ছাত্রদের এই আন্দোলনের সঙ্গে একমত। এটি যৌক্তিক বলে মনে করি আমরা।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বুয়েটের প্রধান ফটক বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকেরা পকেট গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গেট খুলে দেয়া হয়।

দুর্গাপূজা উপলক্ষ বুয়েটের সমস্ত একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ। তবে হত্যার প্রতিবাদ জানাতে সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে আসতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।

রোববার রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করে চকবাজার থানা পুলিশ।

জানা যায়, ওই রাতে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ফাহাদকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েক নেতা।

বিএ-০৩/০৭-১০ (শিক্ষা ডেস্ক)