বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করবে ভর্তির মাপকাঠি

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোতে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা হবে৷ কিন্তু সাধারণ কোনো স্কোর থাকবে না৷ বিশ্ববিদ্যালয়ই নিজেরাই নির্ধারণ করবে কত পেলে তারা ছাত্র ভর্তি করা যাবে৷

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যার যা শর্ত তাই থাকছে৷ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখেই এই বুধবার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের( ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজ৷ তিনি আরো জানান,‘‘চারটি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো তাদের সিদ্ধান্ত জানায়নি৷ তাই এটাকে আমরা সমন্বিত না বলে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা বলছি৷”

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চারটি বিশ্ববিদ্যালয় এই কেন্দ্রীয় ( সমন্বিত) ভর্তি পরীক্ষার বিরোধিতা করছে সেগুলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েট৷ ফলে এর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপচার্যরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের( ইউজিসি) বৈঠকে গরহাজির ছিলেন৷ কিন্তু বুধবার তারা বৈঠকে হাজির হন৷ কিছু শর্ত সাপেক্ষে তারা কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করার কথা বলেছেন৷ এজন্য তারা একমাস সময় নিয়েছে৷ তবে তারা আলাদাভাবে পরীক্ষা নিতে চাইলে নিতে পারবে৷

জানা গেছে, ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে ১০০ নাম্বারের হবে৷ কিন্তু ভর্তির যোগ্যতার জন্য সর্বনিম্ন স্কোর কত হবে তা নির্ধারণের ক্ষমতা থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হাতে৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের মান ও সক্ষমতা বিবেচনা করে এই স্কোর নির্ধারণ করবে৷

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন,‘‘আমরা স্বায়ত্তশাসিত বলে আমাদের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নেব৷ মানের একটি প্রশ্ন থেকেই যায়৷ সেটা বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা হলেও ভর্তির যোগ্যতার সর্বনিম্ন স্কোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই নির্ধারণ করবে৷ ফলে ১০০ নাম্বরের মধ্যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সর্বনিম্ন স্কোর ৪০ আবার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন স্কোর আবার ৭০ হতে পারে৷”

সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং কলা এই তিন বিভাগে ১০০ নাম্বারের মধ্যে পরীক্ষা হবে৷ সবার জন্য একই প্রশ্ন৷ আর বিশেষায়িত বিষয়গুলোর জন্য আলাদা প্রশ্ন হবে৷ তবে তাও সবার জন্য একই৷ কেন্দ্রীয়ভাবে এই পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই একই দিনে একই সময়ে আয়োজন করবে বলে জানান ফারজানা ইসলাম৷

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচর্য আখতারুজ্জামান বলেন,‘‘বিষয়টি মত দ্বিমতের নয়৷ আমরা ইউজিসির সভায় নানা বিষয়ে কথা বলেছি৷ আলোচনা করেছি৷ এখন আমরা বিষয়টি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় তুলব৷ সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় যাবে কিনা৷’

অধ্যাপক দিল আফরোজ বলেন,‘‘এই কেন্দ্রীয় পরীক্ষার কারণে ছাত্রদের যাতায়তের ভোগান্তি কমবে, খরচ কমবে৷ তাদের মানসিক চাপও কমবে৷ আর একটি পরীক্ষা দিয়েই তাদের যোগ্যতা ৷অনুযায়ী পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভতি হতে পারবেন৷ কেন্দ্রীয়ভাবে এই পরীক্ষা নেয়ার জন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলেই একটা কমিটি করবে৷ তারাই প্রশ্ন তৈরি করবে৷

আর প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটি কেন্দ্র৷ আমরা শুধু তাদের সহযোগিতা করব৷ ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দেয়ার পর কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির কাজ শেষ হবে৷ পরে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রচলিত পদ্ধতিতে কিংবা যেভাবে তারা উপযুক্ত মনে করে তাদের নিজ নিজ প্রয়োজনীয় শর্তাবলি সংযোজন করে আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে এবং নতুন করে আর পরীক্ষা না নিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত স্কোরকে বিবেচনা করেই ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করবে৷”

অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন,‘‘এখানে মানের প্রশ্ন রয়েছে৷ কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা হলে প্রশ্নের মান খারাপ হবে৷ প্রশ্ন কেমন হবে, পদ্ধতি কি হবে কোনো বিষয়ই এখানো স্পষ্ট নয়৷ মেডিক্যালের মত একটি বিষয়ে এটা হতে পারে৷ এখানেতো নানা বিষয়৷ আর আমাদের স্বায়ত্তশাসন হয়েছে৷ আমাদের সিদ্ধান্ত আমরাই নেব৷’

দেশে মোট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৪৬টি৷ এরমধ্যে ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডার গ্রাজুয়েট প্রোগ্রাম আছে৷

এসএইচ-০৪/১৪/২০ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)