নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রবেশ করছে বাংলাদেশ

২০২৫ সাল থেকে নতুন এক শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ৷ এই পরিবর্তন আসছে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে৷ পরীক্ষা, পাঠ্যক্রম ও বিষয় ভিত্তিক বিভাগ সবখানে এই পরিবর্তন আসবে৷

নতুন এই ব্যবস্থায় তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষাই থাকবে না৷ পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে থাকছে না কোনো পাবলিক পরীক্ষা৷ নবম ও দশম শ্রেণিতে কোনো বিভাগ থাকবে না৷ সব শিক্ষার্থীর জন্য একই বিষয়৷ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে বিভাগ থাকবে৷ এসএসসি ও এইচএসসিতে পাবলিক পরীক্ষা হবে৷ এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন হবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ফলের ভিত্তিতে৷ আর যেখানে পাবলিক পরীক্ষা থাকছে না সেখানে ক্লাসভিত্তিক শিক্ষকদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকছে৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার এই নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুমোদন করেছেন৷
২০২৫ সাল থেকে এটা পুরো কার্যকর হলেও আগামী বছর থেকেই এটা নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে৷

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন আগামী বছর থেকে ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটা প্রকল্প আকারে শুরু হবে৷ আর তা হবে প্রথম ও ষষ্ঠ শ্রেণীতে৷ ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে পুরোপুরি নতুন ব্যবস্থা চালু হবে৷ ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে এবং ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণীতে এই শিক্ষাক্রম শুরু হবে৷ ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে৷

নবম ও দশম শ্রেণীতে বিজ্ঞান, মানবিক কিংবা ব্যবসায় শিক্ষার জন্য আলাদা কোনো বিভাগ থাকছে না৷ সবাইকে ১০ টি বিষয় সাধারণভাবে পড়তে হবে৷ দশম শ্রেণীর পাঠ্যক্রমে হবে এসএসসি পরীক্ষা৷ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থাকবে৷ বিভাগের বিষয়গুলো ঐচ্ছিক হিসেবে পড়বে শিক্ষার্থীরা৷

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন,”এটা বাস্তবায়ন হলে শিক্ষায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে৷ বিশেষ করে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বাংলা, ইংরেজি, গণিতসহ প্রয়োজনীয় মৌলিক বিষয়গুলো পড়লে তাদের শিক্ষার ভিত অনেক শক্ত হবে৷ পরে তারা যে কোনো বিষয় নিয়ে পড়তে পারবে৷”

তবে তার মতে,”এজন্য শিক্ষায় ব্যাপক বিনিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি লাগবে৷ শিক্ষকেরা হলেন ছাত্রদের কাছে আদর্শ এবং অনুসরণীয়৷ সেই মানের শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে৷ নিশ্চয়ই সরকার গবেষণা করে পরিকল্পনা করেছে বলে মনে করি৷”

তিনি বলেন,”আরো একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে৷ এই করোনার সময় অনেক শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করেছে৷ বড় একটি অংশ সেই সুযোগ পায়নি৷ তাই তাদের শিক্ষায় যে গ্যাপ তৈরি হয়েছে তা পুষিয়ে দিতে হবে৷ তাদের যে অদক্ষতা তৈরি হয়েছে তা এখন পরিকল্পনা করে কাটানোর ব্যবস্থা করতে হবে৷ তা না হলে এই শিক্ষার্থীরা অপরিপক্কই থেকে যাবে৷”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. হালিম নতুন এই ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তার কথা, শিক্ষার্থীদের শুধু পরীক্ষা নয়, ক্লাসের ভিত্তিতেও মূল্যায়নের পদ্ধতি আধুনিক এবং যুগোপযোগী৷

তবে তিনি মনে করেন,”এবিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে যে, শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষকদের হাতে জিম্মি হয়ে না যায়৷ বাংলাদেশে কোচিং-এর একটা প্রভাব আগে থেকেই আছে৷ এখন শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে বা কোচিং না করলে যদি শিক্ষার্থীদের অবমূল্যায়নের শিকার হতে হয় তবে তা একটি নতুন সংকট তৈরি করবে৷”

তার মতে,” কতগুলো পবলিক পরীক্ষা বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত ভাল৷ কারণ এই পরীক্ষা নিতেই প্রতিবছর অনেক সময় চলে যায়৷ আর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি মিলিয়ে এইচএসসিতে গ্রেডিং-এর সিদ্ধন্ত ভালো৷ এতে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমবে৷ তবে এর সুফল পেতে হলে টিচিং- লার্নিং প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে হবে৷”

বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষকেরা এখন যথেষ্ট ভালে প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন৷ এখন তাদের এই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগাতে বিনিয়োগ প্রয়োজন,বললেন এই শিক্ষা বিশেষজ্ঞ৷

এসএইচ-০২/১৫/২১ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)