যে বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী নেই

শিক্ষার্থী

নামে যেমন, তেমনি দেখতেও বিদ্যালয়। আর ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বসার জন্য চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ সবই আছে। শিক্ষকরা প্রতিদিন এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে যান। কেবল আসে না কোনো শিক্ষার্থী।

প্রায় দশ বছর ধরে এভাবে চলে আসছে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার চর-বাঁশবাড়ীয়ায় ১৪৫ নম্বর চর-বাঁশিবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অবিশ্বাস্য হলেও ঘটনা সত্যি বলে স্বীকার করেছেন খোদ বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম।

প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দশ বছর ধরে শিক্ষকরা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি চালু রেখেছেন।

সূত্রটি আরও জানায়, উপজেলায় তেতুঁলিয়া নদীর মাঝখানে জেগে ওঠে একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর। ওই চরের নাম রাখা হয় চর-বাঁশবাড়িয়া। ওই চরের মধ্যে আস্তে আস্তে ঘনবসতি গড়ে ওঠে।

চরের শিশুদের শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে ১ হাজার ৫০০ বিদ্যালয় প্রকল্পের আওতায় এই উপজেলায় ২০১১ সালে চর-বোরহান, চর-শাহজালাল, চরহাদী ও চর-বাঁশবাড়িয়াসহ ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১২ সালে চর-বাঁশবাড়িয়ায় দেশের সব চেয়ে বড় বীজবর্ধন খামার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই খামারের জন্য সরকার সব জমি অধিগ্রহণ করে নেয়।

জমি অধিগ্রহণের কারণে চর-বাঁশবাড়িয়ায় বসতি শূন্য হয়ে পড়ে। বর্তমানে বীজবর্ধন খামারে কাজের কারণে ছাপড়া দিয়ে ১০-১৫টি পরিবার অস্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছে। ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চর-বাঁশবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

২০১৮ সালে উপজেলার ঢনঢনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একজন শিক্ষককে মৌখিক সংযুক্তি আদেশ দিয়ে ওই বিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু করা হয়। এরপর আরও ৩ জন শিক্ষককে পদায়ন করা হয়। বর্তমানে ওই বিদ্যালয় ৪ জন শিক্ষক রয়েছেন।

প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়টিতে ২০ জন শিক্ষার্থীকে খাতাকলমে দেখালেও বাস্তবে আরও কম থাকতো। আর মাছ ধরার মৌসুমে কেউ আসতো না বিদ্যালয়ে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে কোনো শিক্ষার্থী নেই বলে জানান প্রধান শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে এই এলাকায় কোনো জনবসতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নদীপথ হওয়ায় যাতায়াতেরও কোনো ব্যবস্থা নেই।’

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থী না থাকলেও আমাদের প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাওয়া-আশা করতে হয়। নিয়মিত যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় সকাল ৬টার সময় বীজবর্ধন খামারের ট্রলারে নদী পার হয়ে শ্রেণি কার্যক্রম শেষ করে বিকাল ৩টার সময় তাদেরই ট্রলারে আবার ফিরতে হয়।’

এ বিষয় জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী না থাকার কথা শুনেছি। আমরা বিদ্যালয়টি অন্য জায়গায় স্থানান্তরের জন্য ওপরে সুপারিশ পাঠিয়েছি।’

তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক