ক্লাসের সময় শিক্ষার্থীদের চলে পদ্মা পাড়ে আড্ডা : দেখবে কে?

রাজশাহী মহানগরীর বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র পদ্মা নদীর পাড়। বিকেলে সর্বস্তরের মানুষের পদচারনায় মুখরিত থাকলেও সকাল থেকে দুপুর অবধি ভিড় থাকে মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের। মুলত ক্লাস বাদ দিয়েই চলে তাদের জমজমাট আড্ডা। বিশেষ করে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পরেই আড্ডায় মেতে উঠে। বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ছে এসব শিক্ষার্থীরা। প্রকাশ্যে ধূমপান করছে। ছেলেমেয়ে হাত ধরে ঘুরছে। বসছে ঘনিষ্ঠভাবে। শুধু কি তাই সেই সাথে চলে মোবাইলে সেলফি তোলার হিড়িক। এসব দেখে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের মনে প্রশ্ন উঠছে, এদের কি দেখার কেউ নেই? নাকি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বিষয়গুলো জানেন না?

সীমান্ত অবকাশের পাশ থেকে টি-বাঁধ পেরিয়ে পুলিশ লাইনের সীমান্ত পর্যন্ত পদ্মার বাধ ঘেঁষে রয়েছে পিচ ঢালা পথ। এ রাস্তায় দামি ব্র্যান্ডের মোটরবাইক নিয়ে বেপরোয়া চলাফেরা করে ধনীর দুলালরা। এদের অধিকাংশের হেলমেট নেই। হাইস্পিডের কারণে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এরাই মেয়েদের যৌন হয়রানি করে। শিক্ষার্থীদের এ ধরনের বেপরোয়া আচরণ তাদের ভবিষ্যৎ পড়েছে উৎকণ্ঠায়।

মুলত এসব আড্ডা কেন্দ্রগুলো হলো পদ্মা পাড়ের বড় কুঠি, বড়কুঠিসংলগ্ন কফি বার, পাঠানপাড়াসংলগ্ন মুক্তমঞ্চ, সীমান্ত নোঙর, সীমান্ত অবকাশ, সিমলা পার্ক, সার্কিট হাউজের রাস্তা, টি-বাঁধ এবং আই-বাঁধ এলাকায়। মহানগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ক্লাস শুরু হয়। অথচ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যেই শিক্ষার্থীদের চলাচলে মুখরিত হতে থাকে পদ্মা পাড়। আর আড্ডা চলে দুপুর ২টা আড়াইটা পর্যন্ত।

দলবেঁধে আড্ডা দেবার মুল অংশে থাকে শিক্ষার্থীদের প্রকাশ্যে ধূমপান। সেই সাথে চলে অশ্লীল ভাষায় একে অপরের সঙ্গে কথা। তাদের পাশ দিয়ে হেটে চলা অনেকেরই অভিযোগ এ সবের পাশাপাশি থাকে মোবাইলে অশ্লিল ছবি দেখা। পাশ দিয়ে বেশি বয়সি মানুষ চলাফেরা করলেও ব্যাপারটি তারা আমলে নেয় না।

টি-বাঁধে শিক্ষার্থীদের জটলা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বাঁধের ওপর ফুচকা, চটপটি এবং পেয়ারাসহ নানা ধরনের খাবার বিক্রি হয়। পাশেই বাঁধের নিচে বসে জুটিতে জুটিতে চলছে প্রেম। ফলে সেখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা বিব্রত হন।

শিমলা পার্কে কথা হয় অবসরপ্রাপ্ত এক বেসরকারি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেনের সাথে। তিনি জানালেন প্রতিদিন সকালে তিনি বাঁধের রাস্তা দিয়ে হাটাহাটি করেন। বাসা ফিরতে ফিরতে কোন কোন দিন সকাল সাড়ে ৯টা বেজে যায়। এ সময়ের মধ্যেই দেখতে পান শিক্ষার্থীরা আনাগোনা শুরু করেছে। চলার পথেই তাদের গল্পে যা শোনায় তাতে শিক্ষার কোন বিষয় থাকে না।

তিনি বলেন বাইক যে গতিতে চালায় তাতে রাস্তায় ভয়ে ভয়ে চলতে হয়। দীর্ঘদিন থেকেই এসব হচ্ছে। কিন্ত পরিস্থিতি আলোকে মনে হয় এসব দেখার কেউ নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের দিকে অভিযোগের তীর ছোঁড়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অনুপস্থিতি কি কোনভাবেই টের পান না?

রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল খালেক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে যে শিক্ষার্থীরা ক্লাস ছেড়ে নদীর পারে আড্ডা দিচ্ছে। কলেজে সকাল ৮টায় ক্লাস শুরু হয়। এরপর কলেজের সব গেটে গেটম্যান রাখা হয়। এ কারণে শিক্ষার্থীরা বাইরে বের হতে পারে না।

তিনি বলেন, পারবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে। এখনকার সন্তানরা বড়দের শ্রদ্ধা করছে না। সম্মান দেওয়া শিখছে না। মোবাইল ফোনের কারণে অবক্ষয় বেশি হচ্ছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানদের একমত হয়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।

মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার রফিকুল আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টা নজরদারিতে আনা হয়েছে। থানাগুলোকে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হবে, যেন শিক্ষার্থীরা ক্লাস ছেড়ে পদ্মা পাড়ে আড্ডা দিতে না পারে।

এসএইচ-০২/২৪/২২ (সুমন হাসান)