শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ঈদুল আজহা

পশ্চিম আকাশে উঁকি দিয়েছে জিলহজ মাসের চাঁদ। জানান দিচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহার উপস্থিতি। ঈদুল ফিতরের পর ঈদুল আজহা মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত এ উৎসবে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পশু কোরবানি করেন। কোরবানি ঈদ মুসলিমদের কাছে আলাদা গুরুত্ব বহন করে থাকে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও ত্যাগের মহিমা অনুধাবন করতে পারে। নিজ পরিবারের পাশাপাশি সমাজেও সেই বিষয়টি ছড়িয়ে দিতে পারে। তারুণ্যের সেই ভাবনা গুলোই তুলে ধরেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমন ইসলাম।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সীমা খাতুনের মতে কোরবানি বৈষম্যে দূর করে ভালোবাসতে শেখায়। তিনি জানান, ত্যাগ এবং সাম্যের আলো ছড়িয়ে দেয়ার আরেক নাম কোরবানির ঈদ। পশু জবেহের পর মাংস সমাজের সকল মানুষকে বিলিয়ে দেয়ার মাধ্যমে যে বন্ধন তৈরি হয়, এটি বৈষম্য দূর করতে সাহায্য করে। কোরবানির মাধ্যমে সহজেই বৈষম্যকে দূর করে ভালোবাসার মানসিকতা তৈরি হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, কোরবানি সমাজে ন্যায্যতার শিক্ষা দেয়। তার মতে, ঈদুল আযাহা শুধু আনন্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি ত্যাগের উৎসব। এই উৎসবে পশু উৎসর্গ করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি আত্মীয়দের প্রতি দায়িত্ব, সমাজের গরিব মানুষের প্রতি বিত্তবানের দায়িত্ব ও ভ্রাতৃত্বের এক মেলবন্ধনের সৃষ্টি হয়। পশু জবাই করার পর মাংস সমাজের প্রতি পরিবারের মধ্যে সম বন্টনের মাধ্যমে সমাজে ন্যায্যতার শিক্ষার প্রতিফলন ঘটে।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অলিয়া পারভিন হ্যাপির ভাবনায় কোরবানির ঈদ ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ভাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে। তার মতে, ধনী-গরিব সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপিত হয়। এদিন ধনী-গরিব সকল ভেদাভেদ ভুলে একই কাতারে এসে দাঁড়ায়। এতে সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও সহমর্মিতার পরিবেশ তৈরি হয়।

কোরবানি আত্মসংশোধনের শিক্ষা দেয়- এমনটাই মনে করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তামিম মিয়া। তার মতে, সবার উচিত পশু কোরবানির পাশাপাশি মনের পশুটাকে কোরবানি দেয়া। সকল মোহ ত্যাগ করে নিজের পছন্দের জিনিসগুলোকে উৎসর্গ করার শিক্ষা কোরবানির মাধ্যমেই পাওয়া যায়। কোরবানির মূল শিক্ষা তাকওয়া অর্জন ও আত্ম সংশোধন। অন্তর যদি পবিত্র হয় তাহলে পুরো দেহই বিশুদ্ধ হয়ে যায়।

কোরবানি মধ্যে দিয়ে মনুষ্যত্বের জয় কামনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের রাশিদা পারভীন। তার মতে, কোরবানি মানেই ত্যাগ ও তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া। পারভীনের প্রত্যাশা, ঈদের আনন্দ ধনী-গরিব সবার মাঝে অনাবিল সুখ আর প্রশান্তি বয়ে আনবে। সমাজ হবে বৈষম্যহীন, মানবিকতার চর্চা হবে সবখানে।

আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালযয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের আরিফুল ইসলাম এই ঈদে অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে চান। ঈদুল আজহা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে বার্তা দেয়, সেটি হৃদয়ে লালন করে নিজেকে শুদ্ধ করতে চান। তিনি জানান, এই ঈদে কোরবানির মাংস বণ্টনের পাশাপাশি বন্ধুরা মিলে নিজ গ্রামের বঞ্চিত, দরিদ্র জনগোষ্ঠীদের খাদ্য সামগ্রী উপহার হিসেবে দেয়ার চেষ্টা করবেন।

উৎসর্গের মধ্য দিয়ে আনন্দ পেতে চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহানাজ পারভীন। তার মতে, উৎসর্গের মধ্য দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তার বড় দৃষ্টান্ত হলো ঈদুল আযহা। এ ঈদ সবাইকে আত্মত্যাগী হবার শিক্ষা দিয়ে যায়। পশুত্ব ও অমানবিক মন-মানসিকতা বিসর্জন দিয়ে পাপ মুক্ত হওয়ার শিক্ষা এখান থেকেই পাওয়া যায়।

এসএইচ-১৫/০১/২২ (শিক্ষা ডেস্ক)