রাবির ৭১-এ পদার্পণ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই মাত্র ১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টি ৭১ বছরে পদার্পণ করেছে।

শহীদ ড. মুহম্মদ শামসুজ্জোহা স্মৃতিবিজড়িত এই বিদ্যাপীঠের রয়েছে গৌরব-ঐতিহ্যের সুদীর্ঘ ইতিহাস। ব্রিটিশ আমলে রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী কলেজ। এই কলেজে আইন বিভাগসহ পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন শ্রেণি চালু করা হলেও কিছুদিন পরই সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তখনই রাজশাহীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা থেকে ১৯৪৭ সালের দিকে রাজশাহীতে স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়।

রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর ৬৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন ১৫ ছাত্রনেতা। পরে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ঢাকায় একটি ডেলিগেশন পাঠানো হয়। এভাবে একের পর এক আন্দোলনের চাপে স্থানীয় আইন পরিষদ রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়। এই আন্দোলনে একাত্ম হন পূর্ববঙ্গীয় আইনসভার সদস্য প্রখ্যাত আইনজীবী মাদার বখ্শ।

আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইন পাস হয়। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইতরাৎ হোসেন জুবেরীকে সঙ্গে নিয়ে মাদার বখ্শ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। সেখান থেকেই শুরু হয় রাবির পথচলা।

বর্তমানে ৩০৩ দশমিক ৮০ হেক্টর জায়গাজুড়ে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ৫৮ জন বিদেশি শিক্ষার্থীসহ ৩৮ হাজার ৩৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ১ হাজার ১৭৭ জন শিক্ষক ও ২ হাজার জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৫ হাজার ৫৭৯ জন ছাত্র ও ছাত্রী রয়েছে ১২ হাজার ৫৫১ জন।

১২টি অনুষদের অধীন বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিভাগ রয়েছে ৫৯টি। ১২টি একাডেমিক ভবনসহ বর্তমানে ছাত্রদের থাকার জন্য আবাসিক হল রয়েছে ১১টি ও ছাত্রীদের জন্য ৬টি। এ ছাড়া গবেষক ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক ডরমিটোরি।

রাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হতে যাচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গৌরবের। বর্তমানে শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ, গবেষণার সুনাম, প্রভাব, অভিনবত্ব ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়টি যথেষ্ট এগিয়ে। শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের চাকরির বাজারে অগ্রাধিকারের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) করা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা হয়েছে। পাশাপাশি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে নতুন চারটি বিভাগ চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

রাবি শিক্ষার্থী মো. ওমর ফারুক জানান, প্রাচ্যের ক্যামব্রিজখ্যাত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পেরিয়ে ৭১ বছরের পা রেখেছে এই বিদ্যাপীঠ। শুধু দেশেই নয়, গৌরব ও ঐতিহ্যে বিশ্বময় উদ্ভাসিত প্রতিষ্ঠানটি। শত-সহস্র স্মৃতিমাখা ক্যাম্পাসের মায়ায় জড়িয়ে আছে লাখো শিক্ষার্থী।

আজকের এ অবস্থানে আসতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে। হাজারো ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্বাধীনতা সংগ্রাম, নানা ঘটনার সাক্ষী এই বিদ্যাপীঠ। মুক্তিযুদ্ধ তথা অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ওমর ফারুক বলেন, ‘সাফল্য যেমন রয়েছে, তেমনি নানা সময়ে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এই বিদ্যাপীঠ। তবে সব মিলিয়ে শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ে যথেষ্ট ভূমিকা রেখে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই ক্যাম্পাস সবুজ শ্যামল স্নিগ্ধ মায়ায় জড়িয়ে রাখে যেমন, তেমনি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আশা রাখব উত্তরোত্তর আরও সাফল্য বয়ে আনবে।’

সুদীর্ঘ সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা নিয়ে অনেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবদান রেখেছেন। দীর্ঘ এ সময়ে রাবি তৈরি করেছে ভাষাবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, সেলিনা হোসেন, ইতিহাসবিদ আব্দুল করিম, তাত্ত্বিক ও সমালোচক বদরুদ্দীন উমর, চলচ্চিত্র পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম, নাট্যকার মলয় ভৌমিক, মাসুম রেজা ও ক্রিকেটার আল আমিন হোসেনদের মতো অসংখ্য গুণীকে।

এসএইচ-০৯/০৬/২৩ (শিক্ষা ডেস্ক)