থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অভিনয়শিল্পী ও বরেণ্য নির্মাতা আমজাদ হোসেন বাংলাদেশ সময় ৩টার দিকে মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
১৪ ডিসেম্বর, শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা এস এ হক অলীক এ তথ্য জানিয়েছেন।
মৃত্যুর খবর জানিয়ে নির্মাতা অলীক বলেন বলেন, ‘আমজাদ আংকেল আর নেই। তার মরদেহ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আমজাদ হোসেন প্রখ্যাত নিউরো সার্জন ডা. টিরা ট্যাংভিরিয়াপাইবুনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আমজাদ হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৭ নভেম্বর দিবাগত রাতে ব্যাংককে নিয়ে যাওয়া হয়। তার সঙ্গে ছিলেন দুই ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমান।
বর্ষীয়ান এ নির্মাতা ১৮ নভেম্বর সকালে ব্রেন স্ট্রোক করেন। এরপরই তাকে তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন তিনি। হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসক শহীদুল্লাহ সবুজের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছিল তার।
এই নির্মাতার শারীরিক অসুস্থতার খবর শুনে হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মাথায় তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই তার উন্নত চিকিৎসার খরচ বাবদ ৪০ লাখ টাকা পরিবারের হাতে তুলে দেন তিনি।
এদিকে বর্ষীয়ান এ নির্মাতার শারিরিক অবস্খার অবনতি হওয়ার কারণে ১৯ নভেম্বর থেকে নিউরো মেডিসিন বিভাগের প্রধান, সার্জারি বিভাগের প্রধান, কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান, আইসিইউ বিভাগের প্রধানসহ ছয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার চিকিৎসা চলছিল।
মাস ছয়েক আগে থাইল্যান্ডের সুকুমভিত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আমজাদ। সেখানে তার ক্ষুদ্রান্ত্রে দুটি অস্ত্রোপচার হয়েছিল। তার খাদ্যনালি ও শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা রয়েছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আগে থেকেই বার্ধক্যজনিত কিছু জটিলতায় ভুগছিলেন আমজাদ হোসেন। কিডনি ও হার্টে সমস্যা রয়েছে তার।
আমজাদ হোসেন ১৯৬১ সালে ‘হারানো দিন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় দিয়ে চলচ্চিত্র অঙ্গনে আসেন। পরে চিত্রনাট্য রচনা ও নির্মাণে মনোনিবেশ করেন।
১৯৬৭ সালে আমজাদ ‘আগুন নিয়ে খেলা’ নামে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। পরে তিনি ‘নয়নমণি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘ভাত দে’র মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রশংসিত হন।
‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ও ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এ ছাড়া শিল্পকলায় অবদানের জন্য সরকার তাকে একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে।
আমজাদ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির আজীবন সদস্য। সাহিত্য রচনার জন্য তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দুবার অগ্রণী শিশু সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান।
১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন আমজাদ হোসেন। শৈশব থেকেই তাঁর সাহিত্যচর্চা শুরু করে। পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় এসে সাহিত্য ও নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িত হন। তারপরই চলচ্চিত্রে আসেন।
এ ছাড়া আমজাদ হোসেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এবং গল্পকার জহির রায়হানের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি নিজেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।
আরএম-১৫/১৪/১২ (বিনোদন ডেস্ক, তথ্যসূত্র: প্রিয়.কম)