বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় যেসব ভুল ছিলো ঐশীর

বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায়

বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিযোগী পাঠানোর প্লাটফর্মটি অন্তর শোবিজের। অনেকদিন বিরতির পর গেল ২০১৭ সাল থেকে আবারও বিশ্বসুন্দরীর মূল আসরে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ।

সেই ধারাবাহিকতায় সদ্য শেষ হওয়া আসরে প্রতিযোগী ছিলেন বরিশালের পিরোজপুরের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার ফাইনালে যাওয়ার গৌরবও অর্জন করেছেন।

চীনে সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে গেল ১০ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন ঐশী। আজ শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর তিনি মুখোমুখি হয়েছেন সাংবাদিকদের। সেখানে জানিয়েছেন তার অভিজ্ঞতার কথা।

এফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ঐশীর সঙ্গে আজ উপস্থিত ছিলেন অন্তর শোবিজের চেয়ারম্যান স্বপন চৌধুরী ও অন্তর শোবিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসরিন চৌধুরী।

সম্মেলনে তারা কথা বলেছেন এবারের আসরে ঐশীর প্রতিবন্ধকতা ও ভুল ভ্রান্তি নিয়ে। স্বপন চৌধুরী বলেন, ‘জানি খুব অল্প সময়ের মধ্যে আয়োজন করায় অনেক ভুল ভ্রান্তি ছিলো। তবে আমরা যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি দেশকে বিশ্ব মানচিত্রে ভালোভাবে তুলে ধরার তার প্রমাণ ঐশী দিয়েছেন ফাইনালে জায়গা করে নিয়ে।

মূলত আগস্ট মাসে আমাদের বলা হয়েছিলো যে প্রতিযোগী পাঠান। আগস্ট আমাদের দেশে শোকের মাস। অনেক কিছু প্রবলেম থাকে। তাই মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ আয়োজন করতে দেরি হয়েছিলো। তবু আমরা চেষ্টা করেছি।’

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখানে দেশের স্বনামধন্য সাংবাদিক ভাই-বন্ধুরা আছেন। আপনাদের সামনেই দুঃখ প্রকাশ করে বলতে চাই, এবারের আসরে ‘এইচ২ও’ এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে যতোটা আলোচনা হয়েছে তার সিকি ভাগও হয়নি এই মেয়েটাকে নিয়ে, যে কী দেশের জন্য ভালো একটা সম্মান বয়ে এনেছে।

যাদের সমালোচনা করে সবাই এই আয়োজনকে প্রশ্নবিদ্ধ করারে চেষ্টা চলেছিলো তারা কেউই কিন্তু বিজয়ী বা সেরা ছিলেন না। যিনি সেরা হয়েছেন তিনি কিন্তু যোগ্য এবং সমালোচনার বাইরে ছিলেন। তবুও কেউ কেউ ঐশীর সৌন্দর্য ও যোগ্যতা নিয়ে কথা বলেছেন।

কিন্তু দেখুন, এই ঐশীই কিন্তু বিশ্বক আসরে মাতিয়ে এসেছে। সে হয়তো মুকুটটাই পায়নি কিন্তু আয়োজকদের ভূয়সী প্রশংসা সে পেয়েছে। আমাদের সবার উচিত ছিলো ঐশীকে শুরু থেকেই সাপোর্ট দেয়া। কিন্তু আমরা তা করিনি। ধর্মীয় চিন্তা-ধারণাসহ নানা কারণে আয়োজনটি সমালোচিত হয়। তবে ঐশী যখন ফাইনালে গেল তখন দেখেছি সবার মধ্যে একটা উৎসাহ কাজ করছে। আমি বিশ্বাস করি আগামী দুই এক বছরে এই আয়োজনটি আরও জনপ্রিয় হবে।’

নিজেদেরও ঘাটতি ছিলো দাবি করে স্বপন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদেরও অনেক ঘাটতি ছিলো। সেগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। পরের বছর থেকে এগুলো শোধরে নেব। আমরা ঐশীর সঙ্গে কথা বলছি। তার অভিজ্ঞতার আলোকে নানা পরিকল্পনা করে আগামী বছর নতুন উদ্যমে শুরু করবো। আশা করছি খুব শিগগিরই আমরাও বিশ্ব সুন্দরীর মুকুট জয় করে আনবো।

তবে সাংবাদিকদের আমি কৃতজ্ঞতা জানাই, আপনারা এই আয়োজন ও ঐশীর পাশে ছিলেন। তাকে নিয়ে কথা বলেছেন। এটা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার।’

অন্তর শোবিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘ঐশীর ফাইনালে যাওয়াটা আমাদের জন্য আনন্দের। ও খুবই জনপ্রিয় ছিলো প্রতিযোগীদের মধ্যে। সবাই ওর খুব প্রশংসা করেছে। বিশেষ করে ওর আত্মবিশ্বসটা ছিলো দেখার মতো।

বারবার সাংবাদিক বন্ধুদের আমরা পাশে পেয়েছি। আপনারাও আমাদের এই সাফল্যের অংশ। আগামীর দিনগুলোতে আরও সাফল্য বয়ে আনতে আপনাদের পরামর্শ আমাদের প্রয়োজন।’

এদিকে আয়োজনে নিজের ঘাটতি নিয়ে মুখ খুলেন ঐশীও। তিনি বলেন, ‘আমার দুর্ভাগ্য যে মূল আসরে যাওয়ার আগে ভালো গ্রুমিং নিতে পারিনি। আপনারা জানেন, আমি অনেকদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে। তাই নিজেকে তৈরি করার যতোটা সময় প্রয়োজন ছিলো সেটা পাইনি।

আর মূল আসরে গিয়ে মনে হয়েছে আরও কিছু বিষয় নিজের সঙ্গে যুক্ত করে নিয়ে যাওয়া উচিত এইসব প্রতিযোগিতায়। ওখানে সুন্দরী মানে শুধু দেখতে সুন্দরী না। নারীর মন ও মানসিকতার সৌন্দর্যটাকেই তারা প্রাধান্য দেয়। একজন প্রতিযোগীর ন্যাচারাল বিউটিকে গুরুত্ব দেয়। যেটা আমার মধ্যে ছিলো বলে আয়োজক ও সাবেক বিশ্বসুন্দরী মানসী চিল্লার বারবার বলতেন।

কিন্তু সোশ্যাল ওয়ার্কসহ নানা বিষয় ছিলো ঘাটতির। সেগুলো নিয়ে স্বপন স্যার ও নাসরিন ম্যামের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ভবিষ্যতে যারা আসবে তারা যেন এই বিষয়গুলো রপ্ত করে সেটা অন্তর শোবিজ মাথায় রেখেছে।

তবে পুরো আয়োজনটি আমার জন্য ছিলো জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। আমার আত্মবিশ্বাস সবাইকে মুগ্ধ করেছে। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এবারের ছোট ছোট ভুলগুলো শুধরে নিয়ে চলতে পারলে খুব দ্রুতই আমরা বিশ্বসুন্দরীর মুকুট জিতে নিতে পারবো।’

তিনি বিশ্ব মানের একটি আসরে নিজেকে ও নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে গর্বিত বলেও জানান। এই প্লাটফর্ম তৈরি করে দেয়ার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান অন্তর শোবিজ ও এই আয়োজনের সঙ্গে জড়িত সকল প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তিদের।

আরএম-১৩/১৫/১২ (বিনোদন ডেস্ক)