‘এখন হিরোরা শুধু হিরোইনদের কথা ভাবে’

এখন হিরোরা

চলচ্চিত্রে নায়ক-নায়িকাদের পাশাপাশি খলনায়কদের ভূমিকা বরাবরই অপরিসীম। কারণ তারাই গল্পকে শ্বাসরুদ্ধকরভাবে এগিয়ে নিয়ে যায়। সব মিলিয়ে একটা সিনেমা দর্শক গ্রহণযোগ্য করে তুলতে খলনায়করাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

একটা সময় রাজীব, এটিএম শামসুজ্জামান, হুমায়ূন ফরিদীদের দেখার জন্যই হলে যেত মানুষ। গল্পের শেষে তাদের মৃত্যুতে উল্লাস করে হাততালি দিয়েছে।

তাদের পরবর্তীতে ডিপজল-মিশা একটা ক্রেজ তৈরি করতে পেরেছিলেন। তারপর থেকে বলা চলে চলচ্চিত্রে ভিলেনদের উপস্থিতি একবারেই কম। চলচ্চিত্রের স্বর্ণালী যুগের পর্দা কাঁপানো খলনায়কদের অনেকেই না ফেরার দেশে চলে গেছেন, আবার কেউ চলচ্চিত্র থেকে দূরে রয়েছেন। আর নতুন যারা কাজ করছেন তারা অধিকাংশই নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

প্রায় ৪১ বছর ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন খলনায়ক গাঙ্গুয়া। তিনি গাঙ্গুয়া নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম মোহাম্মদ পারভেজ। দীর্ঘ অনেকটা দিন ধরে চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত থাকার সুবাদে স্বর্ণালী যুগের অনেকের সাথেই কাজ করার সুযোগ হয়েছে এই খলনায়কের। তার এই গাঙ্গুয়া নামটি রেখেছিলেন চিত্রনায়ক জসিম। চিত্রনায়ক জসিমের সঙ্গে তার সখ্যতাও ছিলো বেশ এমনটাই বলছিলেন খলনায়ক পারভেজ গাঙ্গুয়া।

দেখতে দেখতে অনেকটা বছর কেটে গেলো। সেই ১৯৭৮ সাল থেকে একটু একটু করে কাজ করে আসছি, এখনো করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০০-৮০০ সিনেমায় কাজ করেছি। কিন্তু এখন আর কাজ করে তেমন তৃপ্তি পাই না আগের মত। অনেক গুণী নির্মাতা ও হিরো-হিরোইনদেরদের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। এখন হয়তো শুরুর দিকের অনেক কিছুই মনে নেই।

প্রথম দিকে আমি ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করতাম। এ রকম করে প্রায় অনেক সিনেমাতে কাজ করেছি। এরপর অনেকটা সময় পর ‘মাস্তান রাজা’ নামে একটা সিনেমা করলাম। ঐটার হিরো ছিলো জসিম ভাই। আমি কসাইয়ের চরিত্রে ছিলাম। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন সেই সময়ের গুণী নির্মাতা দেওয়ান নজরুল। আশি থেকে নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে যে কজন পরিচালকের নিয়মিত চলচ্চিত্র মুক্তি পেতো এবং ব্যবসা সফল হতো তাঁদের মধ্যে দেওয়ান নজরুলের নামটি শীর্ষের দিকে থাকতো। ‘মাস্তান রাজা’ সিনেমাটি ১৯৯২ সালে মুক্তি পায়। এরপর একে একে আরও অনেক ছবি করি।

আমি মাঝখানে প্রায় চার বছর কাজ করি নি, সিনেমা থেকে দূরে ছিলাম। যখন অশ্লীল সিনেমা হতে শুরু করলো তখন আমি কাজ করা বন্ধ করে দেই। আমি চিন্তা করতাম আমার একটা মেয়ে আছে, এমন সিনেমায় কাজ করার কারণে কেউ আমাকে নিয়ে আমার মেয়েকে বাজে মন্তব্য করবে এটা আমি কখনো চাই না। ত

খন ভালো মানের হলে কিছু কিছু ছবিতে কাজ করতাম নইতো করতাম না। আমি ফুড খুব পছন্দ করতাম, আমার ইচ্ছা ছিলো ফুড ইন্ডাস্ট্রি করবো। কিন্তু এটা করার জন্য অনেক জায়গা লাগবে যেটা আমার ছিলো না। তখন আমি ডিপজল ভাইয়ের বড় ভাই বাদশাহ ভাইকে বলেছিলাম।

পরে ডিপজল ভাই তার সাভারের ফার্মে আমাকে জায়গা দিলেন ।তারপর আমি সেখানে ফুডের ব্যবসা করেছি অনেক দিন। নায়ক রাজ রাজ্জাক ভাইয়ের অনেক সিনেমাতে ফুডের প্রয়োজন হলে সেখানে আমি ফুড সাপ্লাই দিতাম।

আমার জীবনে টুকটাক করে অনেক কিছুই করেছি। আমি পটকা, বাজি বানাতাম। আমাদের সিনেমাতে যে পটকা, বাজি, বোম এগুলোর ব্যবহার হয়েছে সেগুলো আমার হাত দিয়ে। তখনকার সময়ে এসব ছিলো না। গুলি করতে গেলেও মুখে শব্দ করতে হতো। কিন্তু আমি এগুলোর আবিস্কার করেছি সিনেমাতে। এরপর আসতে আসতে একশন ছবিতে এগুলা ব্যবহার শুরু হলো।

খলনায়ক হওয়া নিয়ে তিনি বলেন, হিরো হবো এমন চিন্তা বা ভাবনা কখনোই ছিলো না। হিরো তো আসলে বললেই হওয়া যায় না। সবদিকে হিরোর মত হতে হয়। আর নিজেকে হিরো ভাবলেই কেউ হিরো হয় না।

কাউকে দেখে কেউ যদি বলে যে ছেলেটা দেখতে খুব সুন্দর, একদম হিরো। তখন সেটা হতে পারে। কিন্তু এখন তো সবাই নিজেকে নিজেই হিরো ভাবে, হিরো বলে বেড়ায়। আর আমার কাছে মনে হয় গল্পই হচ্ছে হিরো, আর সবাই তো অভিনেতা। সবাই তো অভিনয় করে। গল্পে হিরোরা শুধু নায়িকাদের সাথে প্রেম করে। প্রেমটাই সব।

কিন্তু একটা ভিলেন তো সব ধরনের অভিনয় করে, করতে হয়। আমার কাছে মনে হয় ভিলেন হয়েও নিজেকে বিভিন্নভাবে নিজেকে ফুটানো যায় কিন্তু সে সুযোগটা থাকতে হবে।

আর এখনকার পরিচালকদের কথা যদি বলি তারা মনে করে আমাদের অনেক বয়স হয়ে গিয়েছে, আমরা মেধাবী না, বুদ্ধিমান না, আমাদের থেকে ঠিকমত আউটপুট পাবেন না। এখনকার তারা শুধু হিরো-হিরোইনকে গুণে, আমাদেরকে না। এখনকার অনেক হিরো-হিরোইনরাই আছে যারা কিনা ঐ সম্মানটুকুও করে না।

সেটে কাজ করতে গেলে ঐ সম্মানটুকু পাই না। কিন্তু আগের সময়ে যাদের সাথে কাজ করেছি তারা এমন করত না। জসিম ভাই আমার ওস্তাদ ছিলেন। আমার সব কাজের আগে আমি তাকে জিজ্ঞেস করে নিতাম, তিনিও আমাকে বলতেন এটা কর, ওটা কর ভালো হবে।

হুমায়ুন ফরিদী ভাই, জসিম ভাই, ওয়াসিম ভাই, সালমান শাহ, মান্না ভাই যারা ছিলেন আরও অনেকে ঐ সময়টাতে সবাই খুব আন্তরিক ছিলো। কাজের বিষয়েও অনেক সহযোগিতা করতো কিন্তু এখন হিরোরা শুধু হিরোইনদের কথা ভাবে, আমাদের না। নিজের কথা ভাবে, নিজের কাজটা কিভাবে ঠিকমত করবে আর হিরোইনদের কথা ভাবে, তাদেরকে কাজের বিষয়ে সহযোগীতা করে। আমাদের কথা তাদের ভাবার সময় নেই।

আরএম-১০/০৪/০১ (বিনোদন ডেস্ক)