আমি ভালো নেই, রক্তে জীবানু ছড়িয়ে গেছে: অহনা

আমি ভালো নেই

চালক ও তার সহকারীর নির্মমতায় গুরুতর আহত অভিনেত্রী অহনা ভালো নেই। তার পুরো শরীরের রক্তে জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছে। এমআরই করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে বোঝা যাবে তার চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ।

এ তথ্যগুলো গণমাধ্যমে নিজেই দিয়েছেন অহনা। তার ভাষ্য, ‘আমি খুব অসুস্থ। পিঠে অনেক ব্যথা। ব্যথা কিছুতেই কমেছেই না। রক্তে জীবাণু ছড়িয়ে গেছে।এমআরআই করা হয়েছে।রিপোর্ট আসলে বোঝা যাবে কী হয়েছে।’

ট্রাকচালকের নির্মমতায় গুরুতর আহত হওয়ার পর অহনাকে ভর্তি করা হয়েছিল রাজধানীর উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে সোমবার চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন অহনা।

এর আগে চিকিৎসকের বরাত দিয়ে অহনার খালাতো বোন লিজা ইয়াসমীন মিতু জানিয়েছিলেন, অহনার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তার পুরো শরীরে রক্তে জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছে। অবস্থার উন্নতি নেই। আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।

অহনার শারীরিক চোটের চেয়ে মানসিক চোটটাও কম নয়।প্রায় সবাই তার সুস্থতা কামনায় দোয়া করলেও কেউ কেউ তাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন ফেসবুকে।বিষয়গুলো তার চোখ এড়ায়নি।

অহনার ভাষ্য, ওই ঘটনা নিয়ে কেউ কেউ বাজে মন্তব্য করেছে, এটা দুঃখজনক। রাতে তিনি যদি ক্লাব থেকে বের হন তাহলে কি সালোয়ার কামিজ পরবেন না, প্রশ্ন অহনার।তিনি বলেন, আমার তো পরিবার আছে। পারিবারিক অনুষ্ঠান থাকতে পারে। আর অনেক কাজই থাকতে পারে।

তবে যারা অহনার প্রতি সহমর্মী তাদের ধন্যবাদ জানাতে ভুল করেননি িএই অভিনেত্রী। বলেন, অনেকে মর্মাহত হয়েছেন। আমার জন্য দোয়া করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ।

গত ৮ জানুয়ারি রাতে শুটিং শেষ করে অহনা তার খালাতো বোন মিতুকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসভবনের উদ্দেশে রওনা হন। উত্তরার কাবাব ফ্যাক্টরি থেকে কিছুটা সামনে সাত নম্বর সেক্টরের পূর্ব মাথায় একটি বেপরোয়া গতির পাথর বোঝাই ট্রাক সজোরে ধাক্কা দিয়ে অহনার ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষতি করে। অহনা গাড়ি থেকে নেমে ট্রাকচালককে নামতে বলেন। এ সময় ইচ্ছাকৃতভাবে আবার অহনার গাড়িকে সজোরে ধাক্কা দেয় চালক।

গাড়ি থেকে নেমে অহনা প্রতিবাদ করে ট্রাকচালককে নামতে বললে তিনি অহনার সঙ্গে তর্কাতর্কি করেন। এ সময় অহনা নিজেই ট্রাকের দরজা দিয়ে উঠে চালককে নামাতে যান। কিন্তু চালক কথা না শুনে অহনাকে দরজায় ঝুলন্ত অবস্থায় ট্রাক ছেড়ে দেন। ট্রাকটি অহনাকে ঝুলন্ত অবস্থায় নিয়ে উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরে পৌঁছালে স্থানীয়দের বাধায় ট্রাকচালক সজোরে ব্রেক করলে ছিটকে পড়ে আহত হন অহনা। অহনা কোমরের হাড়ে ও পিঠে প্রচণ্ড চোট পান। তাকে উদ্ধার করে মিতু হাসপাতালে ভর্তি করান।

ট্রাকচালক মাদকাসক্ত ছিলেন জানিয়ে অহনা বলেন, ট্রাকচালক ছিল মাদকাসক্ত। অথচ অনেকে মন্তব্য করেছেন আমি নাকি মদ খেয়েছিলাম! আসল সত্যিটা হচ্ছে, মদ আমি খাইনি। মদ খেয়েছিল ট্রাক চালক।

ফেসবুকে ওই ঘটনার ভিডিও শুনে কেউ কেউ বলেছেন, অহনা বাজে ব্যবহার করেছে। ভিডিওটা ছিল খন্ডিত। ভিডিওতে যা দেখেছেন সেটা দুর্ঘটনার শুরুর সময় মাত্র। পুরো ঘটনা না জেনে ফেসবুকে মন্তব্য করা কি ঠিক হল?

ঘটনার বিবরণ দিয়ে অহনা বলেন, আমি যদি ওই সময় ট্রাকে না উঠি তাহলে তো ট্রাক আমার উপর দিয়ে উঠে যায়। আমি ট্রাকে সাধে ঝুলিনি। সঙ্গে থাকা মিতু (খালাতো বোন) ভিডিও বন্ধ করে পুলিশকে কল করতে বলি।এমতাবস্থায ট্রাকচালকের চেহারা বদলে গেল। তখন সে বলেছিল, ‘পুলিশ ডাকছে, দেখাচ্ছি।’ এই বলে ট্রাক চালানো শুরু করে।

ওই সময় অহনাকে মেরে ফেলতে সচেষ্ট হন চালক ও চালকের সহযোগী। বিষয়টি জানিয়ে অহনা বলেন, আমি ট্রাকে ঝুলন্ত অবস্থায়, চালকের সহকারী চালককে বলেছিল, ‘এটা নায়িকা এটাকে যদি বাঁচায় দেন আমরা ফাইসা যাব।’

এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগযোগা মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর একজন মন্তব্য করেন ‘নাটক করে তো এজন্য এ রকম হয়েছে। মরে গেলে ভালো হতো।’ এ বিষয়ে অহনা বলেন, আজকে আমার জায়গায় যদি তার (মন্তব্যকারী) মা, বোন ও প্রেমিকা থাকতেন তাহলে কি তিনি এরকম বলতে পারতেন।

স্রষ্টার কাছে বিচারপ্রার্থী শয্যাশায়ী অহনা বলেন, আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। পাপ-পূণ্যের বিচার আল্লাহ করবেন। বেঁচে থাকলে আমার সঙ্গে একই ঘটনা যদি আবারও ঘটে আমি প্রতিবাদ করব।

অহনাকে আহত করার ঘটনায় ৯ জানুয়ারি উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন অহনার খালাতো বোন লিজা ইয়াসমীন মিতু।

রোববার সকালে ঢাকার সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ট্রাকচালক সুমন মিয়া ও তার সহকারী রোহানকে গ্রেফতার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।

এ ঘটনায় মামলায় গ্রেফতার ট্রাকচালক সুমন মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

টিভি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করেন মিষ্টি মেয়ে অহনা। এর পাশাপাশি বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। তার অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘চোখের দেখা’ মুক্তি পায় ২০১৭ সালে।

আরএম-১৬/১৬/০১ (বিনোদন ডেস্ক)